শুক্রবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ৫ ১৪৩২, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ যাচাই করা হবে: গভর্নর ‘শত কোটি টাকার’ অনিয়ম: কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিচ্ছে দুদক ২৭তম বিসিএস: ৬৭৩ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন সিঙ্গাপুরেই হাদির অস্ত্রোপচারের অনুমতি দিয়েছে পরিবার: ইনকিলাব মঞ্চ মেয়েকে নিয়ে ২৫ ডিসেম্বর সকালে ফিরছেন তারেক রহমান খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল: ডা. জাহিদ জেআইসিতে ‘গুম-নির্যাতন’: হাসিনা ও ১২ সেনা কর্মকর্তার বিচার শুরুর আদেশ হাদির জন্য এখন দোয়াই বেশি দরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি: ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক জোয়ার যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধে পর ভেনেজুয়েলার পাশে থাকার ঘোষণা চীনের হাজারীবাগের হোস্টেলে এনসিপির জান্নাতারা রুমীর মরদেহ ট্রাইব্যুনালে ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ভারতীয় ভিসা সেন্টারের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু শিল্প শ্রমিকদের জন্য ‘প্রবাসী ফি` বাতিল করেছে সৌদি আরব ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে ‘আগামী সপ্তাহে মায়ামিতে বৈঠকে বসবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া’

ইসলাম

আধুনিক যুগে আরবি ভাষার প্রভাব

 প্রকাশিত: ১৬:২৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

আধুনিক যুগে আরবি ভাষার প্রভাব

আধুনিক যুগে আরবি ভাষার প্রভাব-

ভাষা হচ্ছে একটি সভ্যতার আত্মা, ইতিহাসের স্মারক এবং ভবিষ্যতের পথনির্দেশক বিষয়ের নাম। নানা জনপদে সময়ের স্রোতে অনেক ভাষা জন্ম নেয়, আবার অনেক ভাষা হারিয়েও যায়। কিন্তু কিছু ভাষা এমনও আছে; যেগুলো কালের পরিবর্তনে শুধু টিকেই থাকে না, বরং নতুন রূপে, নতুন শক্তিতে আধুনিক বিশ্বে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করে। আরবি ভাষা তেমনই এক অনন্য বিস্ময়।

১৮ ডিসেম্বর ‘বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস’ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, এই ভাষা কেবল পবিত্র কোরআনের বাহন নয়, বরং তা আধুনিক যোগাযোগ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সভ্যতার এক সক্রিয় অংশীদার।আরবি ভাষার যাত্রা শুরু হয়েছিল মরুভূমির বুক থেকে; কিন্তু আজ তার বিস্তার স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে।ধর্মীয় ভাষা থেকে বৈশ্বিক যোগাযোগের ভাষা

আরবি ভাষার মর্যাদা সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আল্লাহর বাণীর ভাষা হিসেবে। পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি একে আরবি কোরআনরূপে নাজিল করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ২)

পবিত্র কোরআনের এই ভাষাগত নির্বাচনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে আরবি ভাষার গভীরতা, সৌন্দর্য ও প্রকাশক্ষমতার স্বীকৃতি। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আরবি ভাষা কেবল ধর্মীয় পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ইসলামি সভ্যতার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আরবি হয়ে ওঠে জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিত্সা, গণিত ও সাহিত্যচর্চার প্রধান মাধ্যম।

আজকের বিশ্বে সেই ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার নতুন মাত্রা পেয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির হাত ধরে।

ADVERTISEMENT

ডিজিটাল যুগে আরবি ভাষার পুনর্জাগরণআজকের বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, অনলাইন সাংবাদিকতায়, ভিডিও কনটেন্টে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়; সর্বত্রই আরবি দ্বিতীয় বৃহত্তম চালিকা শক্তি। আধুনিক প্রযুক্তি সম্পৃক্ত এমন কোনো অঙ্গণ নেই যেখানে আরবি ভাষার প্রভাবময় ব্যবহার নেই।বর্তমানে আরবি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল ডিজিটাল ভাষা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরবি কনটেন্টের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। ফেসবুক, এক্স (টুইটার), ইউটিউব, টিকটক; সসকল প্ল্যাটফর্মেই আরবি ভাষায় ধর্মীয় আলোচনা, শিক্ষামূলক ভিডিও, সাহিত্যচর্চা ও সংবাদ পরিবেশন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

বিশেষভাবে লক্ষণীয়, আধুনিক আরবি (Modern Standard Arabic) প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগে একক মানদণ্ড হিসেবে গড়ে উঠেছে, যা বিভিন্ন দেশের আরবি ভাষাভাষীদের মধ্যে ভাষাগত ঐক্য রক্ষা করছে।

প্রযুক্তি আরবি ভাষাকে শুধু ব্যবহারই করছে না; বরং সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধও করছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আরবি ভাষাআজকের বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ভাষা বিশ্লেষণ, অনুবাদ ও কণ্ঠস্বর শনাক্তকরণে বিপ্লব ঘটিয়েছে। আরবি ভাষা; যা ব্যাকরণ, রূপান্তর ও শব্দমূলের দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ; সেই প্রযুক্তিগত পরীক্ষায় নতুন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

আরবি ভাষার Root-based morphology বা শব্দমূলভিত্তিক কাঠামো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে গভীর ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বাধ্য করছে। ফলে আরবি ভাষাকে কেন্দ্র করে উন্নত ভাষা-প্রযুক্তি, স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ, ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং কোরআন গবেষণাভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে।

এভাবে আরবি ভাষা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বে নয়; বরং অংশীদারিত্বে এগিয়ে চলছে।গণমাধ্যম ও বৈশ্বিক প্রভাব

আধুনিক গণমাধ্যম আরবি ভাষার প্রভাবকে বিশ্বদরবারে আরও দৃশ্যমান করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, স্যাটেলাইট চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালগুলো আরবি ভাষাকে একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

আরবি এখন কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা নয়; এটি বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতির আলোচনার অন্যতম মাধ্যম। জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষার একটি হিসেবে আরবি ভাষার স্বীকৃতি এই বাস্তবতারই প্রতিফলন। যা প্রমাণ করে; আরবি ভাষা অতীতের ঐতিহ্য নয়, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রয়োজন।

আরবি ভাষা ও মুসলিম বিশ্বের দায়িত্ব

এই বাস্তবতায় মুসলিম সমাজের জন্য আরবি ভাষা শুধু আবেগের বিষয় নয়; এটি দায়িত্বের বিষয়। কোরআনের ভাষা বোঝা, ইসলামী জ্ঞানকে সঠিকভাবে অনুধাবন করা এবং আধুনিক বিশ্বে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে আরবি ভাষার দক্ষতা অপরিহার্য।

বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়; আরবি ভাষা কোনো জাদুঘরের ভাষা নয়; এটি জীবন্ত, গতিশীল ও সময়োপযোগী এক ভাষা। আধুনিক যোগাযোগ ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরবি ভাষা আজ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

যে ভাষা কোরআনের আলো বহন করে, সে ভাষা কখনো নিভে যেতে পারে না। বরং সময় যত এগোয়, আরবি ভাষা ততই নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়- ডিজিটাল পর্দায় এবং মানুষের হূদয়ে।