পথশিশুরা সহজলভ্য মাদকে আসক্ত : ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ‘ড্যান্ডি’
ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে ছোট একটি ছাউনিতে বসবাস করা পথশিশুদের মধ্যে অধিকাংশ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন জীবনের ভাঙারী সংগ্রহের পর শিশুরা সন্ধ্যায় ফিরে আসে ছাউনিতে এবং পলিথিনের মাধ্যমে ‘ড্যান্ডি’ নামের নেশাজাত পদার্থ সেবন করে।
অল্প বয়স থেকেই মাদক খাওয়া শুরু করা আসাদ নামের এক শিশু জানায়, ‘ছোট বেলায় সিগারেট থেকে শুরু করে গাঁজা ও ফেন্সিডিল খাইছি। এখন ড্যান্ডি লইতে লইতে জীবনটা প্লাস্টিক হয়ে গেছে।’
ড্যান্ডি মূলত আঠার একটি প্রকার, যা ‘সলিউশন’ নামে পরিচিত। এতে টলুইন নামের একটি উপাদান থাকে, যা জুতা বা রিকশার টায়ারের কাজে ব্যবহার হয়। পলিথিনে রেখে নিশ্বাস নিলে এটি নেশা সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে এবং শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৫৮ শতাংশ পথশিশু মাদকে আসক্ত। এর মধ্যে ১৪ শতাংশ শিশু ১০ বছরের আগেই মাদক সেবন শুরু করে। সহজলভ্যতা ও কম মূল্যের কারণে পথশিশুর মধ্যে ৩১.৭ শতাংশ গাঁজা, ১৫.২ শতাংশ ড্যান্ডি সেবন করে। রাজধানীতে ড্যান্ডিতে আসক্ত পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার।
দেশে মোট মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ মিলিয়ন, যার ৮০ শতাংশ কিশোর ও যুবক। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী জেলা ও ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ফেনসিডিলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। রাজধানী ও চট্টগ্রামে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের চাহিদা সীমান্তবর্তী এলাকায় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
প্রতিবছর ২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস পালিত হয়। এ বছর দিবসের মূল বার্তা ছিল মাদক চোরাচালান ও অপব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষাপাঠ্য অন্তর্ভুক্তি।
গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বা নির্যাতিত শিশুরা মাদকের প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অভিভাবকরা খোলামেলা আলোচনা ও বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে সন্তানদের নজরদারি ও সঠিক বন্ধু নির্বাচনে সহায়তা করতে হবে।
মাদকাসক্ত শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পরিবার, সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি। এতে করে শিশুদের মাদকের ভয়াবহ প্রভাব থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।