বৃহস্পতিবার ২০ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৬ ১৪৩২, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রেকিং

সুদান যুদ্ধের অবসানে কাজ করবেন ট্রাম্প কলম্বিয়ায় ভাই হারানোর বেদনায় শোকাহত তরুণী ভিয়েতনামে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধে ভারত ‘সাড়া দেবে না’, বিশ্বাস ছেলের ১৩ লাখ রোহিঙ্গার ভার আর বহন করা সম্ভব নয়: জাতিসংঘে বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় ছিল কলঙ্কিত: আপিল বিভাগ গণতান্ত্রিক মহাসড়কে চলা শুরু: অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল, কার্যকর চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে শত টেস্টের গৌরবে শতরানের হাসি মুশফিকের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন: ডিএমপি কমিশনার যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলি হামলায় ২৫ ফিলিস্তিনি নিহত এপস্টাইন ফাইলস প্রকাশের বিলে ট্রাম্পের স্বাক্ষর ওয়েস্টার্ন মেরিনের বানানো ৩টি জাহাজ পেল আমিরাতের মারওয়ান

আন্তর্জাতিক

কলম্বিয়ায় ভাই হারানোর বেদনায় শোকাহত তরুণী

 প্রকাশিত: ১৬:৩০, ২০ নভেম্বর ২০২৫

কলম্বিয়ায় ভাই হারানোর বেদনায় শোকাহত তরুণী

মধ্য কলম্বিয়ার একটি মর্গে এক তরুণী তার ১৬ বছর বয়সী ভাই হারানোর শোক প্রকাশ করছেন। ওই কিশোরকে গেরিলারা অপহরণ করেছিল এবং গত সপ্তাহে সরকারী বাহিনীর বোমা হামলায় সে নিহত হয়।

কলম্বিয়ার আমাজন অঞ্চলের একটি স্কুল থেকে অপহরণের পর, তিন মাসের বন্দিদশায় থাকা ওই ছেলেটি শেষ পর্যন্ত নিহত হয়। 

খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।

দেশটির বামপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত গেরিলা ও অন্যান্য অপরাধী গোষ্ঠীর হাতে ওই কিশোর অপহৃত হয়েছিল।

সম্প্রতি গুয়াভিয়ার জঙ্গলের একটি গেরিলা ঘাঁটিতে বিমান হামলায় মোট ২০ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে ওই কিশোরসহ সাত জন ছিল শিশু। 

সকল শিশুকেই অপহরণ করেছিল সেন্ট্রাল জেনারেল স্টাফ (ইএমসি) নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠি।

ইএমসি ২০১৬ সালের শান্তি চুক্তির পর নিরস্ত্র হওয়া ফার্ক গেরিলাদের ভিন্নমতাবলম্বী অংশ নিয়ে গঠিত এবং এখনও তারা সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ঘটনার পর মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকার ও গেরিলা গোষ্ঠী উভয়পক্ষের বিরুদ্ধে শিশুদের নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি তুলে ধরেছে এবং অপহৃত শিশুদেরকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে।

ছেলেটির ১৮ বছর বয়সী বোন অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলেন, ‘ওরা তো কেবল শিশু ছিল, যারা সবেমাত্র বাঁচতে শিখছিল। যেখানে তাদের থাকা উচিত ছিল স্কুলে, তাদের পড়াশুনা ও খেলাধুলা করার কথা ছিল।’

তিনি এই মৃত্যুর জন্য অপহরণকারী গেরিলাদের পাশাপাশি সরকারকেও দায়ী করেছেন।

তরুণীটি কেন্দ্রীয় শহর ভিলাভিসেনসিওর একটি মর্গে এএফপি’র সঙ্গে কথা বলছিলেন। 

তিনি বলেন, ‘এটা কখনোই হওয়া উচিত হয়নি।’

লাশগুলোর পরিবারের দাবি অনুসারে, তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গুয়াভিয়ার থেকে কয়েক’শ কিলোমিটার দূরে।

তরুণী আরো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর এটা করা একদমই উচিত হয়নি। সেখানে নাবালক শিশুরা বন্দি ছিল, জেনেও তিনি কিভাবে বোমা হামলার অনুমতি দিলেন?!’ 

-‘গভীর উদ্বেগ’-

কলম্বিয়ার কর্মকর্তারা সোমবার জানান, আগস্ট থেকে, বিদ্রোহী যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে সামরিক হামলায় অপহৃত ১৫শিশুর মৃত্যু হয়েছে। 

কলম্বিয়ায় অবস্থিত জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বিদ্রোহীদের দ্বারা অপহৃত এই নাবালকদের সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত হওয়ার বিষয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে।

বিদ্রোহীরা অপহৃত এই শিশু-কিশোরদেরকে সাধারণত যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ১ হাজার ১০০ জনেরও বেশি শিশু ও কিশোরকে অপহরণ করেছে।

১৯৯৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত, এই সংখ্যা ছিল ২৩,৮০০।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ছয় মাস বাকি থাকতে, কলম্বিয়ার প্রথম বামপন্থী সরকার গেরিলা ও মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি অনুকূল আচরণের জন্য বিরোধীদের চাপের মুখে পড়েছে, যারা ১৯৮০ ও ৯০ এর দশকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনার মুখেও, প্রেসিডেন্ট পেট্রো আলোচনার মাধ্যমে ‘সম্পূর্ণ শান্তি’ প্রতিষ্ঠার তার ঘোষিত প্রতিশ্রুতি ত্যাগ করেছেন এবং বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত কোকেন উৎপাদনকারী ছিটমহলগুলোতে অভিযান শুরু করেছেন।

পেট্রো নিজেই বলেছেন, গুয়াভিয়ারে বোমা হামলায় ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোর নিহত হয়েছে।

দেশের মোস্ট ওয়ান্টেড গেরিলা নেতা ইভান মর্ডিসকোর নেতৃত্বে ইএমসি বাহিনীর আসন্ন আক্রমণকে প্রতিহত করার ওই অভিযান চালানো হয়।

- ‘দোষ দেওয়া যাবে না’ -

নিহত ওই কিশোরের বোন জানান, তাকে যখন গেরিলারা ধরে নিয়ে যায়, তখন সে গুয়াভিয়ারে একটি গ্রামীণ স্কুলে পড়ত।

তিনি স্মরণ করেন, তার বাবা তাকে খুঁজতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ‘ভয়ে’ হাল ছেড়ে দেন।

নিহত কিশোরের বোন আরো বলেন, ‘গেরিলারা তাকে শুধু একটা কথাই বলেছিল যে খোঁজা বন্ধ করতে হবে।’ 

কলম্বিয়ার মানবাধিকার কার্যালয়ের অনুরোধ সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো গেরিলা ঘাঁটিতে সামরিক বিমান হামলা বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। 

গেরিলা গ্রুপগুলোতে জোরপূর্বক শিশু ও কিশোরের নিয়োগ বাড়লেও বোমা হামলা বন্ধে পেত্রোর অস্বীকৃতির কারণে  মানবাধিকার দপ্তর তার কঠোর সমালোচনা করে।

দেশটির সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে জোরপূর্বক শিশু নিয়োগ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ার পরও সরকার এই অভিযান চালিয়ে যাওয়ায়, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানটি।

মানবাধিকার কার্যালয়টির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে নাবালকদের জোরপূর্বক নিয়োগ ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এ পরিস্থিতিকে সরকারের নীতির ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থতা’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
এ বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সংস্থাটি মোট ১৬২টি অভিযোগ পেয়েছে। 

এই অভিযোগগুলোর অর্ধেকই দরিদ্র ও গ্রামীণ এলাকার আদিবাসী শিশুদের জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার ঘটনা। 

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ সব ঘটনার ৪০ শতাংশের জন্য দায়ী মর্ডিস্কো’র নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র দল আর এটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলা বাহিনীর অন্যতম শক্তিশালী অংশ।

ক্রমবর্ধমান অপহরণ ও শিশু নিয়োগের ঘটনায় দেশজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। 

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, চলমান এই সামরিক অভিযান অব্যহত থাকলে, শিশুদের ঝুঁকি আরও বাড়বে এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে মানবিক পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটতে পারে।

সরকারি তথ্য অনুসারে, মর্ডিসকোর দল ৪০ শতাংশ হামলার জন্য দায়ী।

১৮ বছর বয়সী এই কিশোরী তার ভাইয়ের লাশের জন্য অপেক্ষা করার সময় তার এক আত্মীয়ের হাত ধরেন।

এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, নিহত শিশুরা ‘কোনও কিছুর জন্যই দায়ী নয়।’