হাদির হামলাকারীরা সীমান্ত পেরিয়েছে কি-না, নিশ্চিত নয় বিজিবি
ঢাকায় শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারীরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে গেছে কি-না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
সোমবার সকালে ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন।
চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে হাদির মাথায়।
গুরুতর অবস্থায় হাদিকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে এক দফা অস্ত্রোপচারের পর তাকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখানে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, হাদির অবস্থা এখনো ‘আশঙ্কাজনক’।
হাদিকে গুলির ঘটনায় রোববার রাতে যে মামলা হয়েছে, তাতে আসামি হিসেবে কেবল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশীদ সোমবার সকালে বলেন, হাদির পরিবারের সম্মতি নিয়ে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলাটি করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। তিনি আসামি হিসেবে ফয়সালের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাত আসামিদের কথা বলেছেন।
ইতোমধ্যে ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সামিয়া ও শ্যালক শিপু এবং বান্ধবী মারিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এদিকে হাদিকে গুলিবর্ষণকারীদের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারির মধ্যে শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকা থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের গ্রেপ্তারের খবরের মধ্যেই ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সোমবার সকালে কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “ঢাকায় শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে গেছে কি-না তা পুরোপুরি এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
“এক্ষেত্রে মানবপাচারকারী ফিলিপ স্নালকে আটকের জন্য বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশ, বিজিবি ও সোর্সের তালাকায় এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তার নাম বারবার আসছে।”
বিজিবির এ কর্মকর্তা বলেন, “হামলার ঘটনার রাতে শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন শনিবার পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়।
“ঢাকা থেকে আসা পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়। দুইটি স্থানে এক সঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশন প্ল্যান করে।
“নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা থেকে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে অপারেশন পরিচালিত হয়। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি।”
তবে ফিলিপের স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, “তাদের (ফিলিপ) পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার সকালে মানবপাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”