ট্রাইব্যুনালে কড়া নিরাপত্তা, হাজতখানায় মামুন
জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘিরে বাড়ানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা।
তিনজনের মধ্যে কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে এসে রাখা হয়েছে হাজতখানায়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার রায় ঘোষণা করবে।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হবে বেলা ১১টায়। রায় ঘোষণার অংশ ট্রাইব্যুনাল থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
রায় ঘিরে রবি ও সোমবার ফের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের এ কর্মসূচির মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত বোমাবাজির পাশাপাশি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকাল থেকে ট্রাইব্যুনালের সামনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের চারদিকে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে। হাই কোর্ট মাজার গেটের সামনে অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী।
ট্রাইব্যুনালের ভেতরে ও বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
রায় ঘিরে নাশকতা বাড়তে থাকায় রোববার বিকেলে ডিএমপির ওয়্যারলেস চ্যানেলগুলোতে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল নিক্ষেপ করতে এলে গুলির নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি ওয়্যারলেসে বলেছি যে কেউ বাসে আগুন দিলে, ককটেল মেরে জীবনহানির চেষ্টা করলে তাকে গুলি করতে। এটা আমাদের আইনেই বলা আছে।”
সহিংসতার আশঙ্কায় ঢাকার পাশপাশি গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুর জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ তৎপর থাকার কথা বললেও শঙ্কা কাটছে না মানুষের। ঢাকার অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রোববার থেকেই অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। সোমবার কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করতে বলেছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আইএনজিও। অনেকগুলো বহুজাতিক কোম্পানিও একই পথ ধরেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলার আসামি।
শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান। আসাদুজ্জামান খান কামালও ভারতে আছেন বলে ধারণা করা হয়। তাদের পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে।
অন্যদিকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে গত ১০ জুলাই তিন আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি আদালতের কাছে প্রেয়ার করেছি। আদালত তার সুবিবেচনা প্রয়োগ করবেন এবং আমাদের পক্ষ থেকে প্রেয়ার হচ্ছে যে এই অপরাধের দায়ে আসামিদের যেন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়।”