শনিবার ০১ নভেম্বর ২০২৫, কার্তিক ১৭ ১৪৩২, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রেকিং

নির্বাচন পর্যন্ত ‘অপরিহার্য কারণ’ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ নয়: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অন্ধ্রপ্রদেশে মন্দিরে পদদলিত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু ৩০ ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল, গাজায় ফের হামলা পাঁচ বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস এসএমই খাতকে জাতীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে রূপান্তরের উদ্যোগ এক নামে ১০টির বেশি সিম থাকলে বন্ধ হবে শনিবার থেকে মার্কিন চাপের মুখে কলোম্বিয়ায় শান্তিরক্ষা সীমিত করার সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের জেনেজুয়েলায় আঘাত হানার কোনো পরিকল্পনা নেই: ট্রাম্প জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর আজ থেকে মিলবোর্ন সিটি: মেয়র, কাউন্সিলম্যান হচ্ছেন ৩ বাংলাদেশি মোহাম্মদপুরে বাসে তরুণীকে হেনস্তা, কন্ডাক্টর গ্রেপ্তার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

স্পেশাল

জয়পুরহাটের জন্য আতঙ্কের দিন ২৫ এপ্রিল

 প্রকাশিত: ১২:৫০, ২৩ এপ্রিল ২০২২

জয়পুরহাটের জন্য আতঙ্কের দিন ২৫ এপ্রিল

জয়পুরহাট জেলাবাসীর জন্য এক আতঙ্কের দিন ২৫ এপ্রিল।  ১৯৭১ সালের এ দিনে জয়পুরহাটে প্রবেশ করেই পাকিস্তানী  হানাদাররা সাধারণ মানূষের ওপর  অমানুষিক নির্যাতনের পাশাপাশি  শুরু করেছিল  গণহত্যা। এদিনের কথা মনে হলে আজও আঁতকে ওঠেন স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরা। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের দিক নির্দেশনামূলক ভাষণের পর থেকেই জেলায় আওয়ামীলীগ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ ( মোজাফফর) নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। জেলার আক্কেলপুর ষ্টেশনের অদূরে  হলহলিয়া রেলওয়ে ব্রীজের দক্ষিণ অংশে বিস্ফোরক ব্যবহার করে  উড়িয়ে দেয়াসহ রেল লাইনের দুপাশের গ্রামের সাধারণ মানুষেরা আক্কেলপুর থেকে সান্তাহারের কাছাকাছি পর্যন্ত রেল লাইনের বেশ কতকগুলো স্থানে লাইন উপড়ে ফেলে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। পূর্ব দিক থেকে আক্কেলপুর সদরে আসার প্রবেশ পথ নবাবগঞ্জ ঘাটের বাঁশ ও কাঠের তৈরি সাঁকো ভেঙ্গে দেয়। পাকিস্তানী সেনারা জয়পুরহাটে যাতে ঢুকতে  না পারে সে জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কালু মিয়া, শাকিল আহমেদ ও আবুল কালামের নেতৃত্বে  জয়পুরহাট-বগুড়া সড়কের হাড়াইল ছোট ব্রিজটি ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করা হয় এবং জয়পুরহাট ষ্টেশনের অদূরে উড়ি এলাকায় রেল লাইনের নাট বল্টু খুলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।  

মুক্তিযোদ্ধাদের সকল প্রকার প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরেও ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল শনিবার মধ্যরাতে ট্রেন যোগে পাকিস্তানী সেনারা প্রথম জয়পুরহাটে প্রবেশ করে এবং রেলস্টেশনেই প্রথম ক্যাম্প স্থাপন করে। ২৫ এপ্রিল জয়পুরহাট থানাসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালিয়ে জয়পুরহাটে আগমনের খবর দেয় পাক সেনারা।
 
 এদিন  খুব সকালে প্রথমে জয়পুরহাট থানা দখল করে। এখানে পাকিস্তানী সেনারাদের গুলিতে মারা যায় ২০/২২ জন। এভাবে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানী সেনারা। ওই দিনই জয়পুরহাট শহরের সিমেন্ট ফ্যাক্টরী এলাকা হাতিল বুলুপাড়া ও চকগোপাল মৌজার গাড়িয়াকান্ত  এলাকায়  ৩৬ জনকে ধরে এনে তাদের দিয়ে প্রথমে গর্ত করা হয়।  পরে  লাইন করে গুলি চালিয়ে সেই গর্তে
ফেলা হয় তাদের। হাতিল-বুলুপাড়াতে একই পরিবারের ৮ জনসহ ১৭ জনকে ও  চিনিকল সংলগ্ন বুলুপাড়া মাঠে ১০ জনকে সারিবদ্ধভাবে হত্যা করে পাকিস্তানী সেনারা। স্বাধীনতার ৫১ বছরেও এলাকা গুলো চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন  স্বজনরা। পূর্ব বাজারের দর্জি নাজির হোসেন ও আব্দুস সালাম নামে দু’জনকে হত্যা করা হয়। এসময় বাজার গলির রাম কুমার খেতান ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বের হলে তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। জয়পুরহাট সরকারি কলেজে প্রশিক্ষণ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার সরবরাহ করার অপরাধে পাঁচুরচক এলাকার লুৎফর রহমানকে ধরে এনে কয়লা ইঞ্জিনের ভেতর ঢুকে দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার বর্ণনা দেন সেই সময়ের ছাত্রনেতা তবিবর রহমান। 

সাধারণ মানুষের উপর নির্মম ভাবে নির্যাতন ও গণহত্যার খবর পেয়ে  শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও পাক-সেনাদের দিক নির্দেশনা দানকারী আব্দুল আলীমের (পরবর্তীতে আর্ন্তজাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে  আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত ও বর্তমানে মৃত)  বাড়ি ঘেরাও করে মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় মুসলিম লীগ ও জামায়াতের নেতা-কর্মিসহ তাদের গঠিত  রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা 
মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়ে আব্দুল আলীমকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জয়পুরহাট ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করায় আমরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে হলেও জেলা প্রশানের উদ্যোগে জয়পুরহাট জেলায় বধ্যভূমি গুলো চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে
এটিও আশার খবর বলে জানান, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও গবেষক আমিনুল হক বাবুল।   

জয়পুরহাট মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর শক্ত ঘাঁটি হওয়ার কারণে এখানে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। পাক-সেনাদের  শক্ত ঘাঁটি স্থাপনের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে তাদের  নির্মিত কংক্রিট ব্যাংকাটি জেলা বাসীর কাছে কালের সাক্ষী হয়ে আছে আজও। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব পালনকারী জাকারিয়া হোসেন মন্টু বলেন, জয়পুরহাটের গণহত্যা চলে আব্দুল আলীম ও আব্বাস আলী খানের দিক
নির্দেশনায়। বিশেষ করে আব্দুল আলীমের (যুদ্ধাপরাধী হিসাবে আমৃত্যু সাজা প্রাপ্ত এবং মৃত) প্রত্যক্ষ মদদে জয়পুরহাটে দেশের বৃহত্তর হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। ১৯৭২ সালে এদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হলে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। 

এ মামলায় স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার খনজনপুরের শামসুল আলমের ১০ বছর ও শহীদুল্লাহর ৭ বছর জেল হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও ক্ষমতার পালাবদলে রাজনৈতিক মামলা  হিসেবে সাজা মওকুফ করলে সকলেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যান। দালাল আইনের মামলার বিষয়ে জয়পুরহাট থানায় একটি রেকর্ড রয়েছে। দালাল আইনে বিভিন্ন ধারায় মোট ২৩ টি মামলা রয়েছে।