ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিতদের প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত
ঢাকা, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর উদ্যোগে ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে আজ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে প্রতিনিধি সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্মেলনের শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য তাজিনুর রহমান। এরপর গীতা পাঠ করেন জগন্নাথ হল সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাতুল দে দীপ্ত এবং ত্রিপিটক পাঠ করেন ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য সর্বমিত্র চাকমা। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সংগীতের পর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে জুলাই বিপ্লব পর্যন্ত সকল শহীদ ও আহতদের স্মরণে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ডাকসুর আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক সাখাওয়াত জাকারিয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদের সঞ্চালনায় প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এইচ এম মোশারফ হুসেন, ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েম।
সম্মেলনে ডাকসুর পক্ষ থেকে বিগত দুই মাসের কার্যক্রম উপস্থাপন করা হয়। দুই মাসের কার্যক্রম স্লাইড প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ।
সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ডাকসুর ব্যাপারে সারা বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল, সবার গভীর আগ্রহ আছে। সিনেটে আজকে একটি পার্লামেন্ট ভাব মনে হচ্ছে। এই ডাকসু আয়োজন করার কৃতিত্ব পুরো নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
ডাকসু সহ-সভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন গণরুম-গেস্টরুম, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির রাজনীতি নেই। বরং এখন শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নেতা নয় বরং প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব। আমরা আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হওয়া প্রত্যেকটি সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে পলিটিক্যালি কনশাস একাডেমিক ইনস্টিটিউট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ জ্ঞান উৎপাদন, গবেষণার পরিবেশ তৈরি এবং গবেষণায় বাজেট বাড়ানোর মাধ্যমে এটিকে পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ইনস্টিটিউট হিসেবে রূপান্তর করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, খুনি হাসিনা এবং তার দোসররা গত ১৬ বছরে শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের বৈধতা দিয়েছে। খুনি হাসিনার ফাঁসির রায় আসার পরে 'প্রগতিশীল শিক্ষক' নামে কিছু ব্যক্তি বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে। যারা খুনি হাসিনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে সে যেই হোক, তার স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতি করার অধিকার নাই। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে এবং তাদের চাকরিচ্যুত করতে হবে।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ডাকসুর প্রেজেন্টেশনে দেখানো কার্যক্রমের চেয়েও বাস্তবে অনেক বেশি কাজ হয়েছে, যদিও অনেক ছোট ছোট কার্যক্রম উঠে আসেনি। গত দুই মাসে যে অগ্রগতি দেখা গেছে, তা ধারাবাহিকভাবে চালু থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব। আমাদের পরিকল্পিত মানসিক স্বাস্থ্য ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজগুলো ডাকসু বাস্তবায়ন করছে। আমাদেরকে সমর্থন দিয়ে সেই প্রচেষ্টা আরও শক্তিশালী করছো তোমরা।
ব্যুরোক্র্যাটিক অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আলোচনা ও যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হচ্ছে। কিছু কাজ সময়সাপেক্ষ হলেও, সকলের সদিচ্ছা ও ভালো কিছু করার ইচ্ছার কারণে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন সম্ভব।