মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৭ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

আমরা তো সেই জাতি

 প্রকাশিত: ১০:৪৮, ৭ আগস্ট ২০২১

আমরা তো সেই জাতি

আজ থেকে প্রায় ১৪ শত বছর পূর্বে মরুভূমি ঘেরা আরব্য বালিয়াড়ির মাঝে জন্মেছিল এক নতুন সভ্যতা। একটি উন্নত মানবতার সভ্যতা। সূর্যালোকে চিকচিক করা বালুকরাশি আরব্য বেদুঈনদের জীবনে চির কল্যাণ, মহা সাফল্যের সুরাহা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল মানবতার চির মুক্তির দিশারী। ১১ হিজরী, রবিউল আউয়াল মাস সুবেহ সাদিকের সময় মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে  আজানের ধ্বনি মদীনার প্রতিটি ইথারে ইথারে ধ্বনিত হচ্ছে। মসজিদে সাহাবায়ে কেরাম একত্রিত হয়েছে তবে কারও চেহারায় যেন সেই প্রফুল্লতা, সেই আনন্দ, সেই উল্লাস সফলতার সেই উচ্ছলতা নেই। সবার চেহারায় যেন চিন্তার ছোঁপ, কষ্টের দাগ, মলিনতার ছাপ। সবাই যেন কোনো কিছু হারানোর ভয়ে চিন্তিত।  ইমামতির জায়গায় সেই প্রিয় মানুষটিও আজ দাঁড়িয়ে নেই। ইমামতির জায়গায় আবু বকর রাঃ সালাত শুরু করলেন। 

এ সময় রাসূল সাঃ এর হৃদয় ব্যাকুল হয়ে উঠল তাঁর পরেও আল্লাহর বান্দারা কিভাবে মহাপ্রভুর উপাসনায় লিপ্ত থাকে তা দেখার জন্য।

তিনি তাঁর কামরার পর্দা তুলে দিতে বললেন। পর্দা উঠে যেতেই মসজিদে নববীতে সাহাবীদের নামাযের জামায়াত দৃশ্যমান হয়ে উঠল।

সাহাবীরা সাহাবীরা রাসূল সাঃ কে দেখে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠল। 
আনাস রাঃ বলেন_
        এমতবস্থায় সাহাবীদের উপক্রম ছিল যে, তারা সালাতে ভুল করে বসবে।

এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে সেই অন্তিম সময়েও মহানবীর মুখ-মণ্ডলের রোগ-ক্লিষ্টতা যেন দূর হয়ে গেল। আনন্দ-উৎসাহে দীপ্ত হয়ে উঠল তাঁর বদনমণ্ডল। ঠোঁটে দেখা দিল তাঁর হাসির রেখা।

সাহাবীদের দিকে চেয়ে শেষবার যেন হাসলেন মহানবী (সা)। এবং হাত দিয়ে ইশারা একরলেন তোমরা সালাতকে পরিপূর্ণ করো। এই বলে তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন এবং পর্দা ছেড়ে দিলেন।

রাত পেরিয়ে সকাল হয়েছে। রাসূল সাঃ আয়েশা রাঃ কে তার মাথায় সাত বালতি পানি ঢালার নির্দেশ দিলেন এই জন্য যে তিনি তার সাহাবীদের সামনে কিছু কথা বলে চান। তার জীবনের শেষ কথা সাহাবীদের জন্য তার জীবনের শেষ নসীহাত। 

রাসূল সাঃ তার সাহাবীদের দিকে শেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন, 

মহানবীর পাশে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা)। যন্ত্রণা-পীড়িত মহানবীর একটা অভিপ্রায় তিনি বুঝলেন। উম্মুল মুমিনীন একটা মেছওয়াক চিবিয়ে মহানবীর হাতে দিলেন। তা নিয়ে মহানবী (সা) ধীরে দাঁতে বুলালেন। নিকটে পানির একটা পাত্র ছিল। পাত্র থেকে হাতে করে পানি নিয়ে মুখে দিতে দিতে তিনি বললেন,

“মৃত্যুর অনেক কষ্ট। লা’ ইলাহা ইল্লাল্লাহ। হে আল্লাহ আমাকে মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করার শক্তি দান কর।”

দিনের তখন তৃতীয় প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে। মহানবী (সা) বার বার অচেতন হয়ে পড়ছেন। প্রতিবার চেতনা ফিরে আসার পরই তিনি বলছেন,

“হে আল্লাহ, হে আমার পরম বন্ধু, হে আমার পরম সুহৃদ তোমার সঙ্গে তোমার সন্ধানে।”

মহানবীর চির বিদায়ের অন্তিম মুহূর্ত।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা) মহানবীর মাথা কোলে নিয়ে বসে আছেন। তখন শেষবারের মত মহানবী (সা) চোখ খুললেন। উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলেন,

‘নামাজ, নামাজ সাবধান! দাস-দাসীদের প্রতি সাবধান!’ এবং মহানবীর কণ্ঠে উচ্চারিত হলো, ‘হে আল্লাহ, হে আমার পরম সুহৃদ!’

এটাই ছিল রাহমাতুললিল আলামিনের শেষ নিঃশ্বাসের শেষ কথা।

মহাপ্রভুর উদ্দেশ্যে চির বিদায় ঘটল জগতের শেষ নবী, আশরাফুল আম্বিয়া, রাহমাতুললিল আলামিন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: