ভূমিকম্প: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ ঘোষণা
প্রথমে একদিনের জন্য ক্লাশ ও পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হলেও ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার রাতে সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “কাল (রোববার) বিকাল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে দিতে হবে। হলগুলো ঠিকঠাক করে পরে বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় খুলবে।”
সিন্ডিকেটের বৈঠক শেষে কোষাধ্যক্ষ বলেন, হলগুলো যাচাই করে দেখার জন্য প্রকৌশলীরা দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। পুরো ঝুঁকির সামগ্রিক মূল্যায়ন করতে এ সময় হলগুলো খালি করার সিদ্ধান্ত হয়। যে কারণে এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে শনিবার রাতে প্রথমে শুধু রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রাখার কথা বলেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেসময় ভূমিকম্পে শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার তথ্য দিয়ে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, “স্থগিত করা পরীক্ষাগুলোর নতুন সময়সূচি যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে।”
পরে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি আয়োজিত সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় হলগুলোর সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় সিন্ডিকেট সদস্যদের পাশাপাশি চিকিৎসা অনুষদের ডিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী সভায় অংশ নেন। তারা বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক এবং প্রধান প্রকৌশলীর মতামত বিশ্লেষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
শুক্রবারের তীব্র ভূমিকম্পের সময় আহত হওয়ার ঘটনার পরদিনের ভূমিকম্পেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী আহত হন।
সবশেষ শনিবার সন্ধ্যায় তৃতীয় দফার ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নিচে নামতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ছয় শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর আসে।
সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূকম্পনের সময় তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে শামসুন্নাহার হলে তিনজন, কুয়েত মৈত্রী হলে একজন, বেগম রোকেয়া হলে একজন ও মাস্টারদা সূর্যসেন হলে একজন আহত হন। এর মধ্যে পাঁচজনই ছাত্রী।
শামসুন্নাহার হল ছাত্র সংসদের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে তার ‘পা ভেঙেছে’।
আগের দিন শুক্রবারের তীব্র ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হলের আতঙ্কিত তিন শিক্ষার্থী নিচে লাফ দিয়ে আাহত হন।
এমন প্রেক্ষাপটে সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও তৎপরবর্তী ঝাঁকুনির কারণে শিক্ষার্থীদের ‘শারীরিক ও মানসিক আঘাতের’ বিষয়টি বিবেচনা করা হয় বলে সভা শেষে পাঠানো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
এতে বলা হয়, তাদের সার্বিক নিরাপত্তার দিক সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। সভায় বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক এবং প্রধান প্রকৌশলীর মতামত বিশ্লেষণ করা হয়।
“তাদের মতামত হল- ভূমিকম্প পরবর্তী আবাসিক হলসমূহের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সামগ্রিক ঝুঁকি মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার। এই ঝুঁকি নিরূপণ ও সম্ভাব্য সংস্কারের স্বার্থে আবাসিক হলগুলো খালি করা প্রয়োজন।”
এ কারণে সভায় আগামী ৬ ডিসেম্বর শনিবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা এবং আবাসিক হলসমূহ খালি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। শিক্ষার্থীদের রোববার বিকাল ৫টার মধ্যে হল ছাড়তে বলা হয়।
ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস খোলা থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।