লাঠিচার্জ পরিহার করে আলোচনায় সমাধানের বার্তা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার, পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকার নির্দেশ

রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশ সদস্যদের আরও ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পুলিশকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ধৈর্য্য ধরে আলোচনার মাধ্যমেই অনেক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব। অপ্রয়োজনে কোনো প্রকার লাঠিচার্জ বা বলপ্রয়োগ করা উচিত নয়।
আজ মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন স্তরের পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন স্তরের পুলিশ সদস্যরা তাদের পেশাগত নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পুলিশ সদস্যদের ব্যবহার, সেবার মানসিকতা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে জনগণের মন জয় করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমেই পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে।
সভায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের ওপরও জোর দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, পুলিশকে যেকোনো রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো প্রকার ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না এবং সকল প্রকার ঘুষ ও দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পুলিশ সদস্যদের ধৈর্য্য ধারণ করা। ধৈর্য্য ধরে আলোচনার মাধ্যমে অনেক কঠিন সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব। সাধারণ মানুষ যাতে কোনো প্রকার হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখার কথা বলেন তিনি।
পুলিশে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে অধস্তন ফোর্সের আবাসন ও খাদ্য সমস্যাকে প্রকট হিসেবে উল্লেখ করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানান, পুলিশের যানবাহন সংকট নিরসনেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং থানার জন্য নতুন ২০০টি পিকআপ ভ্যান কেনার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
পুলিশের বিভিন্ন কল্যাণমুখী কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। কনস্টেবল থেকে শুরু করে সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান উচ্চ সীমা (সিলিং) বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে নিম্ন স্তরের পুলিশ কর্মকর্তারা এখনকার চেয়ে বেশি হারে ঝুঁকি ভাতা পাবেন। এছাড়াও, পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেল কেনার জন্য ঋণ প্রদানের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এই ঋণ শুধুমাত্র এসআই ও এএসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের দেওয়া হবে এবং সরকার যাতে এই ঋণের সুদের অর্থ পরিশোধ করে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় অনুরোধ জানানো হবে।
তিনি আরও জানান, সরকার অধস্তন পুলিশ সদস্যদেরকে তাদের নিজ বৃহত্তর জেলার মধ্যে পদায়নের বিষয়টি বিবেচনা করছে। পাশাপাশি, যদি স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই পুলিশ সদস্য হন, তবে তাদেরকে একই জেলায় পদায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
পুলিশের জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে (টিওএন্ডই) প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি করা জরুরি। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশকে (আইজিপি) নির্দেশনা প্রদান করেন।
মতবিনিময় সভায় ট্রাফিক সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ ট্রাফিক বক্স বা শেল্টার স্থাপন, রাতে টহলরত পুলিশ সদস্যদের জন্য অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন এবং মাদকের মূল ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতে কঠোর অভিযান পরিচালনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আইজিপি বাহারুল আলম।