শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাংলাদেশের জনসংখ্যার আধিক্য- সংকট না হয়ে আশীর্বাদ হয়েছে: এখন সরকারের যে দায়িত্ব রয়েছে

মুফতি মুহাম্মাদ নূরুল্লাহ

 প্রকাশিত: ১২:০৭, ৯ এপ্রিল ২০২৩

বাংলাদেশের জনসংখ্যার আধিক্য- সংকট না হয়ে আশীর্বাদ হয়েছে: এখন সরকারের যে দায়িত্ব রয়েছে

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ওই পশ্চিমা মিত্ররা শুধু চাপ দিচ্ছিল বাংলাদেশের জনসংখ্যা কমানোর জন্য। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি নাকি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিবে। এরপর সরকারকে বাধ্য হয়ে জনসংখ্যা কমানোর অনেক প্রকল্প হাতে নিতে হয়েছিল। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এগুলো ছিল প্রচারণা, আর সরকারের পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় তখনই গঠিত হয়েছিল। আজও জন্মনিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম আমেরিকার জনগণ বাংলাদেশে পাঠিয়ে থাকে। কি নির্মম নিষ্ঠুর পরিহাস!


সাতটি বৃহৎ কোম্পানি রয়েছে একত্রে যার নাম সেভেন সিস্টার এর পাঁচটিই আমেরিকার কবলে। এরা সারাবিশ্বের নব্বই ভাগ সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। নানারকম যুদ্ধ, শোষণ ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে মানুষের মুখের গ্রাস তারা কেড়ে নিচ্ছে। সেই তারাই তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে না করছে সন্তান জন্ম দিতে। এজন্য জন্মনিরোধক সামগ্রী সাপ্লাই দিয়ে তারা দরদির ভূমিকা পালন করছে!


কথাটা ভালো করে বুঝুন। আল্লাহ যখন প্রত্যেক মানুষেরই রিযিকের জিম্মাদারী নিয়েছেন। আর সারা বিশ্বের সমস্ত মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকা। ওরাই আবার শোষিত বঞ্চিত নিগৃহীত মানুষ যাতে সন্তান জন্ম দিতে না পারে সেই ব্যবস্থা করছে। তাদের জন্য বার্থ কন্ট্রোলের সামগ্রী পাঠিয়ে বড় দাতা হিসেবে নিজেদের জাহির করছে। গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর দেয়ালে লেখা আছে ‘আমেরিকার জনগণের পক্ষ থেকে’। লেখাটা দু-একবার বিভিন্ন দেয়ালে আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।


রাখে আল্লাহ মারে কে। বাংলাদেশে সত্যিই মানুষের সংখ্যা যখন বাড়লো আমাদের সম্ভাবনার দুয়ার তখন খুলতে শুরু করল। নব্বইয়ের দশকে গার্মেন্টস শিল্প যখন দেশে বিকশিত হতে শুরু করল আর বিপুল মানুষ কাজ পেয়ে গেল। দেশের অর্থনীতির চাকা শক্তিশালী হলো। ওইদিকে বিদেশের শ্রমবাজার খুলে গেল। বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ, তাদের কোটি কোটি হাত বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে মেহনত শুরু করল।


আজকের বাংলাদেশের চেহারা পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে এই সেক্টরের মানুষ, গার্মেন্টস শ্রমিক ও ব্যবসায়ীগণ। অপরদিকে দেশকে ভালোবেসে যারা সংগ্রাম করেছেন সেই প্রবাসী বন্ধুগণ।


২০০০ সালে আমরা দেখেছি গ্রামে পাকা বাড়ি খুব বেশি দেখা যেত না। টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজা, টিস্যু পেপার ব্যবহার, উন্নত ফার্নিচার, পানির সাপ্লাই, বিদ্যুৎ লাইন, উন্নত গোসলখানা ও টয়লেট গ্রামাঞ্চলে দেখা যেত না।


আজ গ্রামের চেহারা পরিবর্তন হয়েছে। এই প্রবাসীরাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। তারা মানুষের জীবনধারা লক্ষ্য করেছেন, উন্নত জীবনে অভ্যস্ত হয়েছেন। একদিকে তারা রেমিটেন্স সরবরাহ করেছেন অন্যদিকে জীবনমান উন্নত করতে ও দেশের চেহারা পরিবর্তন করতে উন্নতবিশ্বের উপকরণ সরবরাহ করতে শুরু করেছেন। নিজেদের পোশাক-আশাক বসতবাড়ি সবকিছুতে উন্নতির ছোঁয়া লাগিয়েছেন।


