বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ১১ ১৪৩২, ০৫ রজব ১৪৪৭

রাজনীতি

১৭ বছর পর দেশে তারেক রহমান, রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়

 প্রকাশিত: ১২:০৮, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

১৭ বছর পর দেশে তারেক রহমান, রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়

দীর্ঘ ১৭ বছর প্রবাস জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে জোরদার করা হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে তার চলাচলের সম্ভাব্য রুট, জনসভাস্থল ও বাসভবন পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে বহুস্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিকল্পনা। ঢাকা মহানগর পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নিরাপত্তা ছকের আওতায় মাঠে নেমেছে।

রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার

তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মোড় ও স্থাপনায় অতিরিক্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ পরিকল্পনার আওতায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু করে তার চলাচলের সম্ভাব্য রুটে বসানো হয়েছে একাধিক চেকপোস্ট। নিয়মিত তল্লাশি করা হচ্ছে সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

প্রধান মোড়গুলোতে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বেড়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বাড়ানো হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের নজরদারিও।

সূত্র জানায়, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট—এই তিন জোনে ভাগ করে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা পরিকল্পনা। রেড জোনে প্রবেশের জন্য থাকবে বিশেষ সিকিউরিটি কার্ড।

ইয়েলো জোনে প্রবেশ করতে পারবেন আলাদা কার্ডধারীরা। হোয়াইট জোনে সাধারণ মানুষের চলাচল উন্মুক্ত থাকবে।

সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ও চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সঙ্গে একাধিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিমানবন্দরে কড়াকড়ি 

তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ সময় কেবল যাত্রীরাই বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন।

বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট: 

সংবর্ধনা ও রুট

বিমানবন্দরে অবতরণের পর তারেক রহমান সড়কপথে পূর্বাচলের ৩শ ফিট এলাকায় যাবেন। বিমানবন্দর থেকে ৩শ ফিট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নিয়ে নেতাকর্মীরা তাকে সংবর্ধনা জানাবেন। সেখানে নির্মিত মঞ্চে তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

জনসভা শেষে তিনি সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় ফিরবেন।

গুলশান এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা 

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন, তারেক রহমানের বাসভবন ও অফিস দেওয়ালঘেঁষা হওয়ায় এলাকাটিকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই সেখানে বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর রুটজুড়ে প্রতিটি থানা এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।

গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বিশেষ এসকর্টের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

মাঠে সোয়াট টিম ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট 

তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে গুলশানে আসার পথে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। মাঠে রয়েছে ডিএমপির সোয়াট টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড। তার বাসা ও অফিস এলাকায় সুইপিং কার্যক্রম চালানো হবে। 

ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য

আইজিপি মো. বাহারুল আলম বলেন, তারেক রহমান একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পোশাক ও সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন।

ডিএমপির কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্য মাঠে থাকবে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে নিরাপত্তা তদারকি করা হবে।

এর আগে ওয়ান-ইলেভেনের পর ২০০৮ সালে কারামুক্ত হয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান। ২০১২ সালে তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পান। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করেন। তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান কয়েকবার দেশে এলেও তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেননি—এবারই প্রথমবারের মতো দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে তিনি স্বদেশে ফিরছেন।