বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ভুলে যাওয়া রোগের লক্ষণ,জেনে নিন?

 প্রকাশিত: ১১:৩০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ভুলে যাওয়া রোগের লক্ষণ,জেনে নিন?

অ্যালজাইমার্স রোগ ও সহযোগী-স্মৃতিভ্রংশতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেক বছর ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব অ্যালজাইমার্স দিবস পালন করা হয়। ২০২২ সালে অ্যালজাইমার্স দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- ডিমেনশিয়া কী জানুন, অ্যালজাইমার্স কী জানুন।

অ্যালজাইমার্স রোগ হলো স্মৃতিভ্রংশতার একটি সাধারণ প্রকার। এটি একটি মস্তিষ্কের রোগ যার ফলে স্মৃতিশক্তি ও চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস পায়।  এটি মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয় যার ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, স্মৃতি পরিবর্তন, খামখেয়ালী আচরণ এবং শরীরের কার্যক্ষমতা কমে যায়। অ্যালজাইমার্স আক্রান্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘ দিনের পরিচিত বন্ধুর নাম, ঠিকানা, এমনকি রাস্তার নাম ও অন্যান্য অনেক কিছু ভুলে যা.

কোনটা স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার লক্ষণ আর কোনটা নয়?

বয়সের কারণে অনেক সময় স্বাভাবিক নিয়মেই স্মৃতিশক্তি কমে আসে। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। কীভাবে বুঝবেন কোনটা স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার লক্ষণ আর কোনটা নয়?

>>> কোনো মানুষের নাম ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু পরিচিত ব্যক্তিকে মনে করতে না পারা স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার লক্ষণ নয়। 

>>> মাঝে মাঝে কিছু ভুলে গেলেও সারাদিনের সব কাজ যদি ঠিকঠাক করতে পারেন তাহলে আপনি স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত, কিন্তু রোজকার জীবনের প্রয়োজনীয় কাজ, যেমন বিল দিতে ভুলে যাওয়া বা কীভাবে দিতে হবে ভুলে যাওয়া অ্যালজাইমারের লক্ষণ। 

>>> অনেক সময় স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার কারণে আমরা প্রয়োজনীয় জিনিস কোথায় রেখেছি ভুলে যাই। কিন্তু একেবারেই অপ্রত্যাশিত জায়গায়(যেমন চাবি ফ্রিজে রেখে দেওয়া)জিনিস রাখা বা প্রায়শই হারিয়ে ফেলা মানে অবশ্যই আপনার সমস্যা গুরুতর। 

>>> আজ কী বার? স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার কারণে অনেক সময়ই আপনি সপ্তাহের দিন ভুল করতে পারেন, কিন্তু যদি তারিখ, ঋতু, সময়ের প্রবাহমানতা গুলিয়ে যায় তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

>>> কথা বলার সময় অনেক সময়ই সঠিক শব্দ খুঁজে পাই না আমরা, তবে যদি দেখেন আপনার প্রিয়জন কথার খেই রাখতে পারছেন না, এক বক্তব্য থেকে আরেক বক্তব্যে চলে যাচ্ছেন, এই মুহূর্তে বলে পরের মুহূর্তে নিজেই ভুলে যাচ্ছেন তাহেল বুঝবেন অ্যালজাইমারের লক্ষণ প্রকট হচ্ছে। 

>>> রাস্তায় বেড়িয়ে দিক ঠিক করতে না পারার সমস্যায় আমরা অনেকেই ভুগি, কিন্তু পরিচিত রাস্তায় যদি বারবার হারিয়ে যান বা বাড়ির রাস্তা ভুলে যান তবে আপনি অ্যালজাইমারে আক্রান্ত। 

>>> অনেক সময় দিনটা ঠিকঠাক নিজের পরিকল্পনা মতো না চললে বা হঠাৎ পরিবর্তন এলে অনেকেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন, কিন্তু কোনো কারণ ছাড়া বিরক্ত হওয়া, ভয় পাওয়া, উত্কণ্ঠায় ভোগা বা সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়া অ্যালজাইমারের জোরালো লক্ষণ। 

>>> মাঝে মাঝে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া স্বাভাবিক, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে না পারা বা দুর্বল বিচারবুদ্ধির পরিচয়ও অ্যালজাইমারের লক্ষণ হতে পারে। 

>>> অফিসে, অনুষ্ঠানে ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক, কিন্তু অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা, পছন্দের কাজ করতে ভালো না লাগা মানে আপনার অবশ্যই কোনো সমস্যা হচ্ছে।

অ্যালজাইমারের সঙ্গে যাপন

>>> অ্যালজাইমারে অক্রান্ত হলে সবথেকে প্রথমে নিজেকে ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় দিন।

>>> পরিবারের ভালোবাসা, সাহায্য চান। নিজের পছন্দের কাজ করুন, স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন।

>>> সময়, স্থান ও ব্যক্তির পরিচয় ভুলে যাওয়া এই রোগে স্বাভাবিক। তাই একটি ডায়রিতে আপনার দরকারি কাজ, তারিখ, পরিবার, বন্ধুদরে নাম-ঠিকানা লিখে রাখুন।

>>> বইপড়া, খেলাধুলো, ক্রসওয়ার্ড পাজল সলভ করা বা বাদ্যযন্ত্র বাজালে অ্যালজাইমারের সঙ্গে বোঝাপড়া করা সহজ।

>>> সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে ব্যাপৃত রাখলে মস্তিষ্ক সচল থাকে, অ্যালজাইমারের সঙ্গে যোঝাও সহজ হয়।

>>> অ্যালজাইমারে আক্রান্ত মানুষদের বোঝা উচিত্ যে জীবনে বিভিন্ন রকম আবেগে থাকা স্বাভাবিক। তাই একা একা সময় না কাটিয়ে কাছের মানুষদের সঙ্গে আবেগের দোলাচল ভাগ করে নিন।

>>> মানসিক চাপ ও অবসাদের সঙ্গে ঠিকঠাক মোকাবিলা করতে পারলে পজিটিভ জীবনবোধ তৈরি হবে।

>>> নিজের খাওয়া দাওয়া ও শরীরচর্চার ওপর জোর দিন।

অ্যালজাইমারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে বসবাস

অপনার প্রিয়জন যদি অ্যালজাইমারে আক্রান্ত হন তবে তার সবথেকে বেশি প্রয়োজন আপনার সাহচর্য, কারণ এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। আপনার সচেতনতা ও সংবেদনশীলতার জোরে প্রিয়জন ভরসা পেতে পারেন।

অ্যালজাইমারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সবসময় চোখে চোখে রাখুন

অ্যালজাইমারে আক্রান্ত ব্যক্তির দেখাশোনা করা অনেক সময়ই চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। তাই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়া জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তি মাঝে মাঝেই খিঁটখিটে হয়ে উঠতে পারেন, বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারেন ভালোবাসা, সাহচর্য, ধৈর্য্য ও প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার মানসিকতা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সঙ্গ দিন।

মন্তব্য করুন: