আরেকটু হলেই চীনা স্যাটেলাইটের সঙ্গে ধাক্কা খেত স্টারলিংক
চীনা কোম্পানির নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পথে প্রায় ধাক্কা খেতে যাচ্ছিল স্টারলিংকের বিভিন্ন স্যাটেলাইট। তবে শেষ মুহূর্তে এই সংঘর্ষ এড়ানো গিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইলন মাস্কের মহাকাশ কোম্পানি স্পেসএক্স।
স্টারলিংক স্যাটেলাইটের ২০০ মিটারের মধ্যে এসে পড়েছিল ‘সিএএস স্পেস’ নামের চীনা কোম্পানির উৎক্ষেপিত এসব স্যাটেলাইট। এমন পরিস্থিতিতে সংঘর্ষ ঘটলে তা ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ পত্রিকা ইন্ডিপেনডেন্ট।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, পৃথিবীর আশপাশে স্যাটেলাইটের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়া এবং এসব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয় না থাকার কারণে স্যাটেলাইট সংঘর্ষের ঘটনা ক্রমেই সাধারণ বিষয় হয়ে উঠছে।
স্পেসএক্সের ‘স্টারলিংক ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল নিকলস বলেছেন, সম্প্রতি চীনা কোম্পানির উৎক্ষেপণ স্যাটেলাইটগুলো তাদের স্যাটেলাইটের খুব কাছে চলে এসেছিল। সমন্বয়ের অভাবে নিজেদের এসব স্যাটেলাইট নতুন উৎক্ষেপিত স্যাটেলাইটের পথ থেকে সরাতে পারেনি স্পেসএক্স।
“অনেক সময় স্যাটেলাইট কোম্পানিগুলো নিজেদের স্যাটেলাইটের সঠিক অবস্থান অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করে না। ফলে মহাকাশে থাকা বিভিন্ন স্যাটেলাইট একে অপরের খুব কাছে চলে আসে এবং সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি হয়। আমরা সম্প্রতি এমন এক ঘটনা দেখেছি, যেখানে নতুন উৎক্ষেপিত স্যাটেলাইট ও স্টারলিংক স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে ৫৬০ কিমি উচ্চতায় একে অপরের কেবল ২০০ মিটার দূরে ছিল।
“মহাকাশে স্যাটেলাইট পরিচালানোর ঝুঁকির মূল কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, যার পরিবর্তন হওয়া জরুরি।”
এসব স্যাটেলাইটের মধ্যে ‘প্রায় সংঘর্ষের’ ঘটনার দায় স্বীকার করেনি সিএএস স্পেস। তবে নিকলসের মতামতের সঙ্গে একমত হয়ে মহাকাশে স্যাটেলাইট পরিচালনায় আরও সমন্বয় ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
চীনা কোম্পানিটি লিখেছে, “যদি সত্যিই এ ঘটনা ঘটে থাকে তবে তা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রায় ৪৮ বা দুই দিন পরে ঘটেছে, যার অনেক আগেই তাদের উৎক্ষেপণ মিশন শেষ হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঝুঁকি এড়াতে অন্যান্য স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে সমন্বয় করব আমরা। এজন্য দুই দেশের নতুন মহাকাশ কোম্পানিগুলোর মধ্যে পুনরায় সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।”
নিকলস বলছেন, “সিএএস স্পেসের দ্রুত সাড়া দেওয়ার বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন উৎক্ষেপণে পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে আগ্রহী। সব স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা খুব জরুরি।”
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, স্যাটেলাইটের সংঘর্ষ হলে কেবল সরাসরি ক্ষতিই হয় না, বরং মহাকাশে বিপজ্জনক ধ্বংসাবশেষও ছড়িয়ে পড়ে। ‘কেসলার সিনড্রোম’ নামের ভয়াবহ ঝুঁকির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তারা।
এ পরিস্থিতিতে তুলনামূলক ছোট এক সংঘর্ষ থেকে তৈরি ধ্বংসাবশেষ পরপর আরও স্যাটেলাইটের সঙ্গে ধাক্কা খেতে থাকে। এতে এক ধরনের চেইন তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথকে এত বেশি ধ্বংসাবশেষে ভরিয়ে দিতে পারে যে ভবিষ্যতে সেখানে নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করাই অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।