সুখময় দাম্পত্য লাভে করণীয়
বর্তমানে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। এখনই আমাদের ভাবতে হবে—আমরা কি নিজেদের সংসার ভাঙনের পথে নিয়ে যাচ্ছি, নাকি দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করার চেষ্টা করছি? ইসলামের দৃষ্টিতে দাম্পত্য জীবন শুধু সামাজিক নয়, বরং এটি প্রশান্তি, ভালোবাসা ও রহমতের সম্পর্ক।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন
“আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করো। এবং তোমাদের মধ্যে দিয়েছেন ভালোবাসা, দয়া ও রহমত।”
(সূরা রূম, আয়াত: ২১)
এই প্রশান্তি তখনই পাওয়া সম্ভব, যখন স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল ও নিবেদিত থাকেন। সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য নিচের বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—
একে অপরকে সময় দেওয়া: আজকাল দেখা যায়, একই ছাদের নিচে থেকেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথাবার্তা নেই, একসঙ্গে সময় কাটানো হয় না। কেউ অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত, কেউবা মোবাইল বা ইন্টারনেটে ডুবে আছেন। আবার সংসারের কাজের চাপে অনেক সময় মিলেও না। অথচ সময় না দিলে সম্পর্কের উষ্ণতা হারিয়ে যায়। তাই দূরত্ব না রেখে প্রতিদিন কিছুটা সময় একে অপরের জন্য রাখুন। কথা বলুন, একসঙ্গে খান, হাঁটুন— এতে সম্পর্ক গভীর হয়।
সাজসজ্জা ও পরিপাট্য বজায় রাখা: অনেক নারী ঘরে নিজের প্রতি উদাসীন থাকেন, অথচ বাইরে গেলে সাজগোজে মনোযোগী হন। এটি অনুচিত। স্বামীর পছন্দ ও ভালো লাগার বিষয়গুলো গুরুত্ব দিন। ঘরেও পরিপাটি ও আকর্ষণীয় থাকুন। এতে পারস্পরিক ভালোবাসা বাড়ে, সম্পর্ক দৃঢ় হয়।
দায়িত্ব, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ: স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই একে অপরের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে।
স্ত্রীর দায়িত্ব— স্বামীর প্রতি অনুগত থাকা, যত্ন ও শ্রদ্ধা করা, সংসারে শান্তি বজায় রাখা।
স্বামীর দায়িত্ব— স্ত্রীর ভরণপোষণ, প্রয়োজন পূরণ ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
দুজনেই যদি দায়িত্ব ও সম্মানবোধ বজায় রাখেন, তাহলে সংসারে স্থায়ী ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।
শুধু অর্থসম্পদ দেখে বিয়ে নয়: আজকাল অনেকেই কেবল অর্থ বা সামাজিক মর্যাদা দেখে বিয়ে করেন। কিন্তু এতে প্রকৃত সুখ আসে না। ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে, বিয়েতে ধার্মিকতাকে অগ্রাধিকার দিতে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“নারীকে চার কারণে বিবাহ করা হয়— সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্য ও ধার্মিকতা। তুমি ধার্মিক নারীকে বিয়ে করো, তবেই সফল হবে।”(সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
স্বামীর প্রতি অনুগত থাকা
রাসুল (সা.) বলেন,
“যদি আমি কাউকে অন্য কারও কাছে সেজদা করার অনুমতি দিতাম, তবে স্ত্রীকে আদেশ দিতাম যেন সে তার স্বামীকে সেজদা করে।”
(তিরমিজি)
এ হাদিসে স্বামীর প্রতি অনুগত থাকার গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। স্ত্রী যেন সব বৈধ বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য বজায় রাখে— এতে সংসারে শান্তি ও বরকত আসে।
পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা: কর্মব্যস্ততার কারণে স্বামী-স্ত্রী অনেক সময় দূরে থাকেন। সময়ের অভাবে ঘনিষ্ঠতা কমে যায়, ফলে পরপুরুষ বা পরনারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটি শুধু গুনাহ নয়, সংসার ধ্বংসেরও কারণ। তাই যতটা সম্ভব একসঙ্গে থাকা, যোগাযোগ বজায় রাখা ও বিশ্বাস অটুট রাখা জরুরি।