বুধবার ১২ নভেম্বর ২০২৫, কার্তিক ২৭ ১৪৩২, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রেকিং

‘রাষ্ট্রদ্রোহ’: বিচারের জন্য প্রস্তুত হাসিনাসহ ২৮৬ জনের মামলা নভেম্বরে ঢাকায় ১৭ ককটেল বিস্ফোরণ, ৯ যানবাহনে আগুন আমিরাতে রোজা ও ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশ মামুন হত্যা: আদালত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত ১২ ৫ ক্যাচ ছাড়ার দিনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ৮ উইকেট ভারতের মোদি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য ভুটান সফর করছেন রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনে নিহত ১ দিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণে জড়িতরা বিচারের সম্মুখীন হবে : প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করবেন ম্যাখোঁ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত অবস্থানে: উপদেষ্টা গুজব ও বিভ্রান্তি প্রতিরোধে বিশেষ সাইবার সেলের কার্যক্রম শুরু দিল্লির গাড়ি বিস্ফোরণের তদন্ত হচ্ছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামুনের শরীরে ৭ গুলির চিহ্ন, ৬টিই ছেদ করে বেরিয়ে যায় ১৪ ডিগ্রির ঘরে তাপমাত্রা, কমতে পারে আরও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের রায় ২০ নভেম্বর আচরণবিধি ভাঙলে প্রার্থিতা বাতিল, গেজেট প্রকাশ ময়মনসিংহে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন, দগ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু গভীর রাতে ঢাকায় ৩ বাসে আগুন

স্পেশাল

`আমার মেয়েটিকে দেখে রেখো`-স্ত্রীকে বলছিলেন শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জু

 প্রকাশিত: ০৮:৪০, ৭ মে ২০২৫

`আমার মেয়েটিকে দেখে রেখো`-স্ত্রীকে বলছিলেন শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জু

তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে কিনা জানি না। হায়াত-মউত সব আল্লাহর হাতে। আমার মেয়েটিকে দেখে রেখো।’বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে বাড়ি বের হওয়ার আগে স্ত্রী মৌসুমীকে এ কথাগুলো বলে গিয়েছিলেন শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জু।

রঞ্জুর স্ত্রী জানান, 'ঘটনার আগের দিন আমি তাকে বলেছিলাম, তুমি আন্দোলনে যাচ্ছো, কিন্তু পুলিশ যেভাবে গুলি করছে—সাধারণ মানুষসহ অনেককে গুলি করে মারছে—তুমি যেও না।

জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘গুলি করা বন্ধ হয়েছে। আজকে দেশ স্বাধীন করব, না হয় জীবন দেব।’ এই বলে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সেদিনই তিনি জীবন দেন। আমার সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।'

যাওয়ার সময় তিনি স্ত্রীকে বলে যান, 'তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে কিনা জানি না। হায়াত-মউত সব আল্লাহর হাতে। আমার মেয়েটিকে দেখে রেখো।'

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মাছুমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়ার নিজ বাসায় রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন শহীদের স্ত্রী মৌসুমী খাতুন (৩২)।

শহীদ সোহানুর রহমান ছিলেন সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মাছুমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা। স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে তিনি ভালোই ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি নম্র-ভদ্র ছিলেন, এবং নিজের সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, সাহায্য করতেন।

তার স্ত্রী ও দুই বছরের কন্যা সুমাইয়া খান রোজা বর্তমানে জীবনের কঠিন সময় পার করছেন। রঞ্জুর বাবা মো. মাজেদ খান ও মা শামসুন নাহার বহু আগেই মারা গেছেন। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।

কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঢাকায় একটি ডেন্টাল ক্লিনিক চালাতেম। পরে সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেটে ‘খান ডেন্টাল’ নামে আরেকটি ক্লিনিক চালু করেন, যেখানে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা এসে সাধারণ মানুষকে সেবা দিতেন।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে সোহানুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মিছিলে যোগ দেন। ওইদিন সিরাজগঞ্জ এস.এস. রোডে মিছিল শুরু হয়। ক্রমেই জনসমাগম বাড়তে থাকে।

সকাল ১১টার দিকে মাহবুব শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। তাদের ছোড়া একটি গুলি শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জুর ডান চোখে লাগে এবং মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। জনতা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শহীদ রঞ্জু পৌর যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৪ আগস্ট তিনি শহীদ হলেও ৬ আগস্ট সকালেই জানাজা শেষে শহরের কান্দাপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত করা হয়।

দুই বছরের শিশু কন্যা সুমাইয়া এখনো বুঝতে পারে না, তার বাবা আর ফিরবেন না। প্রতিদিন মা মৌসুমীর কাছে সে জানতে চায়—'বাবা কই? বাবা কবে আসবে?' মোবাইলে বাবার ছবি দেখিয়ে মৌসুমী তাকে সান্ত্বনা দেন। শিশুটির চোখে যেন বাবাকে দেখার এক অদম্য ক্ষুধা। সারা দিন খুঁজে ফেরে তার প্রিয় বাবার মুখ।

শহীদ রঞ্জুর স্ত্রী বলেন, 'উনার শেষ কথাগুলো বারবার মনে পড়ে। মিছিলে যাওয়ার আগে তিনি মেয়েকে দেখে রাখতে বলেছিলেন। আজ নয় মাস হয়ে গেছে—উনি নেই। আমি যেন জীবন্ত লাশ। সবচেয়ে কষ্ট হয়, যখন মেয়েটা ওর বাবার শার্ট বুকে জড়িয়ে কান্না করে, আর আমাকে জিজ্ঞেস করে—‘আব্বু কবে আসবে?’ তখন আমার হৃদয় ভেঙে যায়।

তিনি বলেন, 'আমি কীভাবে বলব, ওর আব্বু আর কোনো দিন আসবে না। ওর বাবাকে সে আর কখনো দেখতে পাবে না, ডাকতে পারবে না। বাইরে থেকে এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরবে না কেউ।'

মৌসুমী জানান, 'প্রতিদিন মেয়েকে নানা ধরনের আশ্বাস দিয়ে খাওয়াতে হয়। বাবা ফিরবে—এই আশা দিয়ে তাকে ঘুম পাড়াতে হয়। এসব সান্ত্বনার আড়ালে নিজের বুকের কষ্ট চেপে রাখি।'

তিনি আরও জানান, 'রঞ্জুর লাশ বাড়িতে আনার পর প্রতিবেশীরা খাটিয়ায় জাতীয় পতাকা বিছিয়ে দেন। রোজা ওই অবস্থায় বাবাকে দেখে। তখন থেকেই সে জানতে চায়—বাবা কোথায়? আমার স্বামী তো কোনো দোষ করেনি, তাহলে তাকে কেন মারল? এর দায় কে নেবে?'

প্রতিবেশী বেবী খাতুন বলেন, 'রঞ্জু ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাকে হারিয়ে পরিবারটি একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে। শুনেছি, মৌসুমী এইচএসসি পাশ করেছেন। যদি তিনি একটি চাকরি পান, তাহলে অন্তত মেয়েকে নিয়ে দু’মুঠো খেতে পারবেন।'

তিনি বলেন, 'রঞ্জু খুবই দানশীল ছিলেন। ভাইবোনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গরিবদের সাহায্য করতেন। এলাকার কারও বিপদ হলে তিনিই আগে এগিয়ে যেতেন। আমার সঙ্গে তার সম্পর্কটাও খুব ভালো ছিল।'