শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

রোজা ও রমজান: পর্ব-৪ বিষয়: মাহে রমজানের দ্বিতীয় কর্মসূচী বেশি বেশি নেক আমল করা

মুফতি মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন

 আপডেট: ১৯:২০, ২৫ মার্চ ২০২৩

রোজা ও রমজান: পর্ব-৪ বিষয়: মাহে রমজানের দ্বিতীয় কর্মসূচী বেশি বেশি নেক আমল করা

আমল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রমযান মাসে আমল করা আরো বেশি প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহ (সা.) রমযান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি আমল করতেন বলে সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে। সুতরাং আমদের জন্যও কর্তব্য হচ্ছে রমযান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি বেশি আমল করা। এখানে আমরা কয়েকটি বিশেষ আমলের কথা আলোচনা করছি। যেমন- 


১. কুরআন তিলাওয়াত করাঃ মুমিনের অন্যতম ইবাদত হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত করা। মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত। কুরআনের একটি আয়াত শিক্ষা করা ১০০ রাকআত নফল সালাতের চেয়েও উত্তম বলে হাদীসে বলা হয়েছে। সারা বৎসরই তিলাওয়াত করতে হবে। বিশেষত রমযানে বেশি তিলাওয়াত করা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ সুন্নাত, এতে অতিরিক্ত সওয়াব ও বরকত রয়েছে। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত খুতবাতুল ইসলাম, পৃ. ২৮১ 


অথচ আমাদের মধ্যে অনেকেই কুরআন তিলাওয়াত করতে জানি না। এই কুরআন হচ্ছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্র্ণ একটি চিঠি। তিনি আমাদেরকে চিঠি লিখেছেন। একটু লক্ষ করে দেখুন, আমার কোন আমেরিকান বন্ধু যদি আমাকে ইংরেজিতে চিঠি লিখেন, আর আমি সেটা পড়তে না জানি তাহলে তার চিঠি বুঝার জন্য যে ব্যক্তি ইংরেজি ভাষা জানেন আমি তাঁর কাছে ছুটে যাব। আমার আমেরিকান বন্ধু কি লিখেছেন তা জানার জন্য আমি চেষ্টা করব। আমার বন্ধুর চিঠি বুঝার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ব। অথচ আমার স্রষ্টার পক্ষ থেকে, আমার মালিকের পক্ষ থেকে আমাকে পবিত্র কুরআন নামের যে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে, তা বুঝার জন্য আমি কেন চেষ্টা করব না, কেন উদগ্রীব হব না। (মিম্বারের ধ্বনি, পৃ.-২৪) 


মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর হাবীব মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে আমাদের নিকট এ কিতাবটি প্রেরণ করেছেন। আর আমরা এ কিতাবটি জানতে ও বুঝতে চেষ্টাও করছি না। আমরা মহান আল্লাহর কাছে গিয়ে কি জবাব দেবো। যে কিতাবটি পাঠ করে এখনো হাজার হাজার অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করছে, আর আমি মুসলিম হয়েও সে কিতাবটি পড়ছি না এবং  জানতে ও বুঝতে চেষ্টাও করছি না। অনেক নও মুসলিম আছেন যারা মুসলিম হওয়ার পরে ৩/৪ বৎসরের মধ্যে কুরআনের তিলাওয়াত ও অর্থ বুঝার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। আর আমরা জন্ম থেকে মুসলমান হওয়ার পরও অনেকেই কুরআন পড়তে পারি না। যদি কাউকে বলা হয় কুরআন পড়া শিখুন, তখন বলে যে, আমার কাছে সময় নেই। অথচ সংবাদ শুনে, পড়ে, সংবাদ পর্যালোচনা করে, অকারণে মিথ্যা বলা-বলি করে, গীবত করে, বাজে গালগল্প করে কত সময় নষ্ট করে থাকে। তখন সময়ের হিসাব করে না। অথচ আল্লাহর কিতাব পড়ার বা শেখার সময় হয় না। খুতবাতুল ইসলাম, পৃ. ২৮১ 


প্রিয় উপস্থিতি! কুরআন তিলাওয়াত শিখতে বেশি সময় লাগে না। নূরানী পদ্ধতিতে, নাদিয়া পদ্ধতিতে এবং বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতিতে মাত্র ৩/৪ মাস পড়লেই বিশুদ্ধভাবে কুরআনের তিলাওয়াত শেখা যায়। আসুন আমরা কুরআন নাযিলের মাসে রমযানের উপলক্ষে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করি।

 

তাহলে মহান আল্লাহ আমাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। মহান আল্লাহ বলেছেন-
قُلْ هَلْ يَسْتَوِىْ الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُوْنَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ
‘বলুন, যারা জানেন এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? উপদেশ কেবল তারাই গ্রহণ করেন যারা বুদ্ধিমান। সূরা আয-যুমার, আয়াত- ৯ 

 

হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
‘তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে ও শিক্ষা দেয় সেই সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। সহীহ বুখারী, হাদীস- ৫০২৭
বৃটিশ যুগে এ দেশের স্কুলগুলোতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ১০০ নাম্বারের আরবি পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। এতে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীরা একটু চেষ্টা করলেই কুরআন বুঝতে সক্ষম হত এবং আরবিতে কিছু বলতে ও লিখতে পারত। বর্তমানেও বাংলাদেশের জাতীয় পাঠ্যক্রমে আরবি শিক্ষার এরূপ ব্যবস্থা করা অতীব প্রয়োজনীয় ও সময়ের দাবি। ড. খোন্দকার আব্দুললাহ জাহাঙ্গীর রচিত খুতবাতুল ইসলাম, পৃ. ৩৫৫ 

 

লেখক: মুফতি মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন
সাতাউক মধ্যগ্রাম, লাখাই, হবিগঞ্জ
ফেসবুক: Mohammad Nasiruddin (মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন)
আমলের কথা জানতে ইউটিউবে সার্চ করুন, 01712961470

মন্তব্য করুন: