জোটে ভোট কাটে রাজনীতির ঠোঁট
সরগরম রাজনীতি। কে কার সঙ্গে করবে জোট। কার সঙ্গে শুরু করবে নিজেদের সংসার। আগে থেকে প্রেমের কোন বালাই নেই, হাত ধরে টিএসসিতে পথচলা নেই । তবুও বিয়ের মতো গাটছড়া বাঁধার খবর পাই। কার সঙ্গে কার সংসার হচ্ছে, কার কাছ থেকে আসন ভাগিয়ে নেয়া হচ্ছে, এই নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম। বড় দলের সঙ্গে ছোট দলের রাজনীতি, আসন ভাগাভাগি, লেজুর বৃত্তি- দলের জন্য কখনো সুখকর বয়ে আনে না। ছোট দলও বড় হয় যখন একাকী চলে, পথ চলতে জানে। উপমহাদেশে আমরা অনেকগুলো ছোট দলকে বড় রাজনৈতিক দলে পরিণত হতে দেখেছি। পাকিস্তানের ইমরান খানকে সবাই চিনবেন। তেহেরিকে ইনসাফ ছোট দল থেকে পাকিস্তানে সরকারও গঠন করেছে। ভারতের আম আদমি পার্টির কথাও আমরা বলতে পারি, আন্না হাজারের অনশন থেকে যে দলটির গোড়াপত্তন হয়েছিল।
ছোট দল বড় দলের কাছ থেকে যখন সুবিধা নিতে থাকবে, সুবিধা নিয়ে এমপি হবে। মন্ত্রী পদও পাবে। সময় সময় আরো পদ ভাগিয়ে নেবে। এতেই নিজের দলের ভবিষ্যৎ হারাবে। কারণ নিজেদের মতো করে হেঁটে চলার যে শক্তি, সুপার পাওয়ার হওয়ার সঞ্জীবনী শক্তি অর্জনের পথে বড় অন্তরায়, বাধা। লেজুড়বৃত্তি আর আসন ভাগিয়ে নিয়ে সংসদে যাওয়া এক বিষয় নয়। পাকিস্তানের তেহরিকে ইনসাফের ইমরান খানের কথা বলছিলাম, তার নির্বাচনী বৈতরণী আবহাওয়ার কথাও আপনারা জানেন। জীবনে প্রথম নির্বাচনের পরে গণমাধ্যম তাকে নিয়ে নিউজ করেছিল, ইমরান খান বোল্ড আউট। হয়তো ক্রিকেটের মানুষ বলে এরকম শিরোনাম করেছিল পত্রিকাগুলো। রাজনীতিতে নতুন হলেও তিনি যে আসলে রাজনীতি বুঝেন না বা রাজনৈতিক ময়দানে তিনি অবদান রাখতে সক্ষম হবেন না-এমন নয়। একজন ইমরান খান একাকী পথ চলে, রাজনীতির মানদন্ডে নিজেকে পরীক্ষিত ও কার্যকর রাজনীতিকের উচ্চতায় আসীন করেছেন।
দল গোছানোর আগে লেজুরবৃত্তি শুরু করতে হয় না, নিজের দলের অবস্থান একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হয়। দলকে গোছানোর আগে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া অনেকটা 'কিং পার্টির' মতো আচরণ। কেউ কেউ হয়তো বলবেন, তারা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন। হ্যাঁ, ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা সবারই আছে। কিন্তু ছোট দল, নতুন দল করো সাথ মিশলে অস্তিত্ব থাকে না।
সেভাবে ভারতের আম আদমি পার্টিও। সে দলটিও সফলতা পেয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় মাত্রার যোগ হয়নি এখনো। বড় দুই দলেই সবকিছ যেনো লীন হয়ে আছে। নতুন কোনো চমক আসেনি। নিজেদের কার অবস্থান কী? তা অন্যরাও জানে। নতুন তুর্কিরা আশার পারদ জ্বেলেছিল। আমি এনসিপির কথা বলছি। নিজেদের বোঝাবার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে একাকী। দেশের সংসদীয় নির্বাচনে কোন আসন যদি তারা না-ও পায়, দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক পরিমণ্ডল গঠনে সক্ষম হবে। কিন্তু জোট কেন্দ্রিক আলোচনা সমালোচনার ভিত্তিতে তাদের ওজন কেমন? তারা কতটা শক্তিশালী? সবকিছু কিন্তু এখন জনগণের সামনে চলে এসেছে। বড় দলের সঙ্গে হয়তো এখন দর কষাকষি চলছে। ছোট দলকে কি দিয়ে বড় দল খুশি করবে-এটা সময়ের ব্যাপার। যদি একাকী নির্বাচনের মত সাহস তারা বুকে ধারণ করে -তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব কমবে বৈ বাড়বে না। এতে করে দল শক্তিশালী হবে। আর ভবিষ্যৎ ক্ষমতার রাজনীতির পালাবদলে দেশ পরিচালনার দায়িত্বও তারা পেতে পারে। আবেদন বাড়ে- এমন উদ্যোগ চায় তৃণমূল।
