রোববার ০৯ নভেম্বর ২০২৫, কার্তিক ২৫ ১৪৩২, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

মতামত

গণভোট দেশের জন্য অশুভ সংকেত : ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী

 প্রকাশিত: ১২:২২, ৯ নভেম্বর ২০২৫

গণভোট দেশের জন্য অশুভ সংকেত : ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী

জুলাই সনদ ও আসন্ন গণভোটকে কেন্দ্র করে যখন দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিতর্ক তীব্র আকার ধারণ করেছে, তখন এ বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও জৈনপুরী পীর ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী। তিনি গণভোটকে দেশের জন্য “অশুভ সংকেত” আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি নির্বাচনের সময় পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল এবং বাংলাদেশকে অরাজকতা ও গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র।

সম্প্রতি এক ধর্মীয় আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ড. আব্বাসী বলেন, “এই যে গণভোট, পিয়ার আগে পরে এখন তখন যা হচ্ছে—এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন বিলম্বিত করা। এর মাধ্যমে দেশে সামরিক প্রভাব ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।”

তিনি অভিযোগ করেন, আন্তর্জাতিক স্বার্থগোষ্ঠী বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সুযোগ খুঁজছে। “যারা দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে, তারাই আবার ওজার ভূমিকায় এসে বিষ নামানোর চেষ্টা করছে,” বলেন তিনি।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট টেনে আব্বাসী স্মরণ করিয়ে দেন ১৯৭৭ সালের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গণভোটের কথা। তিনি বলেন, “তখন সংবিধানে ‘মহান আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস’ রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে সংযোজন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেই নীতিকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা মুসলমানদের ঈমানের ওপর সরাসরি আঘাত।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি নতুন কোনো সনদ বা সংবিধানে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ধারা বাদ দেওয়া হয়, তবে কোনো মুসলমানের উচিত নয় তাতে অংশগ্রহণ করা। এতে ঈমানের প্রশ্ন জড়িত এবং এমন ভোট আল্লাহর কাছে কঠিন জবাবদিহির কারণ হতে পারে।”

সংবিধান সংশোধনের প্রসঙ্গে ড. আব্বাসী বলেন, “সংসদে যারা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, তারা সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। ফলে গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত বিষয়ও পরবর্তীতে বদলে দেওয়া সম্ভব। গণভোটের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।”

তিনি ইতিহাসের উদাহরণ টেনে বলেন, “প্রতিবার গণভোট বা সামরিক শাসনের পর দেশ রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড থেকে এরশাদের পতন পর্যন্ত ইতিহাসই তার সাক্ষ্য দেয়।”

ধর্মীয় আবেগময় কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের এখন মহান আল্লাহর ভয় করা উচিত। যারা সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বাদ দিতে চায়, তারা জাতির শত্রু। সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

শেষে তিনি আহ্বান জানান—দেশের মানুষ যেন “সত্যবাদী ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ায়, কারণ এই সময়টি আমাদের ঈমান, দেশ ও ভবিষ্যতের পরীক্ষা।”