শনিবার ২৫ অক্টোবর ২০২৫, কার্তিক ১০ ১৪৩২, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রেকিং

ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের ‘আজ্ঞাবহ’ সরকার প্রতিষ্ঠা মেনে নেবে না : প্রতিরক্ষামন্ত্রী উত্তর কোরীয় নেতা কিমের সঙ্গে সাক্ষাতে আগ্রহী ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় দুর্ভিক্ষ কমেনি : ডব্লিওএইচও চতুর্থ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবেন ব্রাজিলের লুলা রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে সহায়তার পথে অগ্রগতি ইইউ’র আমেরিকার কাছে ভেনিজুয়েলার মাদুরো: ‘দয়া করে কোনো পাগলাটে যুদ্ধ নয়!’ দেশের ৩ বিভাগে বৃষ্টির আভাস | পলাতক আসামি প্রার্থী হতে পারবে না, সংশোধিত আরপিও অনুমোদন কিছু দল নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে, জনগণ সেই ফাঁদে পা দেবে না: মির্জা ফখরুল ডেঙ্গু: হাসপাতালে ভর্তি ৬৩ হাজার ছাড়াল শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যা প্রমাণ করেছি সেটা সন্দেহাতীত : এটর্নি জেনারেল হাসিনা পালিয়ে যাননি, চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে: আইনজীবী টাইফয়েড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ-হালাল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত টোগো বাস দুর্ঘটনায় ৫ ফরাসি দাতব্য কর্মী নিহত ক্যাম্বোডিয়ায় সাইবার জালিয়াতির অভিযোগে দ. কোরিয়ার ৫৭ ও চীনের ২৯ জন নাগরিক গ্রেফতার প্রথম যৌথ সম্মেলনে মিসরকে ৪ বিলিয়ন ইউরো সহায়তা ইইউ’র ট্রাইব্যুনালে হাসিনার রায় কবে, জানা যাবে ১৩ নভেম্বর অতীতের ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জামায়াত আমির রোববারের মধ্যে যুবলীগ নেতা সম্রাটকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ প্যাসিফিক জিনসের আট কারখানা সচল, মালিক-শ্রমিক-পুলিশে স্বস্তি প্রবাসী করদাতাদের জন্য ই-রিটার্ন দাখিল সহজ হল জুলাই আন্দোলন: ইরেশ যাকেরকে অব্যাহতি দিতে দেখানো হলো তিন কারণ আরও ৩০ ফিলিস্তিনির লাশ হস্তান্তর করল ইসরায়েল কোনো ফরম্যাট থেকে অবসর নিইনি, দেশের মাটিতে বিদায় নিতে চাই: সাকিব

জাতীয়

অবশেষে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করল সরকার

 প্রকাশিত: ১৮:৪২, ১ আগস্ট ২০২৪

অবশেষে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করল সরকার

একাত্তরে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত’ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।

২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী জামায়াত এবং এর সকল অঙ্গ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা জামায়াতকে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে তারা রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পায়।

দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল তখন থেকেই। চার দশক পর সেই দাবি পূরণ হল, যদিও যুদ্ধাপরাধের জন্য জামায়াতের বিচারের দাবি এখনও অপূ্র্ণ রয়ে গেছে।

সরকারের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই- ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।

পাশাপাশি হাই কোর্ট এক রিট মামলার রায়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও তা বহাল রেখেছে।

“যেহেতু, সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রহিয়াছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল;

“এবং যেহেতু, সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সহিত জড়িত রহিয়াছে;

“সেহেতু, সরকার, সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসাবে তালিকাভুক্ত করিল।”

সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

যেভাবে এল নিষেধাজ্ঞা

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আলোচনায় থাকলেও বিষয়টি গতি পায় সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতার পর।

২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জুনের শেষে হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্ররা ফের মাঠে নামে। জুলাইয়ে তা সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে একপর্যায়ে তা সহিংসতায় গড়ায়।

এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা শুরু হয়। রামপুরায় বিটিভি ভবন, বনানীতে সেতু ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাংচুর করে আগুন দেওয়া হয় এক্সপ্রেসওয়ের মহাখালীর টোল প্লাজা এবং মেট্রোরেলের দুইটি স্টেশনে।

এই আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতের মধ্যে এক সপ্তাহে ১৫০ মানুষের মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করেছে সরকার, যদিও সংবাদমাধ্যমের খবরে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে।

সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে নাশকতা করেছে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী, আর তাতে মদদ দিয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপি।

এই প্রেক্ষাপটে গত সোমবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়। এরপর মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে এবং কোন আইনি প্রক্রিয়ায় তা করা হবে, তা চূড়ান্ত করা হবে বুধবারের মধ্যে।

বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াত- শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি বলেন, “এই সবকিছু (আন্দোলনে সহিংসতা) তো ছাত্ররা করেনি। ছাত্রদের পেছনে রেখে পেছন থেকে যারা করেছে সেগুলো জামায়াত-শিবির-বিএনপি। অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল। এটাই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। সেজন্য অনেক দিনের যে চাহিদা ছিল যে, জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করার, আজকে সেই প্রক্রিয়াটি চলছে।”

জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বুধবারই জারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া সারতে একদিন সময় লেগে যায়।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকালে আইন মন্ত্রণালয়ে নথি পাঠিয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং করে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। ‘কিছুক্ষণের মধ্যে’ প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

এরপর বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরপাত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

যে আইনে নিষিদ্ধ

জামায়াত এবং এর সকল অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারার ক্ষমতাবলে।

সেখানে বলা হয়েছে, “এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে।”

আইনে সন্ত্রাসী কাজের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনো অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোন সত্তা বা কোনো ব্যক্তিকে কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করার জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা করার চেষ্টা করে, এ ধরনের কাজের জন্য অন্য কারো সঙ্গে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা প্রজাতন্ত্রের কোনো সম্পত্তির ক্ষতি করে বা করার চেষ্টা করে; অথবা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে বা নিজ দখলে রাখে, কোনো সশস্ত্র সংঘাতময় দ্বন্দ্বের বৈরি পরিস্থিতিতে অংশ নেয়, তাহলে তা ‘সন্ত্রাসী কাজ’ বলে গণ্য হবে।

এ আইনে কোনো অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।