একটি ইসলামী রাজনৈতিক দলের কথা বলি, বরিশালের চরমোনাইয়ের মরহুম পীর সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. শুরু করেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ দলটির অনেক সমালোচনা আছে। তারা কেন একাকী পথ চলেছিল? অন্যরা সমালোচনা করে বলছে, তারা বড় দলকে সহযোগিতা করবার জন্য কোন জোটে গিয়ে নির্বাচন করেনি। সত্য মিথ্যা দলটির প্রধান কর্তারা হয়তো জানবেন। একটি ইসলামী দলের শীর্ষকর্তাদের ওপর আমি আস্থা রাখতে চাই। কেউ যদি জোট করে বড় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চান সেখানেও হয়তো কোন মঙ্গল থাকে। উম্মাহর মঙ্গল চিন্তাতে-ই তারা এসব করে থাকেন। হযরত মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, মুফতি ওয়াক্কাস রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মুফতি শহীদুল ইসলাম রহমতুল্লাহ আলাইহিসহ অনেকেই বড় দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে গিয়েছেন। আজকে যারা এসব জোট নিয়ে সমালোচনা করছেন, তারা আমাদের এই আকাবীর আলেমে দীনদের সমালোচনা কিন্তু করেন না। বরং তখনকার তারুণ্য বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে, বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা দিয়ে নির্বাচনী খরচ জুগিয়েছেন। আমি এ লেখায় একটি ইসলামপন্থী ব্যালট বাক্সের কথা বলবো না, তা নিয়ে আরেকদিন কথা বলবো ইনশাল্লাহ। তবে যে জোটে আপনার হাতে নেতৃত্ব থাকবে না, সে জোটে গিয়ে কোন লাভ নেই আপনার, আর এতে দেশের কী-বা মঙ্গল হবে? আমার জানা নেই।
জাতীয় নাগরিক পার্টি -এনসিপি নিজেদের পায়ের দিকে তাকাক। পা মজবুত হোক, সুদৃড়জ পায়ের গতি এনসিপিকে দেশের শীর্ষে তুলে নেবে। ভিন্ন আরো একটা শক্তির উত্থান হতে পারে তাদের মাধ্যমেই। কিন্তু মিশে গেলে দিশে হারাতে পারে। কষ্ট, শ্রম, সাধনা ছাড়া একটা দল পুনর্গঠন হতে পারে না। কিং পার্টির বদনাম গোছানো একটা চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ সময়ের পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ বিএনপি আপাতদৃষ্টিতে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করলেও এনসিপি চাপ প্রয়োগের বড় শক্তি হবে। তারা যদি ইসলাম ভাবাপন্ন মানুষের ভালোবাসা কুড়াতে পারে -একদিন হিসাব বদলে যেতে পারে। তবে এনসিপিকে এখনই আগুনের মুখোমুখি হলে চলবে না। অনেক পরীক্ষা বাকি। নির্বাচন নয় দল সুসংহত করাই বড় চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিত। আস্থার মিনার তৈরি করতে পারলে সফলতা পদচুম্বন করবেই।
লেখক : চেয়ারম্যান, শীলন বাংলাদেশ ও সম্পাদক, স্বাধীনতার বার্তা