বুধবার ১৯ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৫ ১৪৩২, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

রাজনীতি

তফসিলের পর মাঠ প্রশাসনে একযোগে রদবদল চায় জামায়াত

 প্রকাশিত: ১৩:৫০, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

তফসিলের পর মাঠ প্রশাসনে একযোগে রদবদল চায় জামায়াত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে সাম্প্রতিক রদবদল ‘কোনো জায়গা থেকে করা হচ্ছে’, সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী।

তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনের কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে এলে সব ডিসি-এসপিকে একযোগে বদলির দাবি জানিয়েছে দলটি।

সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে লটারির মাধ্যমে প্রশাসন ও পুলিশে বদলি করার পরামর্শ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।

নির্বাচন সামনে রেখে বুধবার নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নিয়ে তারা নিজেদের পর্যবেক্ষণ এবং দাবির বিষয়গুলো ইসির সামনে তুলে ধরেন।

জামায়াত, এনসিপিসহ সাতটি দলের নেতারা এদিন সকালের পর্বের সংলাপে অংশ নেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনসহ নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে জামায়াতের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ এবং আইনজীবী শিশির মনির।

গত কিছু দিনে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদলের প্রসঙ্গ ধরে গোলাম পরওয়ার বলেন, “রদবদলের বিষয়টা একমাসে হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, ডিসি সেখানে রদবদল হয়েছে। মনে হয়েছে যেন কোনো ডিজাইন করে একটা উদ্দেশ্যে কোনো জায়গা থেকে এটা হচ্ছে।”

তফসিলের পর লটারির মাধ্যমে বদলির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “প্রশাসনে নিরপেক্ষতায় আস্থা রাখার উপায় হল লটারির মাধ্যমে ট্রান্সফার হওয়া। যার যেখানে তকদিরে আছে। প্রধান উপদেষ্টাকেও বলেছি, এরকম করলে প্রশ্ন থাকবে না।

“উনার বক্তব্যে বোঝা গেল- কোনোভাবে কোনো জায়গা থেকে শুরু করেছে। কেউ জানছেন কি, জানছেন না, কিছুটা অস্পষ্ট কথা উনার থেকে বোঝা যায়।”

তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনকেই ‘আস্থার জায়গা’ হতে হবে বলে মন্তব্য করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেন, “আগেও দুয়েকটা নির্বাচনে হয়েছে; তফসিল ঘোষণার পর একদিনে, এক রাতে সব ডিসি-এসপি রদবদল ঘটেছে। জাতি আস্থা রেখেছে, কমপ্লেইন ছিল না। নির্বাচন কমিশন এরকম একটা সিদ্ধান্ত না নিলে… এখন যেটা হচ্ছে পরিকল্পিত, ইনটেনশনাল।”

আচরণবিধি ও প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ে গণভোটের প্রসঙ্গ উঠে না আসার বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে গণভোটের আয়োজন এবং প্রচারের দায়িত্বও ইসির। সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটের ব্যালট নিয়ে তাদের পরিকল্পনাও জানাতে হবে।

ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেন, “একজন সেনা সদস্য নয়, বরং চার-পাঁচজন সদস্য নিয়োজিত করা গেলে ভালো হয়।”

সরিষার মধ্যে ভূত?

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “সবার প্রত্যাশা, এবার সেটার পুনরাবৃত্তি হবে না। সরকার, ইসি, দল সবার একই প্রতিশ্রুতি, এটা জাতি আশা করছে।

“ইসির আন্তরিতা, প্রস্তুতি, লক্ষ্য করছি আমরা। এজন্য ইসির প্রতি আস্থাশীল হতে চাই, আশান্বিত হতে চাই।”

তিনি বলেন, “যে পরিস্থিতিতে নির্বাচন হচ্ছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পরিস্থিতিটাই সামগ্রিক অর্থে একটা চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রকাঠামো পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। দুর্বল কাঠামোতে নির্বাচন করতে হচ্ছে। ইসি সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন। প্রকৃত অর্থে বিগত দিনে স্বাধীন ছিল না। কমিশনের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার হয়েছে। ইসিকে কাজে লাগিয়ে জাতিকে বোকা বানানো হয়েছে। যার পরিণতিতে তিন কমিশনকে ভুগতে হচ্ছে, এটার পুনরাবুত্তি যেন না হয়।”

বর্তমান ইসির প্রতি ‘আস্থা’ থাকার কথা বললেও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি জানান হামিদুর রহমান আযাদ।

তিনি বলেন, “ইসি স্বাধীন হতে হলে অবশ্যই সাহসী হতে হবে। আশাবাদী, আপনারা সাহসী হবেন। সাহস দেখালে হবে না শুধু; স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আজকের সংলাপ খুবই গরুত্বপূর্ণ, এটা যেন ট্র্যাডিশনাল ধারাবাহিকতা না হয়, ব্যতিক্রম চাই।”

জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “শুধু পলিসি লেভেলে স্বচ্ছতা থাকলে হবে না। পলিসি লেভেলে পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে, ন্যায্যতা নিয়ে ডাউট এখনও নেই। এখনও আমরা ইসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মত বক্তব্য রাখিনি। কনফিডেন্স দেখিয়েছি।

“কিন্তু এক্সিকিউটিভ লেভেলে প্রশ্ন আছে। এক্সিটিউভ লেভেলে সমন্বয় না হলে চমৎকার উৎসব হবে না। সরিষার মধ্যে ভূত আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে।”

মাঠ প্রশাসনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পর্যবেক্ষণি দিয়ে আযাদ বলেন, “এ চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে কিনা ডাউট। রক্ষক যেন ভক্ষক না হয়। আইন প্রতিপালন যেন হয়। সরকার পরিবর্তন হয়েছে, আমলাতন্ত্রের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন কম এসেছে। এখানে অনেক সমস্যা জটিলতা আছে। দলীয় সরকার না হলেও দলকানা লোক সরকারে আছে।”

তফসিলের পর প্রশাসনিক কর্তৃত্ব যে ইসির হাতে ন্যস্ত হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে এই জামায়াত নেতা বলেন, “এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট তৈরি হয়। এ গভার্নমেন্টের বেনিফিশারি যেন নেক্সট গভার্নমেন্টের সঙ্গে আন্ডাস্ট্যন্ডিং না করতে পারে। এ ধরনের ছিদ্র থেকে গেলে নির্বাচন প্রভাবিত হবে।”

‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিতে সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের আহ্বান জানান আযাদ।

তিনি বলেন, “ইসির অনেক ভালো উদ্যোগ থাকলেও সেগুলো নষ্ট করে দিতে পারে যদি লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি না হয়। এখন ইসির দায়িত্ব না থাকলেও সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে এ পরিবেশ তৈরি করা যায়।”

অবৈধ অস্ত্র, বৈধ অস্ত্র উদ্ধারে উপকূলীয়, পার্বত্য এলাকায় বিশেষ নজর দেওয়ার তাগিদ দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, জনগণের নিরাপত্তা ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে ‘ভালো কাজ নষ্ট হয়ে যাবে’।

জনপ্রশাসনে রদবদলে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আযাদ বলেন, “প্রশাসনে নিয়োগ বদলিতে স্বচ্ছতা না থাকলে হবে না। গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ বদলি হচ্ছে। জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত এমন দেখানো হচ্ছে। একটি দল আছে শুধু… এদেরকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ হলে কীভাবে নির্বাচন হবে? হৈ চৈ হবে। লটারির ভিত্তিতে ডিসি, এসপি, ওসি, নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ বদলি করতে হবে।”

বড়িওর্ন ক্যামেরার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।

ব্যালট পেপার ছাপানো নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “ব্যালট পেপার নকল নিয়ে কথা এসেছে, ডাকসু, চাকসু নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। এক্সট্রা ব্যালট পেপার যেন না যায়। এসব নজর দিতে হবে।”

শিশির মনির বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থী, তার পক্ষে একজনকে শাস্তির বিধান কে কার্যকর করবে এবং দলের অর্থদণ্ডের বিধান নিয়ে ‘অস্পষ্টতা’ রয়েছে।