বৃহস্পতিবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ৪ ১৪৩২, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ যাচাই করা হবে: গভর্নর ‘শত কোটি টাকার’ অনিয়ম: কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিচ্ছে দুদক ২৭তম বিসিএস: ৬৭৩ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন সিঙ্গাপুরেই হাদির অস্ত্রোপচারের অনুমতি দিয়েছে পরিবার: ইনকিলাব মঞ্চ মেয়েকে নিয়ে ২৫ ডিসেম্বর সকালে ফিরছেন তারেক রহমান খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল: ডা. জাহিদ জেআইসিতে ‘গুম-নির্যাতন’: হাসিনা ও ১২ সেনা কর্মকর্তার বিচার শুরুর আদেশ হাদির জন্য এখন দোয়াই বেশি দরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি: ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক জোয়ার যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধে পর ভেনেজুয়েলার পাশে থাকার ঘোষণা চীনের হাজারীবাগের হোস্টেলে এনসিপির জান্নাতারা রুমীর মরদেহ ট্রাইব্যুনালে ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ভারতীয় ভিসা সেন্টারের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু শিল্প শ্রমিকদের জন্য ‘প্রবাসী ফি` বাতিল করেছে সৌদি আরব ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে ‘আগামী সপ্তাহে মায়ামিতে বৈঠকে বসবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া’

অর্থনীতি

২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ যাচাই করা হবে: গভর্নর

 প্রকাশিত: ১৯:১০, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ যাচাই করা হবে: গভর্নর

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফেরাতে ২০ কোটি টাকার বেশি পরিমাণের সব ঋণ যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়ার জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “দুঃসময় থেকে কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছে ব্যাংক খাত। ব্যাংকিং খাতে মানুষের আস্থা ধরে রাখতে পেরেছি। পুরো বিশ্ব অবাক—বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা রান (সচল) করছে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন আনতে, গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে ঋণগুলো সঠিক ল্যান্ডিং করেছে কি না তা রেগুলারভাবে দেখা হবে।

“এজন্য ৫০০ জনের একটি টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ফরেনসিক অডিট করতে পারে—এমন ৫০ জনকে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশে ফরেনসিক অডিট নেই। ফরেনসিক অডিটের সক্ষমতা না থাকলে চুরি-চামারি ধরা যাবে না।”

ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় জামানত রাখা হয়েছে কি না তা এই দল দেখবে জানিয়ে গভর্নর বলেন, “২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ নতুন করে যাচাই করা হবে। এসব ঋণের জামানত ঠিক আছে কি না, তা দেখা হবে। না থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যাংক পরিচালকদের জবাবদিহি করতে হবে।

“ব্রাঞ্চ ছাড়া হেড অফিস ঋণ দিতে পারে না; তাদেরও দায় নিতে হবে। ব্যাংকের বেতনে তার (শাখার কর্মকর্তারা) ঘর-সংসার চলবে; আর সেই ব্যাংকের সমস্যা সে দেখবে না তা হবে না। তিনি তো অনিয়ম দেখলে হুইসেল ব্লোয়ার হতে পারেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা জানবে।”

বৃহস্পতিবার ঢাকার পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্ম: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ঋণ কেলেঙ্কারি, অর্থপাচারে সহায়তা ও ব্যাংকিং খাতের অনিয়মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায় রয়েছে কতোটা এবং তাদের শাস্তির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?

এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, “সেক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) পুরো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ বা বাধা দেব না। বাংলাদেশ ব্যাংকের যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

“দুদক এ বিষয়ে কাজ করছে, আমি আর বেশি বলব না; তারা ঋণ বিতরণে কাদের কাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে তা দেখছে।”

গভর্নর বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা দরকার। ভালো নেতা দরকার। এজন্য সরকারের কাছে আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সরকার এই আইন পাস করে দিলে সব করা যাবে।”

আর্থিক সংকটে জেরবার শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়ায় গত ৩০ নভেম্বর ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’র লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

নতুন করে আর কোনো ব্যাংক একীভূত করা হবে না জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সমস্যায় থাকা ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করা হবে।

সরকারের তরফে এসব প্রতিষ্ঠানের সব সাধারণ আমানতকারীকে পুরো টাকা ফেরত দেওয়া হবে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান বলেন, “পরিচালকদের শেয়ার শূন্য করে দেওয়া হবে। তাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী (পদক্ষেপ নেওয়া) হবে।

“আমানতকারীদের বেলায় সরকার বেশি উদার থাকবে। আর প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী পরবর্তীতে দায়-দেনা শোধের পর টাকা পাবে।”

দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বিশেষ করে রিজার্ভ বৃদ্ধি, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, রেমিটেন্স প্রবাহ ও আমদানি-রপ্তানিতে স্থিতিশীলতা ফেরানো গেছে মন্তব্য করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, “স্থিতিশীলতা ফেরানোর ক্ষেত্রে আমরা বহুলাংশে সফল হয়েছি।

“আমাদের একটি চ্যালেঞ্জ ছিল যে—ব্যাংক খাতের ওপর এক ধরনের আস্থা ধরে রাখা; সেক্ষেত্রে আমরা আংশিকভাবে হয়তো সফল হয়েছি।”

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাংকসহ যেকোনো দাতা সংস্থার ধারের অর্থ ছাড়াই চলতি বছর নাগাদ বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি বা রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য ঠিক করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

দেশে খেলাপি ঋণের বর্তমান হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “অনেক ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি রয়েছে এবং খেলাপি ঋণের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আমার ধারণা ছিল, খেলাপি ঋণ ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ হবে, কিন্তু বাস্তবে তা প্রায় ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

“আমরা কোনো তথ্য লুকাবো না; যা সত্য, সেটাই প্রকাশ করা হবে। অনেকে বলেছেন, এতে ক্রেডিট রেটিংস কমে যাবে। তার পরও আমি বলেছি, যা হওয়ার হোক সত্যটা প্রকাশ হোক।”

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “আসন্ন নির্বাচন একটি সন্ধিক্ষণ। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে ব্যাংকিং খাতকে কীভাবে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।

“রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরিষ্কার করতে হবে যে—তারা কি আগের মতো ক্ষমতাশালী পুঁজিপতিদের হাতে ব্যাংকিং খাতকে ব্যবহার করতে দেবেন। একটি পুঁজিপতির হাত থেকে ব্যাংক খাত আরেক পুঁজিপতিদের কাছে যাবে নাকি জনগণের কল্যাণে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পুঁজি জোগানের জন্য এই খাতকে ব্যবহার করবেন।”

সেমিনারে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলের মাধ্যমে ব্যাংক খাত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এজন্য এখন খেলাপি ঋণ ৩৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে।

“এখন যে সংস্কার হচ্ছে, তা রাজনৈতিক সরকার কতটা এগিয়ে নেবে—তা গুরুত্বপূর্ণ।”

পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি দৌলত আকতার মালা; সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।