শনিবার ২২ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩২, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

ফের ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ নরসিংদীতে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৫ এবার রেকর্ড সংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক ভোট দেখবে যুদ্ধবিরতিতেই গাজায় অন্তত ৬৭ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে: ইউনিসেফ হোয়াইট হাউসে উষ্ণ সাক্ষাতে মামদানিকে প্রশংসায় ভাসালেন ট্রাম্প স্পেনে কয়লাখনি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২ ভিয়েতনামে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৫ জনে দাঁড়িয়েছে ঢাকায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা কুষ্টিয়ায় ‘আধিপত্যের জেরে’ কৃষককে গুলি করে হত্যা নতুন হল ভবনের দাবি: কর্মচারীদের ফ্ল্যাটে রাত্রিযাপন ঢাবি শিক্ষার্থীদের ৫.৭ মাত্রার ঝাঁকুনি দিল ‘বড় বিপর্যয়ের’ সতর্কবার্তা ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০, আহতও অনেক ভারতকে সুপার ওভারে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক

হোয়াইট হাউসে উষ্ণ সাক্ষাতে মামদানিকে প্রশংসায় ভাসালেন ট্রাম্প

 প্রকাশিত: ১৪:০৪, ২২ নভেম্বর ২০২৫

হোয়াইট হাউসে উষ্ণ সাক্ষাতে মামদানিকে প্রশংসায় ভাসালেন ট্রাম্প

কয়েক মাস ধরে একে অপরকে যেভাবে অপমান করছিলেন, তাতে হোয়াইট হাউসে ডনাল্ড ট্রাম্প আর জোহরান মামদানির বৈঠকে কী তুলকালাম বাঁধে তা নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ ছিল।

কিন্তু তাদেরকে হতাশ করে শুক্রবারের বৈঠকে দুজনই বেশ বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করেছেন, একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসেছেন, প্রশংসা করেছেন এবং জনসংখ্যার বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউ ইয়র্কে অপরাধ দমন ও ব্যয় সাশ্রয়ে একসঙ্গে কাজ করার আশ্বাসও দিয়েছেন।

রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি দুজনের। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রিপাবলিকান ধনকুবের, অন্যদিকে কিছুদিনের মধ্যে নিউ ইয়র্কের মেয়রের দায়িত্ব নিতে যাওয়া মামদানি তরুণ ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’। অভিবাসন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক নীতি, প্রায় সবকিছু নিয়েই দুজনের বিবাদ পরিষ্কার।

তারপরও এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে প্রথম সাক্ষাতে দুজনের মধ্যেই এক ধরনের সখ্য গড়ে উঠেছে, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

নিউ ইয়র্ক রাজ্যের ৩৪ বছর বয়সী আইনপ্রণেতা মামদানি ওভাল অফিসে ট্রাম্পের ডেস্কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ৭৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্টকে তার দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখা গেছে, কখনো কখনো হাতে আলতো উষ্ণ খোঁচাও দিয়েছেন। অথচ ক’দিন আগেই তিনি নিউ ইয়র্কের পরবর্তী মেয়রকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী কমিউনিস্টসহ’ নানা নামে কটাক্ষ করেছিলেন।

মামদানির সঙ্গে একান্ত বৈঠক শেষে ওভাল অফিসে সাংবাদিক ও ক্যামেরা ঢোকার অনুমতি দেন ট্রাম্প। এরপর বলেন, “আমি যতখানি ভেবেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু নিয়ে আমরা একমত হয়েছি। আমাদের মধ্যে একটা মিল তো আছেই, আমরা দুজনই চাই আমাদের প্রিয় শহরটি (নিউ ইয়র্ক) ভালোভাবে এগিয়ে যাক।”

ওভাল অফিসে এর আগে ট্রাম্পের কথার তোড়ে অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানই বিপদে পড়েছিলেন। তবে মামদানির ক্ষেত্রে সেরকম কিছু হবে না বলে ট্রাম্প আগেই আভাস দিয়ে রেখেছিলেন। শুক্রবারের বৈঠকের আগে তিনি বলেছিলেন, নিউ ইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়রের সঙ্গে তার বৈঠক ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ হতে পারে।

তবে এতটা যে হবে, তা সম্ভবত অনেকে ধারণাই করতে পারেননি।

“প্রেসিডেন্টের যে বিষয়টি সত্যিই প্রশংসা করার মতো তা হলো- আমাদের বৈঠকে আমরা ভিন্নমতের দিকে নজরই দিইনি, আমাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, আমরা বরং নজর দিয়েছি নিউ ইয়র্কবাসীর সেবায় আমাদের মিলিত উদ্দেশ্য নিয়ে,” বলেছেন মামদানি।

নিউ ইয়র্কে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করে খ্যাতি কুড়ানো ট্রাম্প ১ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কের দায়িত্ব নিতে যাওয়া মামদানির মুখে শহরটিতে আরও আবাসনের ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার শুনে উচ্ছ্বসিত হন।

