বেক্সিমকো টেক্সটাইল সচল করছে রিভাইভাল
অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেক্সিমকো গ্রুপের ‘বেক্সিমকো টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল ডিভিশন’ (বেক্সটেক্স) লিজ নিয়ে পুনরায় চালু করতে যাচ্ছে জাপান-বাংলাদেশি ইথিক্যাল ফ্যাশন ও সাসটেইনেবিলিটি ভেঞ্চার রিভাইভাল গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড এবং রিভাইভাল প্রজেক্টস লিমিটেড।
এর ফলে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক আবার কাজে ফেরার সুযোগ পাবেন জানিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা বেঞ্চমার্ক পিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এ বিষয়টিককে “সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।”
এ প্রকল্পে অর্থায়নে থাকছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ইকোমিলি, যা প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। শুরুতে ২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে, ক্রমান্বয়ে তা ১০ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এ বিষয়ে চলতি মাসেই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন। গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থ্যানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হন।
এর পর থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোতে অস্থিরতা শুরু হয়। শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে বন্ধ রাখা হয় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬ কারখানা।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ৩২টি কারখানার নাম ঘোষণা থাকলেও বাস্তবে ১৬টির অস্তিত্ব পায় সরকারের তদন্ত কমিটি।
সরকারের তরফে বলা হয়, আওয়ামী লীগের আমলে অস্তিত্ব না থাকা ওই ১৬টি কোম্পানির নামে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। আর সব মিলিয়ে ৩২ কোম্পানির নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হয় ২৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকার ঋণ।
এসব ঋণ খেলাপী হয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকেরই ২৩ হাজার কোটি টাকা।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ‘অস্তিত্ব থাকা’ ১৬টির মধ্যে ১১টি বস্ত্র ও পোশাক খাতের কোম্পানি, যেগুলো লে-অফ ছিল গত জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর সেগুলো আর খোলা হয়নি।
সরকারের উদ্যোগে জাপানি কোম্পানি রিভাইভাল গত অগাস্টে বেক্সিমকো টেক্সটাইল লিজ নিয়ে সচল করতে রাজি হয়। বেক্সিমকো গ্রুপও সম্মতি জানিয়ে চিঠি দেয়।
রোববার বেঞ্চমার্ক পিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “একসময় দেশের টেক্সটাইল শিল্পের অন্যতম চালিকাশক্তি ছিল বেক্সিমকো টেক্সটাইল। তিন দশক সফলভাবে চলার পর ঋণসঙ্কটে পড়ে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়।
“হঠাৎ বন্ধের কারণে হাজারো শ্রমিক চাকরি হারায়, কারখানা-নির্ভর ছোট ব্যবসা ধসে পড়ে এবং আশেপাশের এলাকার অর্থনীতি অস্থির হয়ে পড়ে। রিভাইভালের এই উদ্যোগ সেই বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন পথ তৈরি করছে; কারখানা আবার চালু হবে এবং কর্মীরা ফিরে পাবেন তাদের জীবিকার নিরাপত্তা।”
রিভাইভালের বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তারা কারখানাটি পূর্ণাঙ্গভাবে পুনরায় চালু করবে, পুরোনো ব্যবস্থাপনা দলকে ফিরিয়ে আনবে এবং আগের সব কর্মীকে পুনর্বহাল করবে। কারখানার কার্যক্রমের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে জাপান থেকে ‘অভিজ্ঞ’ শীর্ষ কর্মকর্তাদের আনা হবে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিকমানের জবাবদিহির জন্য একটি আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম নিয়োগ করা হবে।