বৃহস্পতিবার ২০ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৬ ১৪৩২, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

খেলা

শত টেস্টের গৌরবে শতরানের হাসি মুশফিকের

 প্রকাশিত: ১২:২৮, ২০ নভেম্বর ২০২৫

শত টেস্টের গৌরবে শতরানের হাসি মুশফিকের

একটি রানের অপেক্ষা এতটা দীর্ঘ আর কবে ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে! আগের দিনের শেষ বিকেলের মরে আসা আলো থেকে নতুন দিনের সকালের মিঠে রোদে মিশে ছিল ওই একটি রানের তেষ্টা। রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা তো ছিলই, খানিকটা ছিল উৎকণ্ঠাও। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটি এলো দিনের নবম ডেলিভারিতে। মাইলফলকের ম্যাচে ইতিহাসের ঠিকানায় পৌঁছে গেলেন মুশফিকুর রহিম।

এই ম্যাচ এমনিতেই মুশফিকের টেস্ট। তার শততম টেস্ট ঘিরে কত উদ্যোগ, কত আবগের ভিড়, তার ক্যারিয়ার উদযাপনের কত আয়োজন। ব্যাট হাতেও সেঞ্চুরি করে তিনি পূর্ণতা দিলেন উপলক্ষকে, সত্যিকার অর্থেই তিনি ম্যাচকে করে তুললেন মুশফিকময়।

আগের দিন শেষ সময়ে নাটকীয়তার পর ৯৯ রানে অপরাজিত রয়ে যান মুশফিক। এক রানের দূরত্বে নতুন দিনে তিনি স্ট্রাইকেই ছিলেন দিনের প্রথম বলে। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার ম্যাথু হামফ্রিজের করা প্রথম ওভারে পাননি ওই এক রানের দেখা। এর মধ্যে জোরাল আবেদন হয় এক ডেলিভারিতে, আরেকটিতে অল্পের জন্য ব্যাটের কানা স্পর্শ করেনি বল। উৎকণ্ঠা আর প্রতীক্ষা বাড়তে থাকে।

তবে খুব বেশি দীর্ঘায়িত হয়নি তা। অ্যান্টি-ক্লাইম্যাক্সের জন্মও হয়নি। পেসার জর্ডান নিলের করা পরের ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গল নেন লিটন কুমার দাস। ওভারের তৃতীয় ডেলিভারি স্কয়ার লেগে দিকে ঠেলে সেই একটি রানে নিজেকে রাঙান মুশফিক।

বিভিন্ন সময়ে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে দেখার মতো অনেক উদযাপন তিনি করেছেন। এবার বিশেষ উপলক্ষে অবশ্য বিশেষ কিছু দেখা যায়নি। চেনা উদযাপন আর চওড়া হাসিই ছিল তার সেঞ্চুরির অলঙ্কার।

এরপর খুব বেশি সময় আর টিকতে পারেননি তিনি। হামফ্রিজের বাড়তি লাফানো দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে আউট হয়ে যান তিন ১০৬ রানে। দ্বিতীয় স্লিপে দারুণ ক্যাচ নেন আইরিশ অধিনায়ক আন্ড্রু বালবার্নি।

আগের দিন মুশফিক যখন ক্রিজে যান, বাংলাদেশ তখন ৯৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে। তার জন্য অবশ্য পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়, বছরের পর বছর এর চেয়েও কত কঠিন সময়েই তো ব্যাটে স্বস্তির পরশ পেয়েছে দল। এবারও তার ব্যাটিংয়ে চাপের লেশমাত্র ছিল না। ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে নির্ভরতা ছড়িয়ে চাপ সরিয়ে দেন তিনি। শুরুতে মুমিনুল হক ও পরে লিটন কুমার দাসের সঙ্গে গড়ে তোলেন বড় জুটি।

তার ব্যাটিংয়ের ধরনেই বোঝা যাচ্ছিল, বড় কিছু করতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কোনোরকম ঝুঁকি নেননি, প্রিয় অনেক শটের সঙ্গেও আপোস করেছেন। রিভার্স সুইপ, স্লগ সুইপ ও স্কুপ তো একদমই খেলেননি, প্রিয় সুইপ শটও খেলেছেন খুব কম। সেই মনোযোগ আর প্রতিজ্ঞার পথ ধরেই পৌঁছে গেলেন তিনি শতরানে।

ত্রয়োদশ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতরানের রেকর্ডে স্পর্শ করলেন তিনি মুমিনুল হককে।

টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় দেড়শ বছরের ইতিহাসে মুশফিকের আগে ১০০ ম্যাচ খেলেছেন ৮৩ ক্রিকেটার। উপলক্ষটি শতরানে রাঙাতে পারলেন কেবল ১১ জন।

১০০ টেস্ট খেলা প্রথম ক্রিকেটার কলিন কাউড্রেই মাইলফলকের ম্যাচে করেছিলেন সেঞ্চুরি। মুশফিকের সঙ্গে একটি মিলও আছে তার। ১৯৬৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে দিনের খেলা শেষে এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান অপরাজিত ছিলেন শতরানের কাছাকাছি গিয়ে। ৯৫ রানে অপরাজিত থেকে পরদিন পা রাখেন তিন অঙ্কে। এরপর আউট হয়ে যান ১০৪ রানে।

২১ বছর পর একজন সঙ্গী পান কাউড্রে। এই কীর্তিতে তার পাশে নাম লেখান জাভেদ মিয়াঁদাদ। কয়েক মাস পরই সেখানে যোগ হন গর্ডন গ্রিনিজ।

এরপর ১০ বছরের অপেক্ষা। ২০০০ সালে ইংল্যান্ডের অ্যালেক স্টুয়ার্ট যোগ হন এই তালিকায়।

২০০৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ১৮৪ রানের ইনিংস খেলে সবাইকে ছাড়িয়ে যান ইনজামাম-উল-হাক। শততম টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড গড়েন তিনি।

পরের বছর অনন্য কীর্তি গড়েন রিকি পন্টিং। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শততম টেস্টের দুই ইনিংস্‌ শতরান করেন সেই সময়ের অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। এখনও পর্যন্ত তার কীর্তির পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি কেউ।

পরে দুই দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রেট গ্রায়েম স্মিথ ও হাশিম আমলা শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করেন ২০১২ ও ২০১৭ সালে।

ইনজামামের ১৮৪ ছাড়িয়ে জো রুট ইতিহাস গড়েন ২০২১ সালে। শততম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির প্রথম নজির গড়েন তিনি। ভারতের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে ইংলিশ ‘গোল্ডেন বয়’ আউট হন ২১৮ রানে।

পরের বছর ডাবল সেঞ্চুরি করেন ডেভিড ওয়ার্নারও। তবে আউট হয়ে যান তিনি ঠিক ২০০ রানেই।

মুশফিক অত দূর যেতে পারলেন না। তবে যতটা পথ পেরিয়েছেন, সেটিই হয়ে থাকবে অবিস্মরণীয়।