চিলির নির্বাচনে ডানপন্থীদের প্রভাব বাড়ছে
চিলির জনগণ রোববার নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন। দেশটিতে বাড়তে থাকা অপরাধ ও অভিবাসন সমস্যা নির্বাচনে প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে।
সান্তিয়াগো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গত এক দশকে হত্যাকাণ্ড, অপহরণ ও চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ায় লাতিন আমেরিকার অন্যতম নিরাপদ দেশ চিলিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
অনেকে ‘কঠোর হাতে’ পরিস্থিতি মোকাবিলার দাবিও জানাচ্ছেন।
জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৫১ বছর বয়সী কমিউনিস্ট নেতা জেনেট জারা প্রথম দফায় এগিয়ে আছেন।
তবে, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ডানপন্থী নেতা হোসে আন্তোনিও কাস্তের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
জ্যাকুলিন রুজ নামের কাস্তের এক সমর্থক বলেন, ‘আমাদের এমন একজন দরকার, যিনি শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবেন।’
২০১৭ ও ২০২১ সালে পরাজয়ের পরও, নয় সন্তানের জনক কাস্ত এবারের নির্বাচন নিয়ে বেশ আশাবাদী।
তিনি জনতাকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘তৃতীয়বারে সৌভাগ্য আসবে।’
বিদায়ী মধ্য-বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিচ (যিনি পরপর দ্বিতীয় মেয়াদে লড়তে পারবেন না) অপরাধ দমনে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তার অধীনে ২০২২ সাল থেকে হত্যাকাণ্ডের হার ১০ শতাংশ কমে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ৬ জনে দাঁড়িয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে সামান্য বেশি।
তবু চিলির জনগণ অপরাধীদের ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় আতঙ্কিত। তারা এর জন্য ভেনেজুয়েলা ও অন্যান্য লাতিন দেশ থেকে আসা গ্যাংগুলোকে দায়ী করছে।
‘চিলির ট্রাম্প’ নামে পরিচিত কাস্ত অবৈধ অভিবাসন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এর জন্য উত্তরের দরিদ্র দেশগুলো থেকে আগতদের প্রধান প্রবেশপথ বলিভিয়ার সঙ্গে চিলির মরুভূমি সীমান্তে দেয়াল, বেড়া ও পরিখা তৈরি করার অঙ্গীকার করেছেন।
ভোটের আগে তিনি ৩ লাখ ৩৭ হাজার অনিবন্ধিত অভিবাসীকে আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, ‘নিজে থেকে দেশ ছাড়ো, না হলে সব হারাবে।’
এদিকে সাবেক বিতর্কিত ইউটিউবার জোহানেস কাইজার কাস্তেও চেয়েও বেশি ডানপন্থী।
তিনিও শেষ সময়ে ভোটে এগিয়ে আসছেন। ৪৯ বছর বয়সী এ লিবারটারিয়ান এমপি অপরাধ, কমিউনিজম ও পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে সরাসরি প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তবে, ডানপন্থীদের দৌড়ে সাবেক মন্ত্রী ইভেলিন ম্যাথেই (৭২) ভোটের মাঠে তেমন প্রভাব ফেলতে পারছেন না।
আবার এই নির্বাচনকে দক্ষিণ আমেরিকার বামপন্থীদের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ তারা ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনা ও বলিভিয়ায় ক্ষমতা হারিয়েছে।
আগামী বছর কলম্বিয়া ও ব্রাজিলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিক পলিসি অ্যান্ড রিসার্চ-এর সিনিয়র ফেলো গিয়োম লং বলেন, ডানপন্থীদের জয় ‘লাতিন আমেরিকার রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘চিলি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেবে। এমনকি ট্রাম্পের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ জোট গড়তে পারে।’
জারা এখন কঠিন লড়াইয়ে রয়েছে। কারণ, প্রবল কমিউনিস্টবিরোধী মনোভাব ও বিদায়ী বোরিক প্রশাসনের প্রতি হতাশা তাকে চাপে ফেলেছে।
ছাত্রনেতা হিসেবে বোরিক ২০২১ সালে কাস্তকে হারিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কল্যাণরাষ্ট্র গড়ার। ২০১৯ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর জনগণও তাকে সমর্থন দিয়েছিল।
কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর নতুন প্রগতিশীল সংবিধান জনগণ ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান করায়, তার প্রেসিডেন্সি দুর্বল হয়ে পড়ে।