নিউ ইয়র্কের অনেক ভোটার, যারা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু এবার মামদানিকে, তাদের কথা শুনেও উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন তিনি।

“যখন আমরা সেই ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছি, যারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন, তাদের মুখেও আমরা জীবনযাত্রার ব্যয়ের কথাই শুনেছি,” বলেন মামদানি।

ব্যয় সাশ্রয় ও মূল্যস্ফীতির দিকে নজর দিয়েছেন বলে দাবি করা ট্রাম্প এসব বিষয়ে মামদানির প্রশংসা করে বলছেন, “তার কিছু ভাবনা আমার ভাবনার সঙ্গে মেলে। তিনি যত ভালো করবেন, আমি ততই খুশি হবো।”

৪ নভেম্বর নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে মামদানির জয়ের পর ট্রাম্প নিউ ইয়র্কে কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে অর্থ ছাড় আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। অন্যদিকে মামদানিও শহরটিতে কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্মকর্তাদের মোতায়েন ও তাদের হাতে বেশি ক্ষমতা তুলে দিতে প্রেসিডেন্টের আকাঙ্ক্ষার কড়া সমালোচনা করেছেন। নিউ ইয়র্ক এমন এক শহর যার ৪০ শতাংশ বাসিন্দার জন্মই বিদেশে।

বৈঠকের কয়েক সপ্তাহ আগেও ট্রাম্প মামদানিকে নিয়ে ‘উগ্র পাগল বাম’, ‘কমিউনিস্ট’, ‘ইহুদিদের ঘৃণা করে’ এমন কত কিছু বলেছেন।

মামদানি মূলত নর্ডিক ঘরানার গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের ভক্ত, কমিউনজমের নন। তিনি ইসরায়েলের কঠোর সমালোচক হলেও খ্যাতনামা ইহুদি রাজনীতিকরা নিউ ইয়র্কের নির্বাচনে তাকেই সমর্থন জানিয়েছিলেন। মামদানির নতুন প্রশাসনে নিউ ইয়র্ক পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশসহ একাধিক ইহুদি ধর্মাবলম্বীকে দেখা যাচ্ছে। তিনি নিয়মিত ‘অ্যান্টিসেমেটিজমের’ বিরোধিতাও করে আসছেন।

শুক্রবার প্রথম দেখা হওয়ার ঘণ্টাখানেকেরও কম সময়ের মধ্যে সাংবাদিকদের প্রশ্নের বান থেকে মামদানিকে বাঁচাতে ট্রাম্পকে নিয়মিতই ঢাল হয়ে দাঁড়াতে দেখা গেছে।

একে অপরকে কী কড়া কড়া ভাষায় ‍অপমান করেছিলেন, তা মনে করিয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুজনকে হেসে উঠতেও দেখা যায়।

“আমাকে স্বৈরশাসকের চেয়েও খারাপ কিছু ডাকা হয়েছে। তাই এটা তেমন অপমানজনক নয়, একসঙ্গে কাজ করার পর তার মত বদলাবে বলেই আমার বিশ্বাস,” বলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পকে এখনো ‘ফ্যাসিস্ট’ মনে করেন কিনা, সাংবাদিকরা মামদানির কাছে এ প্রশ্ন করলে ট্রাম্প তাকে অস্বস্তির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে বলেন, “ঠিক আছে, তুমি ‘হ্যাঁ’ বলতে পারো, ব্যাখ্যা করার চেয়ে এটা সহজ।”

উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানিই হতে যাচ্ছেন নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র। তাকে নানান ইসলামবিদ্বেষী কটূক্তিও সহ্য করতে হয়েছে। তবে শুক্রবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প নিউ ইয়র্কের এ ডেমোক্র্যাটের পক্ষই নিয়েছেন।

এক সাংবাদিক প্রেসিডেন্টের কাছে জানতে চান, মামদানিকে তিনি ‘জিহাদি’ মনে করেন কিনা?

“না, আমি মনে করি না। আমার সঙ্গে এমন একজনের দেখা হল, যিনি খুবই বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন যৌক্তিক মানুষ,” জবাবে বলেন ট্রাম্প।

তাদের এই ‘অপ্রত্যাশিত সখ্য’ ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান দুই শিবিরেই বেশ অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে। বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান বলেছেন, ট্রাম্প প্রশংসা করলেও তারা মামদানিকে মোটেও বিশ্বাস করেন না।

“এখন এটা কী হল?” ট্রাম্প-মামদানি বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠকের ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের হতাশা গোপন করেননি মিশিগান থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা রাশিদা তালিবও।

মামদানি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিজের জন্ম শহরে ফেরার কথা বিবেচনা করবেন কিনা, এক সাংবাদিক শুক্রবার প্রেসিডেন্টকে এ প্রশ্নও করেছিলেন।

“হ্যাঁ, করবো। বিশেষ করে এই বৈঠকের পর তো অবশ্যই,” বলেন মামদানিতে মুগ্ধ ট্রাম্প।