সাগর-রুনি হত্যা: দুইজন জড়িত, ডিএনএ জটিলতায় শনাক্ত হয়নি কেউ

সাগর সরওয়ার, মেহেরুন রুনি ও তাদের সন্তান (ছবি: সংগৃহীত)
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে গঠিত উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় দুইজন। তবে ডিএনএ নমুনা অস্পষ্ট হওয়ায় এখন পর্যন্ত তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি হাইকোর্টে দাখিল করা তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, সাগর-রুনি আত্মহত্যা করেননি, বরং পরিকল্পিতভাবে খুন হন। রান্নাঘরের ছুরি ও বটি ব্যবহার করে তাদের হত্যা করা হয়। হত্যার আগে সাগর সরওয়ারের হাত-পা বাঁধা হলেও রুনির ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
তদন্তে উঠে এসেছে, হত্যাকাণ্ডটি ঘটে রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে। ‘ব্লাড প্যাটার্ন’ বিশ্লেষণে ধারণা করা হয়, প্রথমে রুনিকে এবং পরে সাগরকে হত্যা করা হয়। হত্যার সময় দম্পতি তাদের একমাত্র ছেলে মেঘকে নিয়ে একই খাটে ছিলেন।
ঘটনাস্থলে চারজনের ডিএনএ পাওয়া যায়—তাদের মধ্যে দুইজন সাগর-রুনি হলেও বাকি দুইজনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, নমুনায় ৫-৬ জনের ডিএনএ মিশে থাকায় শনাক্তকরণ আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
টাস্কফোর্সের তদন্ত অনুযায়ী, হত্যার পেছনে দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত কোনো কারণের ইঙ্গিত মেলেনি। ভিসেরা রিপোর্টেও চেতনানাশক বা বিষ জাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি।
রান্নাঘরের বারান্দার ১৪.৫ ও ৮.৫ ইঞ্চি ভাঙা অংশ দিয়ে ঘরে প্রবেশ-প্রস্থান সম্ভব ছিল, তবে সেখানে পূর্ণাঙ্গ ফুটপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। এর আগেই গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়দের চলাচলের কারণে অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়।
এ কারণে টাস্কফোর্স আরও ৬ মাস সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে, যা হাইকোর্ট অনুমোদন করেছে।
২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশে র্যাবকে তদন্ত থেকে বাদ দিয়ে পিবিআই প্রধানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। কমিটিতে সিআইডি, পুলিশ ও র্যাবের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনিকে তাদের বাসায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মামলার তদন্তে বারবার গতি থেমে যাওয়ায় হাইকোর্ট নিজেই পর্যবেক্ষণে আসে।