শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১২ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করো কুরআনের ডাক

মাহদী হাসান

 আপডেট: ১৬:৫৬, ১ জুন ২০২৩

অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করো কুরআনের ডাক

কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যের ঘরে প্রবেশ করার আগে অনুমতি চাও। হুটহাট করে কারো ঘরে ঢুকে যেও না। কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে—

 

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتّٰي تَسْتَاْنِسُوْا وَ تُسَلِّمُوْا عَلٰۤي اَهْلِهَا ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ،فَاِنْ لَّمْ تَجِدُوْا فِيْهَاۤ اَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوْهَا حَتّٰي يُؤْذَنَ لَكُمْ وَ اِنْ قِيْلَ لَكُمُ ارْجِعُوْا فَارْجِعُوْا هُوَ اَزْكٰي لَكُمْ وَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ.

হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। 

যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও, তবে অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করো না। যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এতে তোমাদের জন্যে অনেক পবিত্রতা আছে এবং তোমরা যা কর, আল্লাহ তা ভালোভাবে জানেন। —সূরা নূর (২৪) : ২৭-২৮

 আয়াতে অন্যের ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নিতে ও সালাম দিতে বলা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করলে সেই ঘরের মানুষদের নানারকম অসুবিধা ও কষ্ট হয়। এতে ইসলামের ফরজ বিধান পর্দা ও সতরও লঙ্ঘিত হয়। এটা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার সয়লাবের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে বড় একটি কারণ। 

কীভাবে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে আয়াতে তাও শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিয়ম হল, বাহির থেকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলবে। শুধু গলা খাকারি অথবা এটা সেটা বলে আওয়াজ দেবে না। যদি মনে হয় ঘরের ভেতরে যে আছে, সে সালাম শুনতে পাবে না, তবে করাঘাত করবে বা কলিং বেল বাজাবে। এরপর কেউ বেরিয়ে এলে আগে তাকে সালাম দেবে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রবেশের অনুমতি না মিলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রবেশ করবে না।

আবার দীর্ঘক্ষণ ধরে করাঘাত করতে থাকা যাবে না। দুই-তিনবার আওয়াজ দেওয়ার পরেও যদি ঘরের লোকদের কোনো সাড়াশব্দ না মিলে, তাহলে ফিরে আসবে। অনেকের স্বভাব হল, দুই-তিনবার আওয়াজ করার পরে যদি ভেতর থেকে সাড়া-শব্দ না আসে, তাহলে ‘ঘরে কেউ আছে কি না’ জিজ্ঞেস করতে করতে ঢুকে যায় ঘরের ভেতরে অথবা উঁকিঝুকি মারতে থাকে। এতে করে ঘরের লোকদের বাড়তি অসুবিধায় পড়তে হয়। 

রাসূলুল্লাহ সা: এবং সাহাবায়ে কেরামের এ সংক্রান্ত অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে তাঁরা কারও ঘরে যাওয়ার পরে সালাম দিয়েছেন উচ্চৈঃস্বরে , জবাব না পেলে তিনবার সালাম দিয়েছেন। তারপরও উত্তর না আসলে ফিরে গেছেন। উমর রা. এর ঘরে গিয়ে আবু মূসা আশআরী রা. এর সালাম দেওয়া এবং সা‘দ ইবনে উবাদা রা. এর ঘরে গিয়ে নবীজী সা. এর সালাম দেওয়ার ঘটনাদুটি তো অনেক প্রসিদ্ধ।

হাদীসের কিতাবে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, সালাম না দিয়ে শুধু ‘আমি’ বলাটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ করতেন। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, জাবের রা. নবীজীর ঘরে গিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলে নবীজী সা. জিজ্ঞেস করলেন, কে?

জাবের রা. বললেন ‘আমি’।

তাঁর কেবল এই ‘আমি’ বলাটা নবীজী সা. অপছন্দ করেছিলেন।

সাহাবায়ে কেরাম অবশ্য সালাম দেওয়ার পরে প্রয়োজন হলে নিজের নাম বলতেন।

একই ঘরের লোকদেরও অন্যের ব্যক্তিগত কামরায় প্রবেশের পূর্বে অনুমতি নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রেও সর্বোত্তম হল সালাম দেওয়া। কোনো রকম সতর্ক না করেই অন্যের কামরায় হুটহাট করে ঢুকে পড়া কোনভাবেই উচিত নয়।

 

আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন—

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لِیَسۡتَاۡذِنۡکُمُ الَّذِیۡنَ مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ وَالَّذِیۡنَ لَمۡ یَبۡلُغُوا الۡحُلُمَ مِنۡکُمۡ ثَلٰثَ مَرّٰتٍ ؕ مِنۡ قَبۡلِ صَلٰوۃِ الۡفَجۡرِ وَحِیۡنَ تَضَعُوۡنَ ثِیَابَکُمۡ مِّنَ الظَّہِیۡرَۃِ وَمِنۡۢ بَعۡدِ صَلٰوۃِ الۡعِشَآءِ ۟ؕ ثَلٰثُ عَوۡرٰتٍ لَّکُمۡ ؕ لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ وَلَا عَلَیۡہِمۡ جُنَاحٌۢ بَعۡدَہُنَّ ؕ طَوّٰفُوۡنَ عَلَیۡکُمۡ بَعۡضُکُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ ؕ وَاللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ 

হে মুমিনগণ! তোমাদের দাসদাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা বস্ত্র খুলে রাখ এবং এশার নামাযের পর। এই তিন সময় তোমাদের দেহ খোলার সময়। এ সময়ের পর তোমাদের ও তাদের জন্যে কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়, এমনি ভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (আন নূর - ৫৮)

 

وَاِذَا بَلَغَ الۡاَطۡفَالُ مِنۡکُمُ الۡحُلُمَ فَلۡیَسۡتَاۡذِنُوۡا کَمَا اسۡتَاۡذَنَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمۡ اٰیٰتِہٖ ؕ وَاللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ 

তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা যখন বায়োপ্রাপ্ত হয়, তারাও যেন তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি চায়। এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (আন নূর - ৫৯)

আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে নাবালক বুঝমান শিশুদের অনুমতির জন্যও তিনটি সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সাধারণত এই সময়গুলোতে মানুষের পোশাক পরিপাটি থাকে না। আর নাবালক ব্যাতিত অন্যদের জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করেননি। অর্থাৎ তারা যখনই অন্যের ঘরে প্রবেশ করবে, তখনই অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবে। এক্ষেত্রে শিথিলতা ইসলামী শিষ্টাচারের বহিভূর্ত। ঘরের ছোট-বড় সকল সন্তানকে তাদের পরস্পরের ও মা-বাবার ঘরে প্রবেশের এই ইসলামী আদব শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। 

নিজের মা-বাবার ঘরে প্রবেশ করার সময় অনুমতি নেওয়ার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হয় । অথচ কুরআন কারীমে সন্তানের ব্যাপারেই বলা হয়েছে, তারা যেন মা-বাবার ঘরে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে। এক সাহাবী নবীজী সা. কে জিজ্ঞেস করলেন, আমি আমার মায়ের ঘরে প্রবেশের সময়ও কি অনুমতি নেব?

নবীজী সা. বললেন, তুমি কি তাকে উলঙ্গ দেখতে পছন্দ করবে?

তিনি বললেন, না।

নবীজী সা. বললেন, তাহলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করো। (দ্র. মারাসিলে আবু দাঊদ, পৃষ্ঠা ৩৩৬)

অনলাইন নিউজ পোর্টাল ২৪

মন্তব্য করুন: