তারেক এখনও ট্রাভেল পাস চাননি, জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
দেড় যুগ ধরে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত বিএনপি নেতা তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এখনও তিনি ট্রাভেল পাসই চাননি।
মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, “ট্রাভেল পাস…উনি চাইলে ইস্যু হবে।”
তখন সাংবাদিক জানতে চান, এখনও চান নাই?
উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, “আমার জানা মতে এখনও চান নাই।”
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক
কবে দেশে ফিরবেন, সেই আলোচনা সম্প্রতি তুঙ্গে রয়েছে। এর আগে বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, নভেম্বরে তিনি দেশে ফিরবেন।
এর মধ্যে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার আলোচনা জোরালো হয়।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, তার ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে।
৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
তাকে হাসপাতালে ভর্তির চারদিন পর বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘সংকটাময়’।
পরের দিন শুক্রবার তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই খালেদা জিয়ার।
খালেদা জিয়ার এমন অবস্থার মধ্যে শনিবার এক ফেইসবুক পোস্টে নিজের দেশে ফেরার বিষয়ে কথা বলেন ছেলে তারেক রহমান। তিনি বলেন, দেশে ফেরার বিষয়টি তার ‘একক নিয়ন্ত্রণাধীন’ নয়।
তার এমন বক্তব্যের পর সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই। তিনি দেশে ফিরতে চাইলে সহযোগিতার আশ্বাসও আসে একাধিক উপদেষ্টার কণ্ঠে।
এরপর সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা থেকে বেরিয়ে কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “উনি শিগগিরই চলে আসবেন ইনশাআল্লাহ।”
এর মধ্যে সোমবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারেকের ঢাকার পথে রওনা হওয়া এবং তার ঢাকার পৌঁছার বিভিন্ন তারিখ দিতে থাকেন অনেকে।
রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে একদিনের মধ্যেই তাকে ‘ওয়ান টাইম পাস’ দিতে পারবে সরকার।
ওইদিন এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটার নিয়ম হচ্ছে যে, যখন পাসপোর্ট থাকে না বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বলে, তখন কেউ যদি আসতে চান, তাহলে তাকে আমরা ওয়ান টাইম পাস একটা দিয়ে দিই, একবার দেশে আসার জন্য।
“তো, এটাতে একদিন লাগে। কাজেই এটা উনি যদি আজকে বলেন যে, উনি আসবেন, আগামীকাল হয়ত আমরা এটা দিলে পরশুদিন প্লেনে উঠতে পারবেন। কোনো অসুবিধা নাই। এটা আমরা দিতে পারব।”
তারেক রহমানের কোনো পাসপোর্ট আছে কি না, মঙ্গলবার এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “এটা বলতে পারব না আমি।
আরেক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারেক রহমানের ফেরার বিষয়ে ‘সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য’ তার কাছে নেই।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, উপদেষ্টা এককালীন ট্রাভেল পাসের কথা বললেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েই ফিরতে চান।
খালেদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একটি সূত্র সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ‘স্পেশাল কেয়ারে’ রাখা হয়েছে।
বিএনপি সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিতে সম্মত হয়েছে চীন। তারা তাকে চীনে নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে খালেদা জিয়ার পরিবার, বিশেষ করে ছেলে তারেক রহমান তাকে যুক্তরাজ্যে নিতে চান। গত ১৭ বছর ধরে সেখানেই নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে আসছেন তারেক।
চীন থেকে আসা মেডিকেল টিম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন ও মেডিকেল নথি দেখে বলেছেন, তাকে ‘বিপদমুক্ত করা অসম্ভব নয়’।
চীনা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যদি পাওয়া যায়, তাহলে মাঝে জ্বালানি নিতে দুবাই বা অন্য কোনো বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করতে হবে। চলতি বছরের শুরুতে কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়াকে সরাসরি লন্ডনে নেওয়া হয়েছিল, সেই সুবিধা এখানে পাওয়া যাবে না।
চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ওটার প্রস্তুতি আছে, যদি প্রয়োজন (হয়), ডাক্তাররা বললেতো নিয়ে যাওয়া হবে।”
তাকে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে কত সময় লাগতে পারে, এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “এটা তো আমরা কনফার্ম হব না। এটা উনার আত্মীয়-স্বজন আর পার্টির লোকজন কনফার্ম করবেন যে, বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। অ্যারেঞ্জমেন্ট আছে।”