বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ১১ ১৪৩২, ০৫ রজব ১৪৪৭

রাজনীতি

৩০০ ফিট সড়ক যেন জনসমুদ্র

 আপডেট: ১১:৪৮, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

৩০০ ফিট সড়ক যেন জনসমুদ্র

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে পূর্বাচলের ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে (তিনশ ফিট সড়ক) জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে সকাল ৮টায় তিনশ ফিট সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে শুরু করে সংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত পুরো সড়ক নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মী রাতেই সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন। অনেককেই রাত কাটিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।

মঞ্চ আর আশপাশের এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই, পুরো এলাকায় চলছে উৎসবের আমেজ।

সবার মুখে মুখে একটি স্লোগান বেশি শোনা যাচ্ছে—‘লিডার আসছেন’। স্লোগান, প্ল্যাকার্ড আর উচ্ছ্বাসে পুরো সমাবেশস্থল উৎসব কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ১৭ বছরের নির্বাসন জীবন কাটিয়ে দেশের পথে রয়েছেন। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় লন্ডনের হিথ্ররো বিমান বন্দর ছেড়েছেন তিনি। সিলেট হয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

বিমানবন্দর থেকে তারেক পৌঁছাবেন তিনশ ফিট সড়কের এই সংবর্ধনাস্থলে। মহাসড়কের পাশের সার্ভিস লেইনে ৪৮ ফিট বাই ৩৬ ফুটের মঞ্চ প্রস্তুত হয়েছে আগেই।

মঞ্চের ব্যানারে লেখা রয়েছে- ‘জনাব তারেক রহমান এর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’। মঞ্চে রয়েছে ১৯টি চেয়ার। মঞ্চের চারপাশে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

কুষ্টিয়ার কুমার খালী থেকে ভোরে ঢাকায় এসেছেন সানাহ উল্লাহ। তিনি বলেন, “এত দিনে তারেক ভাইকে দেখেছি ফেইসবুকে, আজকে দেখব সামনা-সামনি। উনাকে দেখার জন্য আমরা চার বন্ধু ঢাকায় এসেছি।

“বাড়িতে বলে এসেছি, তারেক ভাইকে দেখতে যাচ্ছি, দেখে এসে মিষ্টি খাওয়াব। “

পশ্চিম ও পূর্ব দিকে মহাসড়ক দিয়ে নেতা-কর্মীদের মিছিল আসছে। বরিশাল, রাজশাহী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ থেকে বিশেষ ট্রেনগুলোতে নেতা-কর্মীরা রাতেই ঢাকায় পৌঁছেছেন বিভিন্ন সময়ে।

পটুয়াখালীতে থেকে ভোরে লঞ্চে এসেছেন সুবিদ মাস্টার। তিনি বিএনপির একজন সমর্থক। দুই ছেলে, ভাগ্নেকে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন তারেক রহমানকে দেখতে।

সুবিদ বলেন, ‘‘এক এগারোর পর থেকে ১৬টা বছর আমরা তারেক রহমানের ওপরে আওয়ামী লীগের নির্মম প্রতিহিংসার স্বরূপ দেখেছি। কী অন্যায়-অবিচারেই না তার ওপরে করা হয়েছে! তার বক্তৃতা পর্যন্ত প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, আধুনিক বিশ্বে কি এটা চিন্তা করা যায়?

“কিন্তু বাংলাদেশে হয়েছে। আজকে সেজন্য এত শীতের মধ্যে ঢাকায় এসেছি শুধুমাত্র তারেক রহমানকে এক নজর কাছাকাছি থেকে দেখব বলে। দেখেন কত দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন এসেছে, একটা মাত্র কারণে, তারেক রহমানকে ভালোবাসে বলে, বিএনপিকে ভালো লাগে বলে।”

বিমান বন্দর, পূর্বাচল, বননী, যুমনা ফিউচার পার্ক প্রভৃতি পয়েন্ট দিয়ে নেতা-কর্মীরা তারেক রহমানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিছিল নিয়ে আসছেন। তাদের স্লোগানে স্লোগানে পুরো এলাকা উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো মিছিলের সঙ্গে রয়েছে ব্যান্ড বাদকের দল।

নেতাকর্মীদের খাবার ও পানির চাহিদা মেটাতে পথে পথে খাবার ও পানি বিক্রি করছেন হকাররা। কিছুদূর পরপর দেখা যাচ্ছে স্পিকার লাগানো ট্রাক ও বাস। গানের তালে তালে কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন।

পুরো এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার রাত ৯টার দিকে সংবর্ধনা মঞ্চ এলাকা পরিদর্শন করেন আইজিপি ড. বাহারুল আলম। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তার সঙ্গে ছিলেন।

তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা প্রকা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ও অভ্যর্থনা কমিটির সদস্যসচিব রুহুল কবির রিজভী।

মঙ্গলবার দুপুরে মঞ্চ নির্মাণের কাজ দেখতে এসে তিনি বলেছিলেন, “২৫ ডিসেম্বর এই এলাকা মানুষের মহামিলন ও মহা মেলায় পরিণত হবে—এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।’