ডিজিটাল রূপান্তর হলো রাষ্ট্রের ভিত্তি পুনর্গঠন : তৈয়্যব
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ডিজিটাল রূপান্তর মানে কেবল অ্যাপ তৈরি করা নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের ভিত্তি পুনর্গঠনের একটি প্রক্রিয়া।
আজ রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডেটা গভর্নেন্সের মাধ্যমে আস্থা ও স্থায়িত্ব গড়ে তোলা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় ইনস্টিটিউট অফ কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশের ডিজিটাল রূপান্তর খণ্ডিত প্রকল্প বা অ্যাপ-ভিত্তিক উদ্যোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী ও মৌলিক রাষ্ট্রীয় রূপান্তর, যার মূলে রয়েছে ডেটা গভর্নেন্স, সাইবার নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশে অনেক ডিজিটাল সিস্টেম বিদ্যমান থাকলেও, আন্তঃকার্যক্ষমতার অভাব একটি বড় বাধা।
তিনি আরও বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
বিশেষ সহকারী বলেন, সরকার ইতোমধ্যে তিনটি আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছে— সাইবার নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ও জাতীয় তথ্য শাসন, যা ভবিষ্যতের ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামোর (ডিপিআই) প্রধান স্তম্ভ হিসেবে কাজ করবে।
টেলিযোগাযোগ ও ডিভাইস অ্যাক্সেসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল পরিষেবা তখনই কার্যকর হবে, যখন নাগরিকরা নিরাপদ ডিভাইস ও সমান নেটওয়ার্ক কভারেজের অ্যাক্সেস পাবে, তারা শহর বা গ্রামাঞ্চলে, যেখানেই বাস করুক না কেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ভবিষ্যতে প্রতিটি নাগরিকের একটি ডিজিটাল ডেটা ওয়ালেট থাকবে, যেখানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তথ্য নিরাপদে সংরক্ষণ করা হবে এবং নাগরিকের সম্মতিতে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডেটা ব্যবহার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আইনি ও অবকাঠামোগত ভিত্তি ছাড়া ডিজিটাল রূপান্তর শুধুমাত্র ভুল। সরকার সেই ভুল পথ থেকে সরে এসেছে এবং সঠিক ভিত্তি তৈরির কাজ শুরু করেছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, কার্যকর ডেটা গভর্নেন্স কেবল নীতি প্রণয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর জন্য শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আন্তঃক্ষেত্র সমন্বয় ও একটি স্পষ্ট জবাবদিহিতা কাঠামো প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই ডিজিটাল পরিষেবার পরিধি প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে জনসাধারণের আস্থা তৈরি এবং টেকসই ডিজিটাল রূপান্তর অর্জনের জন্য দায়িত্বশীল ডেটা ব্যবহার, সুরক্ষা ও সম্মতি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল যুগে ডেটা সুরক্ষা, ব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বশীল ব্যবহার ছিল সম্মেলনে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু।
সম্মেলনে ডেটা সুরক্ষা নীতির ব্যবহারিক প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে বাংলাদেশের ডেটা ব্যবস্থাপনা অনুশীলনের তুলনা ও ডেটা গভর্নেন্সে পেশাদার হিসাব রক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে তিনটি পৃথক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ অ্যাকাউন্ট্যান্টস (আইএফএসি) এর সভাপতি জিন বোকোট, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জাঁ পেসমে, সরকারি নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, পেশাদার হিসাবরক্ষক এবং আইন ও প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা বলেন, সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পেশাদার সংস্থা ও বেসরকারি খাত একসঙ্গে কাজ করলে, একটি শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য ডেটা গভর্নেন্স সিস্টেম তৈরি করা যেতে পারে, যা আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং দেশের টেকসই উন্নয়নকে সমর্থন করবে।