শনিবার ১৫ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩২, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

পরিসর ‘দ্বিগুণ’ হচ্ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার, হচ্ছে প্রাণী জাদুঘরও

 প্রকাশিত: ১১:২৩, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

পরিসর ‘দ্বিগুণ’ হচ্ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার, হচ্ছে প্রাণী জাদুঘরও

দশ একরের চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আয়তন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। সেইসঙ্গে নতুন করে প্রাণী আনার পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণামূলক কাজের জন্য প্রাণী জাদুঘর করার পরিকল্পনা নিয়েও এগোচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

ইতোমধ্যে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। নতুন করে আট একর জায়গা যুক্ত করা হচ্ছে। তাতে চিড়িয়াখানাটির আয়তন দাঁড়াবে ১৮ একরে।

চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাত হোসেন শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আট একর এলাকায় আছে টিলা, জঙ্গল, জলাধার। সেসব ঠিক রেখে এলাকাটি সংস্কার করে চিড়িয়াখানার আয়তন বাড়ছে।

“এতে করে ঘুরে বেড়ানোর এলাকা বাড়ার সঙ্গে দর্শনার্থীরা মনোরম পরিবেশও উপভোগ করবে।”

শুভ বলেন, “নুতন যুক্ত করা এলাকা জুড়ে হবে ‘অ্যাভিয়ারি’। হাতি, জিরাফ ও চিতার খাঁচা হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশে এসব প্রাণীর আবাসস্থল হবে। পাশাপাশি কিছু প্রাণীর খাঁচা সেখানে স্থানান্তর করে অন্য প্রাণীদের বাসস্থানের আয়তনও বাড়ানো হবে।”

১৯৮৯ সালে নগরীর ফয়’স লেক এলাকায় ছয় একর জমিতে নির্মিত হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এটি পরিচালনা করে। সরকারি অনুদান ছাড়া টিকেট বিক্রির নিজস্ব আয়ে প্রাণী সংগ্রহ, খাদ্য, কর্মচারীদের বেতনভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়ে থাকে।

বলা হয়, এটাই দেশের একমাত্র ‘লাভজনক চিড়িয়াখানা’।

দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এবং প্রাণী সংখ্যা ও বৈচিত্র্যের অপ্রতুলতার কারণে ‘শ্রীহীন হয়ে পড়েছিল’ চিড়িয়াখানাটি। ২০১৬ সালে এটি সংস্কার করে অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রাণীর সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

কয়েক দফায় বিভিন্ন সংষ্কার কাজের মাধ্যমে চিড়িয়াখানার আয়তন বাড়ানোর পাশাপাশি কাঠামোগত বেশকিছু পরিবর্তনও আনা হয়।

এবার নতুন করে আট একর জায়গায় জুড়ে সংস্কার, নতুন প্রাণী আনাসহ কয়েক কোটি টাকার কাজ হবে, যার সম্পূর্ণ অর্থায়ন চিড়িয়াখানার নিজস্ব তহবিল থেকে করার কথা রয়েছে।

চিড়িয়াখানায় দেখা গেছে, পশ্চিম পাশে ১ হাজার ৭০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট চওড়া সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৮১৫ বর্গফুটের দুই তলা ভবন।

অপরদিকে উত্তর-পশ্চিম দিকে পাহাড়ি টিলায় নির্মাণ করা হবে ২ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯ ফুট চওড়া একটি সড়ক। এ সড়কটি নতুন তৈরি করা সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে।

ডেপুটি কিউরেটর শুভ বলেন, “নতুন নির্মাণ করা দুই সড়কের মাঝে পাহাড়ি টিলা ও জঙ্গলের মধ্যে হবে ২০০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট উচ্চতার ‘অ্যাভিয়ারি’। এর মাঝ দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারবে।

প্রাণী জাদুঘর

চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা শুভ বলেন, “চিড়িয়াখানার মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে সংরক্ষণ, গবেষণা, শিক্ষা ও বিনোদন। চিড়িয়াখানায় এবার আমরা প্রাণী জাদুঘর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

“আমাদের বর্তমান কার্যালয় ভবনটি চিড়িয়াখানার প্রবেশমুখেই। নতুন ভবনে চলে যাবে চিড়িয়াখানার কার্যালয়। আর বর্তমান ভবনটির নিচ তলায় হবে প্রাণী জাদুঘর এবং দ্বিতীয় তলায় হবে ‘স্যুভেনিয়ার শপ’।”

তিনি বলেন, “প্রাণী জাদুঘরটি কাঁচ দিয়ে ঘেরা হবে। সেখানে থাকবে বিভিন্ন প্রাণীর কঙ্কাল। দেয়ালে টাঙানো থাকবে সংরক্ষণ করা চামড়া। এ জাদুঘরটি থেকে দর্শনার্থীরা প্রাণী সম্পর্কে জানতে পারবে। শিক্ষার্থীরা তাদের অ্যাকাডেমিক এবং গবেষণাগত কাজ করতে পারবে।”

চিড়িয়াখানা নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি খাস জমিতে। ২০১৬ সালে চিড়িয়াখানার পশ্চিম পাশে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়।

শুভ বলেন, সংস্কার কাজ করতে আমারদের শঙ্কা ভূমিদস্যুরা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। গেল বছরের ৫ অগাস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চিড়িয়াখানার সীমানাপ্রাচীর ভেঙ্গে বহিরাগতরা প্রবেশ করেছিল। তারা বেশকিছু মালামালও লুট করেছে।

“চিড়িয়াখানার নিচে যে স্থানে এখন সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে সে স্থানে গত ৫ অগাস্টের পর এক বছর সেখানে সংশ্লিষ্ট কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়। গত তিন মাস আগে থেকে আমরা সেখানে যেতে পারছি এবং কাজ শুরু করেছি।”

চিড়িয়াখানাটিতে বর্তমানে পাঁচটি সাদা বাঘসহ ১৭টি বাঘ, সিংহ, জলহস্তিসহ অন্তত ৬৮ প্রজাতির ৫২০টি প্রাণী রয়েছে। যার মধ্যে আছে ৪৫ প্রজাতির পাখি। নগরবাসীর অন্যতম বিনোদনের স্থান এটি।