বৃহস্পতিবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩২, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে অভিবাসীর চাপে বিপর্যস্ত এডেন শহর

 প্রকাশিত: ১৪:০৫, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে অভিবাসীর চাপে বিপর্যস্ত এডেন শহর

এক সময় মনোরম লোহিত সাগর-উপকূলীয় বন্দরনগরী এডেন এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের ঢল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। 

ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করার পর নিরাপত্তা ও জীবিকার খোঁজে সেখান থেকে লাখো মানুষ পালিয়ে এসে এডেনে আশ্রয় নেওয়ায় শহরটির এখন বিদ্যুৎ, পানি ও সীমিত জনসেবামূলক অবকাঠামো নিয়ে মারাত্মক চাপে পড়েছে।

এছাড়া, ধনী উপসাগরীয় দেশগুলোতে যাওয়ার আশায় প্রতি মাসে পাচারকারীদের নৌকায় করে আগত বহু আফ্রিকান অভিবাসীও আটকে পড়ছে ইয়েমেনের সবচেয়ে দরিদ্র এই অঞ্চলে।

খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।

ইয়েমেনের সামাজিক কল্যাণ ও শ্রমমন্ত্রী মোহাম্মদ সাঈদ আলজাওরি এএফপিকে বলেন, নথিভুক্ত ৭ লাখ ৫৫ হাজারসহ অগণিত অনিবন্ধিত মানুষের আগমনে এডেনের জনসংখ্যা এখন ৩৫ লাখে দাঁড়িয়েছে, আর এই সংখ্যা ২০ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ।

তিনি আরও বলেন, ‘এই সংখ্যা এডেনের ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি এবং এখন এই শহরে অবস্থানরত এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে সীমিত সরবরাহ ভাগ করে নিতে হচ্ছে।’

২০১৪ সাল থেকে বিদ্রোহীদের রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত এডেন শহরজুড়েই দৃশ্যমান যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন। শহরটিতে রয়ে গেছে গুলিবিদ্ধ বাড়িঘর, ধ্বংসস্তূপ, বিকল হয়ে যাওয়া জেনারেটর ও পানিবাহী ট্রাকের সারি আর যানজটে অবরুদ্ধ সড়ক।

বাসিন্দারা জানান, বিদ্যুৎ ও পানির সংকট এখন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কও অচল হয়ে পড়েছে।

৩৭ বছর বয়সী সরকারি কর্মচারী মোহাম্মদ বলেন, যুদ্ধ শুরুর আগেও শহরের সেবা ব্যবস্থা দুর্বল ছিল, তবে এখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। 

তিনি আরও বলেন, ‘বাসিন্দাদের সঙ্গে বাস্তুচ্যুতদেরও সেই সীমিত পানি ভাগ করে নিতে হচ্ছে, আর এর ফলে বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।’

গত অক্টোবর মাসেই জ্বালানির অভাবে পুরো শহর পাঁচ দিনের ব্ল্যাকআউটের মুখে পড়ে। এই নিয়ে চলতি বছর তৃতীয়বারের মতো এডেন ব্ল্যাকআউটের মখে পড়ল।

চড়া ভাড়া বৃদ্ধিতে স্থানীয়দের পাশাপাশি অনেক বাস্তুচ্যুত পরিবারও ঘর ভাড়া বহন করতে পারছে না। 

মোহাম্মদ বলেন, তার ৮০ ডলার মাসিক বেতনে ১০৬ ডলারের ঘর ভাড়া দেওয়া অসম্ভব, আর তাই তার বিয়ে স্থগিত রাখতে হয়েছে।

হোদাইদা থেকে পালিয়ে আসা আব্দুর রহমান মুহিউদ্দিন ২০১৮ সাল থেকে আট সন্তান নিয়ে এডেনের শহরতলির একটি ক্যাম্পে তাবুতে থাকছেন।

ওই ক্যাম্পে নেই পানি, বিদ্যুৎ বা বিছানার মতো মৌলিক সুবিধা।

চাটহাম হাউসের ইয়েমেন বিশেষজ্ঞ ফরিয়া আলমুসলিমি সতর্ক করে বলেন, এডেনের জনসেবা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ধস ‘এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র’। 

তিনি আরও বলেন, শহরটি নর্দমার পানি, অবিরাম বিদ্যুৎ সংকট ও সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন ব্যবস্থায় ডুবে আছে।

এই অঞ্চলে যুদ্ধ, অপুষ্টি ও পরোক্ষ কারণ মিলিয়ে ইতোমধ্যে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। 

২০২৪ সালের মুদ্রাস্ফিতি, তেল রপ্তানি বন্ধ ও তহবিল সংকটে ২০২৫ সাল নাগাদ এডেনের অর্থনীতি আরও নিম্নগামী হয়।

অভিভাবকেরা জানান, তাদের শিশুদের অনেককেই স্কুলে জাতিসংঘের সরবরাহ করা পুষ্টিবর্ধক বিস্কুটের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। 

জাতিসংঘ বলেছে, ২০২৫ সালে ১ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে ৪৮ লাখ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত।

এডেনের অভিজাত এলাকা থেকেও দুর্দশার খবর আসছে। কোরাল এডেন হোটেলের প্রবেশমুখে এক হাড় জিরজিড়ে রুগ্ন কুকুর গার্ডদের সঙ্গে বসে আছে। এই হোটেলে কূটনৈতিক মিশন ও রাজনৈতিক বৈঠক হয়। 
এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, কুকুরটির আলাদা খাবারের বাজেট নেই।

তিনি আরও বলেন, কুকুরটি ক্লান্ত এবং তার ভাগ্যও আমাদের মতোই। সে আমাদের দারিদ্র্য আর বেঁচে থাকা খাবার ভাগ করে নেয়।