বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, বৈশাখ ২৬ ১৪৩১, ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ইসলাম

অনুপম এক আত্মজীবনী

মাহমুদুল হাসান,সিলেট

 আপডেট: ১৭:৫৯, ৬ জুন ২০২৩

অনুপম এক আত্মজীবনী

আমার একান্ত পাঠ করা বিশটি আত্মজীবনীর মধ্যে সবচেয়ে সেরা বই হলো মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামীর আত্মজীবনী। জীবনের খেলাঘরে থেকে নিয়ে জীবনের শিলান্যাস পর্যন্ত কোনো বই চাটগামীর আত্মজীবনীর ধারেকাছেও আসবে না। বিনয় বিগলিত অনুপম নীরবতায় যার জীবন সেজেছে সুন্দর। ভয়ার্ত বিভীষিকাময় ঘনঘোর বিপদে কেবল রবের প্রতি চোখ বন্ধ করে একমাত্র বিশ্বাস করেছেন অবিরাম। জীবনের জয়গানে ফাতাওয়ার সন্ধানে চাটগামীর জ্ঞান দীপ্ত সমাধা শাখা আর হবে না কখনো। এমনতর অসংখ্য জ্ঞানের দিক ও প্রজ্ঞার প্রদীপ অনুসারে চাটগামীর আত্মজীবনী সবচেয়ে দামি। 
(এক) পিতা খলিলুর রহমান। জমিদার বংশের সন্তান। বংশ বুনিয়াদে ইলমের টান আছে। দাদাজানের ৩২ কানি জমি ছিল। আকাবির বা রিজালশাস্ত্রের জন্য যেসকল গুণাবলি ও বৈচিত্র্য থাকা দরকার তা সবি ছিল মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামীর। 
(দুই) বন্ধুবর ইয়াকুব বৈকালীন জীবনে উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই তার পিতাকে হারায়। জীবন ঝঞ্জাট পদ্মা নদীর তীরের মতো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ইয়াকুবের জীবন। মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী ইয়াকুবের চারপাশে ছায়া হয়ে দাঁড়ান। এক সময় ইয়াকুবের থাকার জায়গা পড়ালেখা সবকিছুর ব্যবস্থা হয়। এভাবেই আড়ালে আবডালে একজন ইয়াকুব চাটগামীর জীবনের সাথে মিশে যায়। 
(তিন) পিতার ইচ্ছে ছেলে স্কুলে পড়বে। কিন্তু চাটগামী মোচড় দিয়ে উঠলেন। ছোট্ট বেলার বন্ধু ইয়াকুবকে দেখেই মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হন। যে করেই হোক আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি হতে হবে ; এই প্রণয়ে ঈর্ষার বারুদ ঝলসে উঠলো, তয় এই অসম্ভব কুরবানীকে বাস্তবায়ন করতে গেলে মহান রবের সাহায্য লাগবে। এইটুকু বয়সে মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী আল্লাহর কাছে মুনাজাত করলেন,অদৃশ্য শক্তি সাহস ও সাহায্যের জন্য। মাদ্রাসায় পড়ালেখা করার জন্য ঘর থেকে পালিয়ে আসার ঘটনাই তো আকাবির হওয়ার নমুনা। 
(চার) চাটগামী জাহাজে করে করাচী যাচ্ছেন। একদম সাগরের মধ্যভাগে জাহাজ থেমে গেল। সবার ভেতরে ভয় ও উৎকণ্ঠা। যাত্রীদের তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসায় জানা গেল ; জাহাজের প্রপেলারে একটি বিরাট আকারের তিমি মাছ আটকে যায় এবং মারাত্মকভাবে আহত হয়। আহত তিমির রক্তে পানিতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজের একদিক লালে লাল হয়ে যায়। আহত তিমির এই দৃশ্য দেখেও চাটগামী ব্যথিত হোন। 
(পাঁচ) করাচীতে আল্লামা ইউসুফ বানুরীর কাছে হাদীস ও মুফতি ওয়ালি হাসান টুংকির কাছে উসুলে ফেক্বাহ পড়েছেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত বানুরির সান্নিধ্য অর্জনের পরও বানুরির ইলমের শেষ সীমা খোঁজে পাননি। মুফতি ওয়ালি হাসান টুংকি রাহ. সমকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে কোর্টে দাঁড়িয়ে  ফাতাওয়া সংক্রান্ত যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা দেখে মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী বলেন, ঈমান কী জিনিস! তা আমি আজ নিজ চোখে দেখতে পেলাম। 
(ছয়) মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী রাহ.যে কতো বড় মাপের ওলী ছিলেন তা তার বারযাখী সফরনামা শুনলেই বুঝা যায়। 
(সাত) জীবনে অসংখ্যবার আল্লাহ তাআলার  গায়েবী সাহায্য পেয়েছেন। পুরো বইয়ে হিসেব করলে পনেরো বিশ বার তো হবেই। কিন্তু হিসাব তো এখানেই শেষ নয়। 
(আট) আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট লেনসন ম্যান্ডেলার আতিথ্যে মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামীকে নজিরবিহীন সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে।  আফ্রিকার মাটিতে ইতিহাস সৃষ্টি করার খুব কাছাকাছি সময়ে এসে মুনাফিকরা তাদের নেফাকি ছড়াতে শুরু করে। প্রত্যেক যুগে যুগে আকাবির বুজুর্গদের পেছনে পেছনে এমন কিছু মুনাফিক থাকে যারা সবসময় কলঙ্কিত, ক্বিয়ামতের আগ পর্যন্ত অভিশপ্ত। 
পুনশ্চ ০১ : চাটগামীর আফগান যুদ্ধ নিয়ে আর কিছু বলছি না। তা রেখে দিলাম পাঠকের জন্য। পাঠকেরা নিজ চোখে পাঠ করে নিবেন আত্মজীবনীর অবশিষ্টাংশ। 
পুনশ্চ ০২ : মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামীর আত্মজীবনী একবছর আগে পাঠ করেছিলাম। সেই স্মৃতি হাতড়ে রিভিউ লিখেছি তাই না বরঞ্চ চাইলে রিভিউতে পুরো বইকে নিয়ে আসতে পারতাম। আপাতত নিষ্প্রয়োজন মনে করছি। 
বই~আত্নজীবনী
ব্যক্তি~মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী
শ্রুতিলিখন~যুবাইর আহমদ
প্রকাশক~ মাকতাবাতুল ইত্তিহাদ

মন্তব্য করুন: