রোববার ০৪ মে ২০২৫, বৈশাখ ২১ ১৪৩২, ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

জামায়াতের ‘স্বাধীন রাখাইন’ প্রস্তাবে মিয়ানমারের কড়া প্রতিবাদ, সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ

 প্রকাশিত: ২১:২১, ৩ মে ২০২৫

জামায়াতের ‘স্বাধীন রাখাইন’ প্রস্তাবে মিয়ানমারের কড়া প্রতিবাদ, সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ

ঢাকা সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ‘স্বাধীন রাজ্য’ গঠনের প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। তারা এ প্রস্তাবকে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী জানিয়েছে, দেশটির সামরিক সরকারের পক্ষ থেকে শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

বিতর্কের সূত্রপাত হয় গত ২৭ এপ্রিল ঢাকার গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের বৈঠকের পর। বৈঠকের পর জামায়াতের পক্ষ থেকে এক ব্রিফিংয়ে দাবি করা হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মেজরিটি অধ্যুষিত এলাকায় একটি ‘ইনডিপেনডেন্ট আরাকান স্টেট’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা যাবে।

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা বলেছি, রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয় সাময়িক সমাধান। প্রকৃত সমাধান হলো, তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা। এজন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “চীন মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে এই প্রস্তাব নিয়ে তাদের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে আশা করছি।”

তবে জামায়াতের এই প্রস্তাবকে কড়া ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার। বিবৃতিতে জান্তা সরকার দাবি করেছে, জামায়াত ইসলামী রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য চীনের সঙ্গে এই যোগাযোগ করেছে এবং এ ধরনের প্রস্তাব তাদের জাতীয় সার্বভৌমত্বে আঘাত হেনেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “মিয়ানমার সরকার বহুবার স্পষ্ট করেছে যে, বাংলাদেশে আশ্রিত ‘বাঙালি’ (রোহিঙ্গা) শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন একটি অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া এবং তা মিয়ানমারের নীতিমালার ভিত্তিতেই সম্পন্ন হবে।”

দ্য ইরাবতীর তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে দেখিয়ে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার করে।

জান্তা সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ-মিয়ানমার মধ্যে কুনমিংয়ে উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে এবং প্রত্যাবাসনের জন্য নিবন্ধন ও যাচাই প্রক্রিয়াও চলছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনা অভিযান শুরুর পর সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে গড়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির কুতুপালং।

যদিও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি হয় এবং ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে, তবে নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব নিয়ে আস্থাহীনতার কারণে প্রত্যাবাসন কার্যত শুরুই হয়নি।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির সরকার উৎখাত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। চীনের মধ্যস্থতায় কিছু ত্রিপক্ষীয় আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলোও ব্যর্থ হয়।

সম্প্রতি আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা সরকারের সংঘাতে রাখাইন অঞ্চলে যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে নতুন করে আরো ৮০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।