খেলাপি ঋণের নিয়ম কঠোর করল বাংলাদেশ ব্যাংক
খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ঋণ পরিশোধের সময় গণনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; দুই শ্রেণিতে তা কমানো হয়েছে তিন মাস করে।
তবে নতুন সময় অনুযায়ী আদায় না হওয়া ঋণ শ্রেণিকরণে চার মাস সময় পাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
নতুন এ নিয়ম ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করার কথা বুধবার সার্কুলার দিয়ে ব্যাংকগুলোকে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় কমানোর কারণে খেলাপি ঋণ গণনার আগের নিয়ম আরও কঠোর করা হয়েছে।
সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তি পরিশোধ না করা ঋণকে ‘নন-পারফর্মিং’ ঋণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়; যা তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। ‘সাব-স্ট্যান্ডার্ড’ (নিম্নমান ঋণ), ‘ডাউটফুল’ (সন্দেহজনক ঋণ) ও ‘ব্যাড বা লস’ (খারাপ বা মন্দ ঋণ) হিসেবে এগুলো শ্রেণিকরণ করা হয়।
এর মধ্যে নিম্নমান ও সন্দেহজনক ঋণ খেলাপি ঋণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবং খারাপ বা মন্দ ঋণ সহজে আদায়যোগ্য নয় এমন খেলাপি ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই তিন ধরনের শ্রেণিকরণ করা বা খেলাপি ঋণ পরিশোধের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে ফেরত না দিলে সেগুলোকে শ্রেণিকরণ করতে তিন ধাপে সময় গণনা করা হয়।
বুধবারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত খেলাপি ঋণের এই তিন ধরনের শ্রেণিকরণ করার ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের সময় গণনার মেয়াদ কমিয়ে এনেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এখন থেকে সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ সময়সীমা ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে হলে তা ‘সাব-স্ট্যান্ডার্ড’ বা নিম্নমানের ঋণের শ্রেণিকরণ করা হবে; আগে যা ছিল ৩ থেকে ৯ মাস। অর্থাৎ ৩ মাস সময় কমানো হয়েছে। ঋণ গ্রহিতাদের ঋণ পরিশোধে আগের চেয়ে সময় কমল তিন মাস।
আবার সন্দেহজনক শ্রেণিকরণের ঋণের হিসাব নতুনভাবে করা হয়েছে ছয় থেকে ১২ মাস; যা আগে ছিল ৯ থেকে ১২ মাস। অর্থাৎ ৬ মাস পার হলেই তা সন্দেহজনক শ্রেণিতে পড়বে।
অপরদিকে ১২ মাস অতিক্রম করলে তা খারাপ বা মন্দ ঋণের শ্রেণিতে নেওয়া হবে, যেটির সময়সীমা আগেও একই ছিল।
সার্কুলারে বলা হয়, বিরূপমানে শ্রেণিকৃত ঋণের ক্ষেত্রে নিম্নমান হলে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনের ভিত্তির উপর ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক হলে প্রভিশনের ভিত্তির উপর ৫০ শতাংশ ও খারাপ বা মন্দ বা ক্ষতিজনক হলে প্রভিশনের ভিত্তির উপর ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। এ নির্দেশনা আগেও ছিল।
নানা অনিয়মে জর্জরিত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ গত কয়েক মাস থেকেই বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাদাগ তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসে তা আগের তিন মাসের চেয়ে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা বেড়ে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। এটি বিতরণ করা ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা।
জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। তারও তিন মাস আগে মার্চ শেষে ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে ব্যাংকের প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয় বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নিয়মিত বা ভালো ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের প্রভিশন রাখতে হয় ১ বা ২ শতাংশ। কিন্তু, খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন জমা রাখতে হয়।
ব্যাংকের স্বাস্থ্য রক্ষা ও আমানতকারীদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখার জন্যই প্রভিশন রাখার এ ব্যবস্থা। খেলাপি হওয়া ঋণ উদ্ধার করার ঝুঁকি বিবেচনায় এর বিপরীতে নগদ টাকা প্রভিশন রাখার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত প্রভিশন রাখতে গিয়ে অনেক ব্যাংক প্রয়োজনীয় মূলধন রাখতে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। কেননা, দিন শেষে মূলধন থেকে তহবিল সরিয়ে তা প্রভিশন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকগুলোকে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত দিনের পরবর্তী দিন হতে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হবে।