সোমবার ১৭ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৩ ১৪৩২, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: উচ্ছ্বাস, সেজদা ও মোনাজাত

 প্রকাশিত: ১৬:২৯, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: উচ্ছ্বাস, সেজদা ও মোনাজাত

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে শেখ হাসিনাকে প্রাণদণ্ডের রায়ের পর হাই কোর্টের সামনে উপস্থিত জনতাকে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তে দেখা গেছে।

সে সময় 'এই মাত্র খবর এল, খুনি হাসিনার ফাঁসি হল' স্লোগান দিতে দিতে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন।

সোমবার রায় ঘোষণার পর পরই 'মঞ্চ ২৪' নামের ব্যানারে একদল ছাত্র-জনতা হাই কোর্টের সামনেই সেজদা দিয়ে ও মোনাজাত করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা যায়।

গণ সেজদার পর মোনাজাতে ‘মঞ্চ ২৪’ এর আহ্বায়ক ফাহিম ফারুকী বলেন, “আল্লাহ আরশের মালিক, রহমতের ছোঁয়ায় আমাদের বাংলাদেশকে তুমি রক্ষা করো।

“এখানে দাঁড়িয়ে আছে যারা, আল্লাহ যারা গুম ছিল, যাদের জীবন থেকে যৌবনের সুন্দর সময়টুকু কেটে গেছে। শেখ হাসিনা আমাদের এই জীবন থেকে যে সময়টুকু নিয়েছে, তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জনতার সামনে জাহান্নামের আজাব দিয়ে দিও।”

মোনাজাতে তিনি বলেন, “আল্লাহ, যাদেরকে এই মাটিতে আলেমদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে, পশুর মত তাদেরকে জবাই করা হয়েছে। আল্লাহ তুমি দেখেছো। দিন শেষে তুমি আমাদের বিজয় দিয়েছো। এখনো যারা অপরাধী আছে, আল্লাহ, এদের প্রত্যেককে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দাও।

“এই মাটিতে জুলাইয়ের বিচার যেন নিশ্চিত করতে পারি, সেই তৌফিক দান করো। এই মাটিতে যেন সমস্ত হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়। পৃথিবীর কেউ যেন আমাদের এই রাষ্ট্রের এক ফোটা দখল নিতে না পারে।”

এই মঞ্চের ব্যানারে রায় পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অবসপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বলেন, “আমাদের উচ্ছ্বাস বুঝাতে পারব না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ন্যায়বিচার পেয়েছি। এই বিচার কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমার প্রশান্তি আসবে না, তারপরও আমি হাসতেছি।

"এ বিপ্লবের একমাত্র মাস্টামাইন্ড মহান আল্লাহ, তিনিই বিচার দিয়েছেন। আমরা সবাই শুকরিয়া আদায় করেছি সিজদা দিয়ে।”

প্রধান উপদেষ্টা আইনি সহায়তার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “তাকে আনার জন্য ভারতীয় জনগণের সহায়তা খুব প্রয়োজন। ভারতীয় জনগণ আমাদের ইনশাল্লাহ সহায়তা করবে, পশ্চিমবঙ্গের লোক আমাদের সহায়তা করবে। আমরা ন্যায়বিচার পাব।

“যদি না করে আমরা ভারতের সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিব, ভারত আরামে থাকবে না।”

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারক হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

সেখানে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। তিনিও তার নেত্রীর মত ভারতে পালিয়ে আছেন।

এ মামলার তিন আসামির মধ্যে সেই সময়ের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। সেজন্য ট্রাইব্যুনাল তাকে লঘুদণ্ড হিসেবে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

দোর্দণ্ড প্রতাপে দেড় দশক দেশ শাসন করা হাসিনা ১৫ মাস আগের ওই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে এখন পালিয়ে আছেন ভারতে। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম সাবেক সরকারপ্রধান, যার মাথার ওপর ঝুললো মৃত্যুদণ্ডের খাঁড়া।

আর সেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকেই শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজার রায় এল, যে আদালত তার সরকার গঠন করেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য।