হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের মা-বাবা গ্রেপ্তার
ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরীফ ওসমান বিন হাদির উপর হামলার ঘটনায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এছাড়া নরসিংদীর তরুয়ার বিল থেকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত অস্ত্রসহ দুটি বিদেশি পিস্তল এবং ফয়সাল নামের এক যুবককে আটকের কথাও জানিয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার রাতে র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এদিন ভোরে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ হাউজিং এলাকা থেকে ফয়সাল করিমের বাবা হুমায়ুন কবির (৭০) ও মা হাসি বেগমকে (৬০) গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত অস্ত্র কীভাবে নরসিংদীতে গেল, সে বিষয়ে র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয়নি।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের বরাতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার হওয়া এই দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে ফয়সাল করিম তৃতীয়। ফয়সাল ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় তার বোন জেসমিন আক্তারের ৭তম তলা বাসায় প্রায়ই যাতায়াত করতেন।
“ঘটনার দিন (১২ ডিসেম্বর) রাতে জেসমিন আক্তারের বাসায় একটি ব্যাগ নিয়ে উঠে ফয়সাল। পরে ওই বাসার চিপা দিয়ে কালো ব্যাগটি ফেলে দেয়, পরে আবার ভাগনেকেদিয়ে ব্যাগটি নিয়ে আসায়।”
র্যাব বলছে, “ফয়সাল তার নিজের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোনের একটি ওই বাসার ছাদ থেকে ফেলে দেয় এবং অন্যটি তার মা হাসি বেগমকে দেয়। সেখানে বাবা-মার সাথে দেখা করে। অবস্থান নিরাপদজনক মনে না হওয়ায় আগারগাঁও থেকে মিরপুর, পরে শাহজাদপুরে চাচাতো ভাই আরিফের বাসায় যায়।
“ফয়সালের ব্যাগ নিয়ে তার বাবা হুমায়ুন কবির একটি সিএনজি ভাড়া করে দেয় এবং সঙ্গে কিছু টাকাও দেয়। পরবর্তী সময়ে ফয়সালের বাবা-মা তার ছোট ছেলে হাসান মাহমুদ বাবলু ওরফে রাজজের কেরাণীগঞ্জের বাসায় আসে।”
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকার পশ্চিম আগারগাঁওয়ে ফয়সাল করিমের বোনের বাসার পাশ থেকে ১১ রাউন্ড গুলি ভরা দুটো ম্যাগজিন ও একটি চাকু উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র্যাব।
এদিন র্যাব ২ এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ফয়সাল ও তার এক সহযোগী মোটরসাইকেলে করে এই বাসা থেকে বের হয়ে যান। ভবনের সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ওই দিন বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে ফয়সাল ও তার সহযোগী এবং তার মা ও ভাগিনাকে দুই ভবনের মাঝের ফাঁকা স্থান হতে কিছু বের করতে দেখা যায়।
“বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে ফয়সাল ও তার সহযোগী একটি সিএনজি অটোরিক্সায় সেই এলাকা ত্যাগ করে চলে যান। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দুই ভবনের মাঝের ফাঁকা স্থান থেকে দুটি ম্যাগাজিন, ১১ রাউন্ড গুলি ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।”
ফয়সালের বোনের বাসা থেকে ১৫টি চেক বই, ছয়টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৮টি চেকের পাতা, দুটি মোবাইল ফোন ও একটি ট্যাব উদ্ধারের কথাও জানিয়েছে র্যাব।
হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতি নিয়ে রোববার রাতে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলাটি করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।
এ মামলায় এর আগে ফয়সালের স্ত্রী, বান্ধবী, শ্যালক, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে একজন, সহযোগী কবীর ও তাকে পাচারে সহায়তার অভিযোগে সীমান্ত থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
গত শুক্রবার গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি হামলার শিকার হন।
চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে হাদির মাথায়।
গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা ‘অত্যন্ত আশঙ্কাজনক’ বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে।