শনিবার ১৫ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩২, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

হত্যার দুদিন পর লাশ বাথরুমে নিয়ে ২৬ টুকরো করে শামিমা-জরেজ

 আপডেট: ১১:২০, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

হত্যার দুদিন পর লাশ বাথরুমে নিয়ে ২৬ টুকরো করে শামিমা-জরেজ

রাজধানীর কদমতলী দনিয়া শনিরআখড়া এলাকার একটি বাসায় রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর তার লাশ বাথরুমে নিয়ে ২৬ টুকরো করে শামিমা ও নিহতের বন্ধু জরেজ মিয়া। এদের মধ্যে জরেজ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। অন্যদিকে শামিমাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) একটি টিম।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি আরও বলেন, রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ের মাধ্যমে শামিমার সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে আশরাফুল হকের বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন শামিমা। এসব বিষয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।

এক পর্যায়ে কদমতলী এলাকার একটি বাসায় শামিমা ও তার পরকীয়া প্রেমিক জরেজ মিয়া দুজনে মিলে প্রথমে আশরাফুল হককে হত্যা করার পাশাপাশি লাশ সেই বাসার ভেতরে রেখে দেন। দুজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার দুদিন পর ১৩ নভেম্বর আশরাফুল হকের লাশ সেই বাসার বাথরুমে নিয়ে ২৬ টুকরো করেন তারা। পরে দুটি ড্রামে ভরে সিএনজিযোগে দুজন শাহবাগ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের কোণে পানির পামসংলগ্ন রাস্তায় রেখে পালিয়ে যান।

শফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার (১৫ নভেম্বর) গণমাধ্যমের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যার পরে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের কোণে পানির পামসংলগ্ন ফুটপাতে দুটি নীল রঙের ড্রামের ভেতর আশরাফুল হকের ২৬ টুকরো লাশ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। প্রথমে লাশের পরিচয় না পাওয়া গেলেও খণ্ডিত ফিঙ্গারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানতে পারেন উদ্ধার করা খণ্ড-বিখণ্ড লাশের নাম আশরাফুল হক, বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ এলাকায়।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে ২৬ টুকরো লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল কলেজ মর্গে। ময়নাতদন্তের আগে ২৬ খণ্ড লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাজিবুল আলম। তিনি সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দান সংলগ্ন রাস্তা থেকে দুটি নীল রংয়ের ড্রামের ভেতর থেকে থেকে ২৬ খণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট খণ্ডিত আঙুলের ছাপের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করেন। পরে নিহতের বোন আনজিরা বেগম সরাসরি তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।

নিহতের বোন আনজিরা বেগম বলেন, আশরাফুল গ্রামের বাড়িতে কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। স্ত্রী লাকী বেগম ও দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতেন। গত মঙ্গলবার এলাকার বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে ঢাকায় যান তার ভাই আশরাফুল হক। ব্যবসায়ীর কারণে অথবা অন্যান্য কারণে নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকজনের কাছে টাকা পেতেন আশরাফুল হক এমনটাই জানতো পরিবার।

তিনি আরও বলেন, আশরাফুলের স্ত্রী লাকী গত বুধবার আশরাফুল হকের সঙ্গে বহুবার মোবাইলে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। পরে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টার এক পর্যায় জরেজ মিয়া ফোনটি রিসিভ করে তাদের বলেন আশরাফুল হক খুবই ব্যস্ত আছে, তাদের সঙ্গে পরে কথা বলবে। পরিবারের কাছে বিষয়টি সন্দেহ হলে পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে স্ত্রী লাকী তার ভাইকে নিয়ে বদরগঞ্জ থানায় গিয়ে জানতে পারেন ঢাকায় ড্রাম থেকে খণ্ডিত একজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাজধানীর বাড্ডায় বসবাসকারী আনজিরা বেগম ভাইয়ের বউয়ের কাছ থেকে সংবাদ পাওয়ার পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে আশরাফুলের একটি ছবি ফেসবুকে দেখতে পান। পরে শাহবাগ থানায় গিয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হয়ে খণ্ডিত ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন। প্রথম থেকেই আশরাফুল হকের বন্ধু জরেজ মিয়াকে সন্দেহ করে আসছিলেন পরিবারের সদস্যরা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি জরেজ মিয়াকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরদিকে র‍্যাব জানিয়েছে, রংপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হত্যার পর ২৬ খণ্ড করার সঙ্গে জড়িত সেই নারী শামিমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৩ নভেম্বর দুপুরের দিকে একটি সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা যায় শামিমা একটি সিএনজি ভাড়া করে শনিরআখড়ার বাসার সামনে নিয়ে যান সেই ড্রাম বহন করার জন্য।

এ ঘটনায় শুক্রবার শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আশরাফুলের বোন আনজিরা বেগম। মামলায় আশরাফুলের বন্ধু জরেজ মিয়াকে প্রধান আসামি করা হয়।

জানা যায়, খুন হওয়া ব্যক্তিটি হলেন রংপুরের বদরগঞ্জের শ্যামপুর গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র আশরাফুল হক। তিনি পেশায় কাঁচামালের আমদানিকারক ছিলেন।