সোমবার ০৫ মে ২০২৫, বৈশাখ ২২ ১৪৩২, ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মুসলিমদের লক্ষ্য করে ভারতে ঘৃণার ঢেউ, ১৪ দিনে ৬৪টি ঘটনা

 প্রকাশিত: ২২:১১, ৪ মে ২০২৫

মুসলিমদের লক্ষ্য করে ভারতে ঘৃণার ঢেউ, ১৪ দিনে ৬৪টি ঘটনা

কাশ্মীর হামলার ঘটনার পরবর্তী ১৪ দিনে (২২ এপ্রিল থেকে ২ মে) ভারতজুড়ে অন্তত ৬৪টি ঘৃণামূলক বক্তব্যের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে ইন্ডিয়া হেট ল্যাব (আইএইচএল)। এসব বক্তব্যের বেশিরভাগই উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে এসেছে এবং সেগুলো মূলত মুসলিম জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করেই দেওয়া হয়েছে।

আইএইচএলের প্রতিবেদনে এসব বক্তব্যকে একটি “সমন্বিত দেশব্যাপী প্রচারণা” হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, যার লক্ষ্য হলো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেওয়া এবং তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানানো।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল, অন্তঃরাষ্ট্রীয় হিন্দু পরিষদ (এএইচপি), রাষ্ট্রীয় বজরং দল (আরবিডি), হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি, সকল হিন্দু সমাজ, হিন্দু রাষ্ট্র সেনা এবং হিন্দু রাষ্ট্র দলসহ হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলোর নেতারা এসব বক্তব্য দিয়েছেন।

ঘৃণামূলক বক্তব্যগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ১৭টি ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। এরপর রয়েছে উত্তর প্রদেশে ১৩টি, উত্তরাখণ্ডে ৬টি, হরিয়ানায় ৬টি, রাজস্থানে ৫টি, মধ্যপ্রদেশে ৫টি, হিমাচল প্রদেশে ৫টি, বিহারে ৪টি এবং ছত্তিশগড়ে ২টি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব বক্তব্যে মুসলিমদের ‘সবুজ সাপ’, ‘কীড়ে’ (পোকামাকড়) ও ‘পাগল কুকুর’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। অনেক বক্তা সরাসরি সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছেন এবং মুসলমানদের অঞ্চল থেকে বিতাড়নের হুমকিও দিয়েছেন। একইসঙ্গে হিন্দুদের অস্ত্র ধারণ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইএইচএলের মতে, এসব বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিমদের ওপর ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ ও সহিংসতাও বেড়ে গেছে। হরিয়ানায় মুসলিম বিক্রেতাদের ওপর হামলা ও অগ্নিসংযোগ, কাশ্মীরি শাল বিক্রেতাদের ওপর আক্রমণ এবং উত্তরাখণ্ডে বিজেপি নেতার হুমকির মতো ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। উত্তর প্রদেশে এক মুসলিম ব্যক্তির ওপর কুড়াল দিয়ে নৃশংস হামলার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে হামলাকারী বলে, “ছাব্বিশ জন নিহত হয়েছে, তোমাদের ছাব্বিশ জনও মরবে।”

আরও উদ্বেগজনক হলো, এসব বক্তব্যের বেশিরভাগই প্রকাশ্যে সমাবেশে দেওয়া হয়েছে এবং তা লাইভ-স্ট্রিম বা রেকর্ড করে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা লাখ লাখ দর্শকের কাছে পৌঁছে গেছে।

এই প্রতিবেদন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, ঘৃণামূলক বক্তব্য ও প্রচারণা যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠছে।