হাসিনাকে ফেরাতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে সরকার
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে সরকার আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থেকে বেরিয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ পরিকল্পনার কথা শোনান।
জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সোমবার শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে শেখ হাসিনা ও তার সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খাঁন কামালের হয় মৃত্যুদণ্ড। আর রাজসাক্ষী হওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের কারাদণ্ড হয় পাঁচ বছরের।
এদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও কামাল ৫ অগাস্টের পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন।
রায়ের দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফেরত দিতে ভারতের প্রতি আবারও আহ্বান জানায়।
এবার শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার আভাস দিলেন আইন উপদেষ্টা।
আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল— ওনাদের প্রতর্পণের জন্য আমরা চিঠি দিচ্ছি।
“পাশাপাশি ওনাদের প্রত্যর্পণ করার জন্য, যেহেতু ওনারা এখন দোষী সাব্যস্ত, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত, কাজেই আমরা মনে করি ভারতের এখন বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে তাদের ফেরত দেওয়ার।”
আইন উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের বিচারের আকাঙ্ক্ষা, সেটা পূরণ করার জন্য এই দায়িত্ব পালনে ভারত যেন আমাদের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তার বাধ্যবাধকতা পালন করে, সেজন্য সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভারতকে আমরা চিঠি দিচ্ছি।
“একই সঙ্গে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক যে অপরাধ আদালত রয়েছে, সেখানে কোনোভাবে যেতে পারি কিনা, সেটা বিচার-বিবেচনা করার জন্য আমরা অচিরেই বসে সিদ্ধান্ত নেব।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “আপনারা কতটুকু আশাবাদী?”
উপদেষ্টা জবাব দেন, “আপনার প্রশ্নের মধ্যে যতটুক আশাবাদ আছে, ততটুকুই আশাবাদী আমরা।”
সোমবারের রায়ের পর থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। বুধবার এ নিয়ে কথা বলেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া থেকে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের যে অনুরোধ ঢাকা করেছে, নয়াদিল্লি তা গ্রহণ করবে বলে তিনি মনে করেন না।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে বড় ধরনের পরীক্ষায় ফেলেছে বলে বিশ্লেষকদের ভাষ্য।