হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল
কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে ক্রমেই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও উত্তরের হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন নাকাল হয়ে পড়েছে। রাতভর বৃষ্টির মতো শিশির ঝরছে, ভোর হলেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে চরাঞ্চল।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, আজ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৮ শতাংশ। ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের দাপটে জেলার চরাঞ্চলগুলোতে শীতের অনুভূতি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
জেলার ১৬টি নদ-নদীর তীরবর্তী সাড়ে আটশ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত কুড়িগ্রামে রয়েছে ৪৬৯টি চর। এর মধ্যে ২৬৯টি চরে মানুষের বসবাস। যেখানে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। শীতপ্রবণ এসব চরাঞ্চলে হিমেল বাতাসে মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর ও নাগেশ্বরী এবং তিস্তা অববাহিকার রাজারহাট উপজেলার চরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি অনুভূত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালীর আলগা চরের ওয়ার্ড মেম্বার হোসেন আলী জানান, তার চরে প্রায় তিন হাজার মানুষের বসবাস। বৃদ্ধ ও শিশুসহ অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। শীতার্ত মানুষ প্রতিদিন তার বাড়িতে এসে ভিড় করছেন। তিনি বলেন, ‘লিস্ট করেছি, কম্বল পেয়ে যাবেন। এই আশ্বাসই দিতে হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো শীতবস্ত্র পাওয়া যায়নি।’
শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বৃদ্ধ, শিশু ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। ঠাণ্ডার তীব্রতায় অনেক দিনমজুর কাজে যেতে পারছেন না। ফলে আয় বন্ধ হয়ে পরিবার নিয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে তাদের।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, আগামী দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এতে শীতের মাত্রা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম জানান, জেলায় প্রায় ২৩ লাখ ২৯ হাজার মানুষের বসবাস। যার মধ্যে ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। সে হিসেবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ৪৯ হাজার। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষই চরে বসবাস করে। দুর্গম চরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় চরবাসীদের খোঁজ অনেক সময়ই কেউ রাখে না। জেলা প্রশাসনের কাছে আমাদের জোর দাবি, প্রকৃত শীতার্ত মানুষ যেন শীতবস্ত্র পায়।’
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, জেলার ৯ উপজেলায় শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বলসহ শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।
এদিকে শীতের তীব্রতা আরও বাড়লে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। দ্রুত, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের দাবি উঠেছে জেলার সর্বস্তরে।