শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৫, কার্তিক ২৯ ১৪৩২, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রেকিং

ভোটের দিনে গণভোট: ‘আলোচনা করে’ মত জানাবে ইসি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি জুলাই সনদ লঙ্ঘন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা: সালাহউদ্দিন সরকারের সিদ্ধান্তে ‘জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি’: জামায়াত ইসরাইলের মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন গাজা যুদ্ধবিরতির আলোচক ডারমার ২০২৫ সালে রেকর্ড ছাড়াবে জীবাশ্ম জ্বালানির নিঃসরণ : গবেষণা জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে: প্রধান উপদেষ্টা গুলিস্তানে আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর, আগুন আগাম পোস্টার সরিয়ে ফেলুন, দলগুলোকে সিইসি পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দৃষ্টান্তমূলক রায়ে হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তির আশা চিফ প্রসিকিউটরের ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’: শেখ হাসিনার মামলার রায় ১৭ নভেম্বর

জাতীয়

সীমান্তে আরাকান আর্মি, কী প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে?

 প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

সীমান্তে আরাকান আর্মি, কী প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে?

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।  এতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭০ কিলোমিটার পুরোটাই এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে বলে মিয়ানমারের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আরাকান আর্মি। ওই নিষেধাজ্ঞার পর নাফ নদীতে নৌ চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়। এ ঘটনায় বাড়ানো হয়েছে বিজিবির টহল।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, যেহেতু সীমান্তের ওপার বিদ্রোহী আরাকান আর্মির দখলে নিয়েছে, সে কারণে আমরা সীমান্তে সতর্কতা বজায় রেখেছি যাতে কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ না ঘটে।

প্রায় আট মাসেরও বেশ সময় ধরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।  

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের চলমান এই যুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সহযোগী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি-এআরএ ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাসহ কয়েকটি সংগঠনের অবস্থান ছিল জান্তা বাহিনীর পক্ষে।

এ কারণে সীমান্তবর্তী আরাকান রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার ফলে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি আরও বেশি জটিল ও আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

মংডুর পাশাপাশি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার বুথিডং ও পালেতাওয়া দখলের নেওয়ার দাবি করেছে আরাকান আর্মি। যদিও রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কিছুই জানায়নি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।

চলতি বছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে টানা যুদ্ধ চলছে। তীব্র যুদ্ধের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কয়েকশ সদস্য। পরে তাদের মিয়ানমারে ফেরতও পাঠানো হয়।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এহসান উদ্দিন বলেন, সীমান্তে অযাচিত যাতায়াত বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। সেজন্য সচেতন করতে মাইকিংও করা হচ্ছে।  

তিনি বলেন, নাফ নদীতে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে যেন কোনোক্রমেই কোনো নৌকা না যায় সেজন্য আমরা সতর্কতা জারি রেখেছি। কেউ যেন সীমানা ক্রস করে এদিকে না আসে সেদিকে আমরা নজর রাখছি।

এক্ষেত্রে ছোট ছোট নৌকাগুলোকে নাফ নদীতে বাংলাদেশ অংশে সর্তকতার সঙ্গে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও বড় ট্রলার, বড় জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তের নাফ নদীতে টহল তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। নাফ নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং বাংলাদেশের জলসীমায় বিদ্যমান দ্বীপের আধিপত্য বিস্তারের জন্য নৌ টহলও জোরদার করা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে আরাকান আর্মির হামলার মুখে কয়েকটি রোহিঙ্গা সংগঠনের নেতারা অস্ত্রসহ বাংলাদেশে আশ্রয়ের পর তাদের আটক করে পুলিশ। কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এমন অবস্থায় নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজারের টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আমাদের প্রথম কাজ হলো বাংলাদেশ বর্ডার যাতে কেউ ক্রস না করে। কোনো অবস্থাতেই যাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে সেদিক বিবেচনায় টহল জোরদার করেছি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও রোহিঙ্গা নিয়ে সংকট কয়েকটি কারণে দীর্ঘায়িত হতে পারে।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, প্রথমত আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে রোহিঙ্গারা জান্তা বাহিনীর পক্ষ নেওয়ায় এই সংকট আরও বাড়ল।

দ্বিতীয়ত যে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে পরাজিত হয়ে পালিয়েছে, তাদের সদস্যদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জোর শঙ্কা রয়েছে। সবচেয়ে বড় যে সংকট সেটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের উদ্যোগ, বলেন তিনি।

এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, রাখাইন এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভরসা করতে হবে নেপিডোর ওপর। কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরে এই সংকট সমাধান সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হলো।

এই বিশ্লেষক মনে করছেন, একদিকে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। এমন অবস্থায় প্রতিবেশী মিয়ানমারেও সীমান্তে যে অস্থিরতা তৈরি হলো তাতে সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যেও প্রভাব পড়তে পারে।

বিবিসি বাংলা অবলম্বনে