ইংরেজ আমলের শেষ দিকে বাংলার মুসলমানের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দুর্বল হওয়ায় তাদের সামাজিক অবনতি হয়েছিল অভাবনীয়। তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক কালচার বিজাতীয় বিধর্মী সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিল। বাংলার অধিকাংশ নারী ইসলামি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল। তারা চলাফেরায় পর্দা করতো না হিজাব পরতো না। শরয়ী পর্দার ধারণাটা অনেক পরিবারে বিলুপ্ত হয়েছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরাই উন্নত জীবন-পদ্ধতি উন্নত পোশাক এবং পরিচ্ছন্ন বাড়িঘর নির্মাণ করার প্রেরণা নিয়ে দেশে আসলেন। বৈদেশিক মুদ্রায় তাদের আর্থসামাজিক চেহারা দাড় করালেন। ফলে বাংলাদেশকে আজকে একটি সুস্থ উন্নত রাষ্ট্রের মতোই হচ্ছে। সাধারণ মুসলিম জনপদগুলো যখন বৈষয়িক উন্নতি করে তখন তার চেহারাটা যেমন হয়। যেমন এখানকার নারী সমাজ এখন হিজাব ও বোরকা পরছে, মসজিদ মাদরাসা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি সাধন হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ইসলামী গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বিকশিত হয়েছে।


সরকারের এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন ছিল। জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকহারে পুষ্টির ব্যবস্থা করা। ফলমূল চাষ ও আমিষ উৎপাদন ও ঘরে ঘরে সেটি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। রেলের দুই পাশে বিপুল জমি রয়েছে যেখানে প্রচুর কমলালেবু, মাল্টা ও আঙুর চাষ করা সম্ভব। দেশের চরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণে গরুর খামার স্থাপন করা সম্ভব। গরুর গোশতের বাজার সবসময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।


জনগণের পুষ্টির অভাব পূরণে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ খুব জরুরী। যাতে করে, কোন মা পুষ্টিহীন না থাকে। যেন কোনও শিশু পুষ্টির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমিষ প্রোটিন যাতে প্রত্যেক মানুষের জন্য সহজলভ্য হয়। দুধ এবং ডিম যাতে সকল পরিবার খেতে পায়। তাজা ফলমূল সকল অঞ্চলের মানুষ সুলভ দামে পায়।

স্বাধীনতার পরপরই সে ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে মনোযোগ দেওয়া সরকারের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু উন্নয়নের শ্লোগানে এ ধরনের মৌলিক উন্নয়নের কথা আড়ালে পড়ে গেছে। জনগণের ঈমান, চেতনা, বুদ্ধি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিপূর্ণতা নিয়ে কাজ করা কর্তব্য ছিল। তাদের আখলাক নৈতিকতা উন্নত করার জন্য কাজ করা মৌলিক উন্নয়নের দাবি। সেসব কাজ খুব বেশি হয় নাই।


মনে রাখতে হবে, প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো। এজন্য ভারী শিল্প স্থাপনের বিকল্প নেই। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে, জনগণকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে প্রস্তুত করা। সুস্থ সবল বুদ্ধিমান জাতি গঠন করা। এসব না করে বড় বড় ব্রীজ ও রাস্তাঘাট নির্মাণ জ্ঞানীদের মতে, উচ্চাভিলাস ব্যতীত আর কিছু নয়।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের আলোকে যদি উশর ও ফসলি যাকাতের বিধান কার্যকর করা হতো, যাকাত আদায়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতো তাহলে পুষ্টিহীন দুর্বল ক্ষুধাতাড়িত মুখ আমরা হয়তো দেখতাম না।


আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আশা-আকাংক্ষাকে চূর্ণ করে এমন রাষ্ট্র আশা করি না। যদি রাষ্ট্রে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে সংখ্যালঘু মানুষও এর দ্বারা যথেষ্ট উপকৃত হবেন। সমাজে শান্তি ও স্বস্তি বিরাজ করবে। আমরা কল্যাণের পথে সকলকে আহ্বান করি। বিপুল সংখ্যক বিশ্বাসী জনগণের দাবি মতে সুস্থ সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পদক্ষেপ আশা করা নিছক আশা নয়।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল ২৪

মন্তব্য করুন: