শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, বৈশাখ ২৬ ১৪৩২, ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ব্রেকিং

আইভীর বাড়িতে পুলিশ, অনুসারীদের জটলা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী ধাপের আলোচনার কর্মপরিকল্পনা দ্রুত চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাফল্য চাই: মির্জা ফখরুল তথ্যযুদ্ধ: কতটা সত্যি বলছে ভারত ও পাকিস্তান? ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে এরপর কী? পাকিস্তান ভারত সীমান্তে উত্তেজনার নতুন অধ্যায়: ক্ষেপণাস্ত্র, হামলা ও তথ্যযুদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে: আসিফ মাহমুদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে নেতৃত্ব পরিবর্তন: স্নিগ্ধর পদত্যাগ আবদুল হামিদের দেশত্যাগে জড়িতদের ধরা হবে, না হলে আমিই চলে যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সরকার সংবাদপত্রের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চায় : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা প্রথম আমেরিকান পোপ হলেন রবার্ট প্রিভোস্ট ২০২৫: টেকনোলজির ঝড় উঠছে! ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধের দামামা: বাংলাদেশে কী প্রভাব, করণীয় কী রক্তের প্রতিটি ফোঁটার বদলা নেব: শেহবাজ শরিফ

স্পেশাল

ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে আমার স্বপ্ন মরে গেছে : শহীদ আব্দুর রউফের বাবা

 প্রকাশিত: ১৮:১৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে আমার স্বপ্ন মরে গেছে : শহীদ আব্দুর রউফের বাবা

ছেলে হারানোর শোক সামলাতে পারছেন না সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আব্দুর রউফের (২৫) পরিবার। ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো শোকে মুহ্যমান তার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা। এই শোক ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশীদের মাঝেও।

শহীদ আব্দুর রউফের বাবার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে আমার সব স্বপ্ন মরে গেছে। তাকে ছাড়া আমি এখন বাঁচবো কিভাবে?’

বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশে সূচিত হয়েছে এক নতুন দিগন্তের। এই রক্তাক্ত আন্দোলনে ঝড়েছে অনেক তাজা প্রাণ। প্রাণ বিসর্জনকারীদের মধ্যে নীলফামারী জেলা সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের দোনদরী মাঝাপাড়া গ্রামের আব্দুর রউফ একজন। তিনি ওই গ্রামের ইউনূছ আলী (৫৫) ও সুলতানা বেগম (৫০) দম্পতির ছেলে। বাবা ইউনূছ আলী পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী।

শনিবার দুপুরে তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। এক মাসের অধিক সময় পার হলেও স্বজন হারোনোর শোকের ছায়া কাটেনি বাড়িটি থেকে। আর সে শোকের ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে গোটা গ্রামে।

প্রতিবেশীরা জানান, এক সপ্তাহ আগে রউফের বাবা-মা ছোট ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় ছুটে যান ছেলের নিহত হওয়ার স্থানটি দেখতে। বাড়িতে রয়েছেন পরিবারের এক সদস্য।

পারিবারিক সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকার উত্তরায় নিহত হন আব্দুর রউফ। আন্দোলন বিরোধীদের ছোড়া গুলি বুকে বিদ্ধ হলে ঢলে পড়েন মাটিতে। তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

পরিবারের দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আব্দুর রউফ সবার বড়। বিয়ে হয়েছে বোন রিমু আক্তারের (২২)। সবার ছোটভাই সাকিব হাসান (২০) এইচএসসি পাশের পর পরবর্তী লেখাপড়ার জন্য কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির চেষ্টা করছেন।

মুঠোফোনে কথা হলে আব্দুর রউফের ছোটভাই সাকিব হাসান জানান, এইচএসসি পাশের পাশের পর লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় যান তার বড় ভাই। কিন্তু পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়নি ।

আব্দুর রউফ ছোট ভাইয়ের পড়ার খরচ জোগাতে ও পরিবারের অভাব মেটাতে বেছে নেন গাড়ি চালকের এর কাজ। এজন্য তিনি ঢাকার উত্তরায় থাকতেন।

সাকিব হাসান বলেন, ‘বাবার সামান্য আয়ই আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসা। এ কারণে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। অভাবের কারণের ভাইয়ের লেখাপড়া যেমন বন্ধ ছিল, তেমনি আমার  লেখাপড়াও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এমন দূর্দিনে আমার লেখাপড়ার জন্যই গাড়ি চালকের কাজ বেছে নিয়েছিলেন ভাই (রউফ)।

আব্দুর রউফ বলেছিলেন, ছোটভাই এইচএসসি পাশ করার পর দুইজনে একসঙ্গে লেখাপড়া শুরু করবে।
সাকিব বলেন, ‘কিন্তু ভাইয়ের  সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। তার মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়লো আমাদের পরিবার।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৮ জুলাই দুপুরে মুঠোফোনে ভাইয়ের সঙ্গে (রউফ) পরিবারের সকলে কথা হয়েছিল। তিনি পরিবারের সকলের খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন। সে সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি আমাকে সতর্ক করেছিলেন। এরপর সন্ধ্যায় নিজেই হারিয়ে গেলেন আন্দোলন বিরোধীদের গুলিতে।’

এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান সাকিব।

প্রতিবেশী হাফিজুল ইসলাম (৭৫) বলেন, ‘খুব ভালো ছেলে ছিল আব্দুর রউফ। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে অনেক দায়িত্ব পালন করতো সে। নিজের লেখাপড়ার পাশপাশি ভাইয়ের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তা করতো সব সময়। তার বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে একদিন হাল ধরবে সংসারের, সুখের মুখ দেখবে পরিবারটি। কিন্তু সে আশা পূরণ হলো না।’

অপর প্রতিবেশী সোহরাব আলী (৬০) জানান, পরদিন দুপুর ১১টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে আব্দুর রউফের দাফন সম্পন্ন হয়। তার বুকে ও হাতে গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল।

ছেলে হারানোর শোক সইতে পারছেন না আব্দুর রউফের বাবা-মা। তাদের এই শোকের ছায়া প্রতিবেশীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে।