সোমবার ১০ নভেম্বর ২০২৫, কার্তিক ২৬ ১৪৩২, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

প্রাথমিক শিক্ষকদের সিদ্ধান্ত বদল, কর্মবিরতি চলবে

 আপডেট: ১১:১১, ১০ নভেম্বর ২০২৫

প্রাথমিক শিক্ষকদের সিদ্ধান্ত বদল, কর্মবিরতি চলবে

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েও সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।

রোববার মধ্যরাতে তারা জানিয়েছেন, কর্মবিরতির পাশাপাশি তাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা 'প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ' এর আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভার পর রোববার রাত পৌনে ১০টায় কর্মবিরতি স্থগিত করে অবস্থান কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিত এবং তথ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিবরণীতেও শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিতের কথা বলা হয়েছিল।

কিন্তু শিক্ষকরা শহীদ মিনারে ফেরার পর আরেক আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি কর্মবিরতি ও অবস্থান চালানোর ঘোষণা দেন।

সিদ্ধান্ত বদলের কারণ জানতে চাইলে শিক্ষকদের অন্যতম নেতা মুহিব উল্লাহ বলেছিলেন, "শিক্ষকদের জনরোষে নেতারা সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন, কর্মবিরতি চলবে।"

এর কিছুক্ষণ পর খায়রুন নাহার লিপি অবস্থানরত শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "ঢাকা মহানগরের শিক্ষকরা দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ক্লাস চালিয়ে তিনটায় শহীদ মিনারে সমবেত হবেন।"

পরে ফের মধ্যরাতে পাঁচ শিক্ষক নেতা খায়রুন নাহার লিপি, শাহিনুর আলআমিন, আবুল কাশেম, আনিসুর রহমান, মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ ও মাহবুবুর রহমান চঞ্চলের দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে কর্মবিরতি ও লাগাতার অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে।

সেখানে বলা হয়, সোমবার বিকাল ৫টায় অর্থ সচিব ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে শিক্ষক নেতারা ‘চূড়ান্ত’ বৈঠকে বসবেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানার সভাপতিত্বে রোববার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক সভায় সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি জানান।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার আবদুল্লাহ শিবলী সাদিক সভা শেষে রাত পৌনে ১০টায় পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “সভায় শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনায় শিক্ষক নেতাদের দাবির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে দাবিগুলো সমাধানের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার প্রেক্ষিতে শিক্ষক নেতারা চলমান কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন।”

পরে তথ্য অধিদপ্তরের দেওয়া এক তথ্য বিবরণীতেও একই ঘোষণা আসে।

তিন দাবিতে শনিবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। সেদিন বিকালে তারা 'কলম বিরতি কর্মসূচি' পালনে মিছিল নিয়ে শাহাবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে শাহবাগ থানার সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ।

এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠি চার্জ, কাঁদুনে গ্যাসে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায় শিক্ষকদের।

এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা।

যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের দাবি, আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটি দল ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে’ পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পুলিশের বাধার মুখে শহীদ মিনারে ফিরে এসে রোববার থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। শনিবার মধ্যরাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে তারা 'পুলিশের হামলার' নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

'প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ' নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে শিক্ষকরা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালাচ্ছেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি ও সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ এ মোর্চায় আছে।

এদিকে একাদশ গ্রেডে বেতনসহ, পদোন্নতি ও উচ্চতর গ্রেড জটিলতা নিরসনের দাবিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা 'প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের' নেতারাও 'প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের' সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।