জকসু নির্বাচন: ‘ভুয়া’ অভিযোগকারীর কথায় ৬ প্রার্থী বাদ
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনে ছয় প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তবে কাগজকলমে অভিযোগকারী হিসেবে যার নাম এসেছে, সেই পাভেল আনাম বলছেন—তিনি এমন কোনো অভিযোগই করেননি।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী পাভেল নিজেও নির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী ছিলেন, ডোপ টেস্টে অংশগ্রহণ না করায় তার নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ে।
জানতে চাইলে পাভেল আনাম রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ নির্বাচন কমিশনের একজন স্যার আমাকে ফোন করে বিষয়টি অবগত করেন। তখনই আমি জানতে পারি, আমার স্বাক্ষর নকল করে কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
“ক্যাম্পাসের কাছাকাছি না থাকায় আমি একটি লিখিত আবেদন স্যারের ফোনে পাঠিয়ে জানাই—এটি আমার কাজ নয়। কেউ আমার নাম-পরিচয় ও নকল স্বাক্ষর ব্যবহার করেছে। এই স্বাক্ষরের সঙ্গে আমার স্বাক্ষরের কোনো মিল নেই। আমি চাই, তাদের প্রার্থীতা ফিরিয়ে দেওয়া হোক এবং নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিক।”
নির্বাচন কমিশনে পাঠানো অভিযোগপত্রে দেখা যায়, ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে জকসু নির্বাচন–২০২৫-এর গঠনতন্ত্রের ৪(২)(খ) বিধি অনুযায়ী ছয়জনকে প্রার্থিতা থেকে বিরত রাখতে আবেদন করা হয়েছে।
ওই বিধিতে বলা আছে, “উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাংলাদেশে বলবৎ কোনো আইন অনুসারে নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠনের সদস্য।”
গত বৃহস্পতিবার ১৫৬ জনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হলে সেখানে ওই ছয়জনের নাম বাদ পড়ে। তারপরই কথিত অভিযোগের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
বাদ পড়া প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন—
• ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের দুই কার্যনির্বাহী সদস্য প্রার্থী—আরিফুল ইসলাম ও মনিরুজ্জামান।
• ছাত্রশক্তি সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী শাহিন মিয়া।
• স্বতন্ত্র হিসেবে ভিপি পদপ্রার্থী অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী চন্দন কুমার দাস, জিএস পদে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মাবুদা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর মাহমিদ শিহাব।
প্রার্থিতা বাতিল হওয়া ছাত্রদল সমর্থিত নির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী আরিফুল ইসলাম ফেইসবুকে লিখেছেন, “আমিসহ আমাদের কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিল করতে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী পাভেল আনাম। একজন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কীভাবে এতজনকে চেনে ও জানে—এটি হাস্যকর। “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করায় আমরা তার বিরুদ্ধে মানহানি ও হয়রানিমূলক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসান বলেন, “তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। সুনির্দিষ্ট কারণে প্রার্থিতা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।
“অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হবে, আর অভিযোগ প্রমাণিত না হলে পুনরায় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ডোপ টেস্ট ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ—এই দুই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কিছু প্রার্থীর নাম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।”
তবে ঠিক কতজন প্রার্থীর এ সিদ্ধান্তের আওতায় পড়েছেন, সেই সংখ্যা তিনি বলতে চাননি।
এদিকে কথিত অভিযোগকারী পাভেল আনাম বলছেন, যারা তার স্বাক্ষর ‘নকল’ করেছে, সিসিটিভি ভিডিও দেখে তাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন।
স্বাক্ষর নকলের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসান রোববার বলেন, “আমি এই ঘটনা তোমার মুখেই কেবল শোনলাম। আগামীকাল আমরা এই বিষয়টি দেখব।”
কোন পদে কত প্রার্থী
নির্বাচন কমিশন সাত নির্বাহী সদস্যসহ মোট ২১ পদে ১৫৬ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে।
সেই অনুযায়ী, ভিপি পদে প্রার্থী হচ্ছেন ১৩ জন, জিএস পদে ৯ জন এবং এজিএস পদে ৭ জন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক পদে ৪ জন, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৫ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ৫ জন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে ৪ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ৮ জন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ৭ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ৭ জন, পরিবহন সম্পাদক পদে ৪ জন, সমাজসেবা ও শিক্ষার্থী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১০ জন, পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক পদে ৭ জন এবং নির্বাহী সদস্য পদে মোট ৫৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।