যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধে পর ভেনেজুয়েলার পাশে থাকার ঘোষণা চীনের
ভেনেজুয়েলার বন্দরে যাতায়াতকারী যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা সব তেলবাহী ট্যাংকারের ওপর প্রসিডেন্ট ট্রাম্পের অবরোধ আরোপের পর দেশটির পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে চীন।
ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে ‘একতরফা চাপ ও হয়রানি’ আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতা করেছে চীন। তবে চীন কীভাবে ভেনেজুয়েলাকে সহায়তা করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। এমনকি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে চীন আশ্রয়ের প্রস্তাব দেবে কিনা তাও বলেনি।
বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এক ফোনালাপে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিলকে বলেন, চীন সব ধরনের একতরফা চাপ ও হয়রানির বিরোধিতা করে এবং দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষার পক্ষে অবস্থান নেয়।
ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা সব তেলবাহী ট্যাংকারের ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও প্রস্থান বন্ধে পূর্ণ নৌ অবরোধ জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে মার্কিন সেনা ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।
চীন ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা। বিশ্লেষকদের হিসাবে, চীনের মোট তেল আমদানির প্রায় ৪ শতাংশ আসে ভেনেজুয়েলা থেকে। ডিসেম্বর মাসে দেশটি প্রতিদিন গড়ে ভেনেজুয়েলা থেকে ছয় লাখ ব্যারেলের বেশি তেল আমদানি করেছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ওয়াং ই যুক্তরাষ্ট্র বা প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করেননি। ভেনেজুয়েলাকে কী ধরনের বা কতটা সহায়তা দেওয়া হতে পারে, সে বিষয়েও তিনি কিছু বলেননি, যদিও এর আগে বেইজিং কারাকাসের সঙ্গে ‘অটুট বন্ধুত্বের’ কথা বলেছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার ও মানবপাচার দমনের অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলার প্রধান রাজস্ব খাত তেলকে লক্ষ্য করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির তেল সম্পদ দখল করতে চায় এবং সামরিক চাপের লক্ষ্য তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা। পলিটিকো পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, মাদুরোর ‘দিন ফুরিয়ে আসছে’।
চীন দীর্ঘদিন ধরে ‘তেলের বিনিময়ে ঋণ’ চুক্তির আওতায় ভেনেজুয়েলাকে ঋণ সহায়তা দেওয়ার আওতা বাড়িয়েছে। চলতি বছর মস্কোয় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মাদুরো বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখার চেষ্টাও করছে চীন। দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ও শুল্ক বিরোধের পর গত অক্টোবরে ট্রাম্প ও শি এসব বিষয় মোকাবেলায় একটি সমঝোতায় পৌঁছান।
চীন বলেছে, জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘন করে বা অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ক্ষুন্ন করে, এমন কোনও কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে তারা।
“চীন মনে করে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভেনেজুয়েলার বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার অবস্থান বুঝতে পারছে এবং তা সমর্থন করে,” বলেন ওয়াং ই।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে উত্তেজনা প্রশমনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
মেক্সিকো ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টরাও সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত সপ্তাহে মাদুরোর সঙ্গে ফোনালাপে ‘বর্ধমান বহিরাগত চাপের মুখে জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নীতির’ প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।
ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের ‘চলমান আগ্রাসন’ নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দেখা একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চীন ভেনেজুয়েলার এই আহ্বানকে সমর্থন করেছে বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান।
ভেনেজুয়েলার ভাষায় অঞ্চলটিতে ‘যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন’ এর বিষয়টি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে কিনা, এ প্রশ্নে মুখপাত্র ওয়াং ই–এর বক্তব্য পুনরুল্লেখ করেন এবং বিস্তারিত মন্তব্য এড়িয়ে যান।