মা-মেয়ে খুন: স্বামীর পর গৃহকর্মী আয়েশারও স্বীকারোক্তি
ঢাকার মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়েকে হত্যা মামলায় স্বামী রাব্বির পর এবার মূল আসামি গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় ফুফু শাশুড়ির বাড়ি থেকে আয়েশা ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরদিন রাব্বির তিন দিন এবং আয়েশার ৬ দিনের রিমান্ড দেয় আদালত। তিন দিনের রিমান্ড শেষে রোববার রাব্বি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
৬ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার আয়েশাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সহিদুল ওসমান মাসুম। আসামি জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করা হয়। পরে আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান।
গত সোমবার ঢাকার মোহাম্মদপুরের এক বাসায় ৪৮ বছর বয়সী লায়লা আফরোজ এবং তার ১৫ বছর বয়সী মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে গলা কেটে খুন করা হয়।
ওই বাসায় কাজ করতেন আয়েশা। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ঘটনার আগে-পরে কেবল তাকেই ওই বাসায় ঢুকতে এবং বের হতে দেখা যায়।
হত্যাকাণ্ডের দিন সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন লায়লার স্বামী আজিজুল ইসলাম। তার দুই দিন পর আয়েশা ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের খবর দেয় পুলিশ।
মামলার বাদী আজিজুল ইসলাম উত্তরার সানবিমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে ওই বাসায় প্রায় ১৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে।
প্রতিদিনের মতো সোমবার সকাল ৭টার দিকে স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আজিজুল। স্কুলে পরীক্ষা চলমান থাকায় বাসায় ফেরেন তাড়াতাড়ি।
বেলা ১১টার দিকে ফিরে বাসার এসেই তিনি স্ত্রী-কন্যার লাশ দেখতে পান। পরে তার চিৎকারে আশপাশের বাসিন্দারা বেরিয়ে আসেন, খবর দেওয়া হয় পুলিশে।
ভবনের একাধিক সিসিটিভি ভিডিও বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলে, সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরখা পরে ওই বাসায় ঢোকেন আনুমানিক ২০ বছর বয়সী আয়েশা। আর ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুলড্রেস পরে নির্বিঘ্নে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ওই স্কুলড্রেসটি ছিল খুন হওয়া নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসার।
ঘটনার পর দারোয়ান খালেককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তিনি পুলিশকে বলেছেন, চার দিন আগে বাসায় কাজের জন্য আসায় তরুণীকে ওই ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ওই তরুণী তার পূর্বপরিচিত নন।
ভিডিও ও দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, সোমবার সকাল ৭টার পর আয়েশা যখন আসে, স্বাভাবিকভাবেই বাসার নিরাপত্তাকর্মী খালেক তাকে ভেতরে যেতে দেন। কিন্তু বের হওয়ার সময় স্কুলড্রেস পরে যাওয়ার সময় তার মুখে মাস্ক থাকায় গেটে দায়িত্বরত থাকা খালেক চিনতে পারেননি।
জোড়া খুনের এ ঘটনায় আগামী ১৩ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।