সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কুমিল্লার খাদি হবে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড

ধর্ম মত নির্বিশেষে সবাই আমরা এক পরিবারের সদস্য: প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতা অপরিহার্য : পরিবেশ উপদেষ্টা কার্নিশে ঝুলে থাকা ছাত্রকে গুলির মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ বৃহস্পতিবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কুমিল্লার খাদি হবে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রসিদ্ধ কাঁচাগোল্লা নাটোরের ঐতিহ্য।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কুমিল্লার খাদি হবে
কুমিল্লার খাদি তৈরি করছেন একজন তাঁতী।
কুমিল্লা, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ভারতীয় উপমহাদেশের আদি পোশাক শিল্পের অংশ হিসেবে ‘কুমিল্লার খাদি’ এক ঐতিহ্যবাহী নাম। সম্প্রতি কুমিল্লার খাদি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। কিন্তু সেই চাহিদা পূরণে পণ্য উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ ও বাজারজাতকরণে প্রয়োজন সুপরিকল্পিত উদ্যোগ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে ‘কুমিল্লার খাদি’ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বে জায়গা করে নিতে সক্ষম।
বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে খাদি একটি অনন্য নাম। হাতে কাটা সুতায় তৈরি এই কাপড় কেবল একটি পোশাক নয়, বরং বাঙালির আত্মপরিচয়, আত্মনির্ভরতা ও সংগ্রামী ঐতিহ্যের প্রতীক। কুমিল্লাকে খাদির আদি কেন্দ্র বলা হয়। শত শত বছর আগে এখানকার তাঁতিদের হাতে বোনা খাদি কাপড় সুনাম কুড়িয়েছিল সমগ্র ভারতবর্ষে। আজও খাদির প্রসঙ্গ উঠলেই কুমিল্লার নাম বিশেষভাবে উচ্চারিত হলো।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নানা প্রতিকূলতার কারণে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি শিল্প অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে সস্তা বিদেশি কাপড়ের আগ্রাসন, আধুনিক মেশিনে তৈরি পণ্যের দাপট, দক্ষ শ্রমিকের অভাব, আর্থিক সহায়তা ও বাজারজাতকরণে সরকারি উদ্যোগের সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁতের খাদি এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তারা জানান, জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর খাদির চাহিদা বেড়েছে। তবে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত উৎপাদন নিশ্চিত করতে সরকারি সহায়তা একান্ত জরুরি।
ঐতিহাসিক দলিল অনুযায়ী, কুমিল্লার খাদি শিল্পের সূচনা মোগল আমলে হলেও এর প্রকৃত বিকাশ ঘটে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে খাদি ব্যবহারে উৎসাহিত করলে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে বাড়ে। সেই বছরই গান্ধীজি কুমিল্লা সফরে এসে খাদি ব্যবহারের প্রতি মানুষের আগ্রহ জাগিয়ে তোলেন। চরকায় সুতা কাটা ও তাঁতে কাপড় বোনার মধ্য দিয়ে গ্রামীণ সমাজে খাদি এক আত্মনির্ভর অর্থনীতির প্রতীক হয়ে ওঠে।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) খাদি শিল্পের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়। কুমিল্লায় গড়ে ওঠে একাধিক খাদি পল্লি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা সংকটে পড়ে এ শিল্প। আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, বিদেশি কাপড়ের প্রতিযোগিতা এবং বাজারজাতকরণের দুর্বলতায় খাদি শিল্প ধীরে ধীরে পুরোনো জৌলুস হারাতে থাকে। বর্তমানে সীমিত আকারে খাদি উৎপাদন টিকে আছে। আগে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উৎপাদন হলেও বর্তমানে চান্দিনা-মুরাদনগর উপজেলার কিছু গ্রামে হাতে তৈরি খাদির চর্চা চলছে। নগরীর কান্দিরপাড় থেকে রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড় লাকসাম সড়ক পর্যন্ত প্রায় ৩০০ দোকানে খাদি বিক্রি হয়। তবে এর বড় অংশই মেশিনে তৈরি। আসল তাঁতের খাদি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
দেবীদ্বার উপজেলার বড় কামতা গ্রামে বেঁচে আছেন শেষ প্রজন্মের দুই তাঁতী চিন্তাহরণ দেবনাথ ও রণজিৎ দেবনাথ।
চিন্তাহরণ দেবনাথ বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, মেশিনে তৈরি খাদি আর তাঁতের খাদি দেখতে একই হলেও মানের দিক থেকে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। যারা আসল খাদি চিনতে পারেন, তারা এখনও খুঁজে খুঁজে কিনে নেন।