রোববার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৩০ ১৪৩২, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৮৭ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে ভারতীয় দূতকে ডেকে ফের অনুরোধ হাদিকে গুলি করে ফয়সাল, বাইকে চালক ছিলেন আলমগীর: পুলিশ হাদিকে গুলির ঘটনা মাথায় বাজ পড়ার মতো: সিইসি হাদিকে বিদেশে নেওয়ার ভাবনা জগন্নাথ হলের রাস্তায় আঁকা গোলাম আজমদের ছবি মুছে দিল প্রশাসন সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২ মার্কিন সেনাসহ নিহত ৩ অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি সৈকতে গুলিতে বন্দুকধারীসহ নিহত ১২ হাদিকে গুলি: সন্দেহভাজন মাসুদ ও তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

ইসলাম

প্রকৌশলবিদ্যার উন্নয়নে মুসলমানদের অবদান

 প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রকৌশলবিদ্যার উন্নয়নে মুসলমানদের অবদান

মুসলিম সভ্যতা এমন এক সময়ে বিকশিত হয়েছিল যখন আফ্রো-ইউরেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক বৃহত্ আঞ্চলিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ দূরত্বের বাণিজ্য, ধর্মের বিস্তার এবং জ্ঞান লিপিবদ্ধ করার ব্যাপক প্রচলন মানবচিন্তার বৃহত্ উত্তরাধিকার সংরক্ষণ করে রেখেছিল। প্রধান প্রধান সভ্যতা জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের মতো বিষয়কে এগিয়ে নিয়েছিল। আর দর্শন ও নীতিশাস্ত্র জ্ঞানতত্ত্বের নানা তত্ত্ব অনুসন্ধান করতে শুরু করেছিল। মানব মেধা তখন অনেক সমস্যার সমাধান করে ফেলেছিল। যেমন শুষ্ক ভূমিতে সেচ দেওয়া ও পানি সংরক্ষণ, ধাতু প্রক্রিয়াকরণ, সুতা ও প্রাকৃতিক কাপড় নিয়ে কাজ করা এবং খাদ্য সংরক্ষণের উপায় আবিষ্কার করা।

মুসলমানদের শাসনাধীনে ভূখণ্ডের সম্প্রসারণ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রসার বহু জনগোষ্ঠী ও অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছিল। ইতিহাসবিদদের মতে অষ্টম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত মানবিক বিনিময়ের মাধ্যমগুলো আরও বিস্তৃত ও ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। বাণিজ্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য মুসলমানদের বহু পণ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের উত্পাদন বৃদ্ধি করতে হয়েছিল। এর জন্য শহর, রাস্তা, বন্দর, বাঁধ ও সেতু নির্মাণের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও প্রকৌশল জ্ঞানের প্রয়োজন হয়েছিল। মুসলিম প্রকৌশলীরা পূর্ববর্তী সমাজগুলোর অর্জিত ধারণা ও অভিজ্ঞতাগুলোকে ধারণ করে তার সঙ্গে নতুন গণিতের জ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যার উন্নয়ন সাধন করেছিল। ফলে তারা এমন যন্ত্র, উপকরণ ও নির্মাণ কৌশল তৈরি করেছিলেন যা মানব দক্ষতা ও জ্ঞানকে আরও উন্নত করেছিল।

মুসলিম শাসনামলে মুসলিম বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে চীন, মধ্য এশিয়া ও ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে দূর পশ্চিমের আল-আন্দালুস ও উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত প্রযুক্তিগত ধারণা ও জ্ঞান ছড়িয়ে পড়েছিল। মুসলিম শাসকরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় রচিত বই সংরক্ষণের জন্য লাইব্রেরি নির্মাণ করেন, কারিগরি ও প্রকৌশল বিদ্যায় দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিদের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হতো। তারা নিত্য-নতুন ধারণা ও বিদ্যা নিয়ে ফিরে আসত। 

বানু মুসা বিন শাকিরের ভাইয়েরা (৮৫০ খ্রিস্টাব্দ) পূর্বাঞ্চলীয় মুসলিম এলাকার বিখ্যাত উদ্ভাবক ও প্রকৌশলী ছিলেন। তাঁরা প্রকৌশল বিষয়ে ২০টির বেশি বই অনুবাদ ও রচনা করেছিলেন। তাঁদের কিতাব আল-হিয়াল (The Book of Ingenious Devices)-এ প্রায় একশ ব্যবহারিক যান্ত্রিক যন্ত্রের বর্ণনা রয়েছে। তাঁদের কাজ আলেকজেন্দ্রিয়ার হেলেনিস্টিক যান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রভাব বহন করে বলে মনে হয়। কেননা তাঁরা তৃতীয় শতাব্দীর হিরো ও ফিলোর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদ করেছিলেন। বানু মুসা বিন শাকিরের কিছু যন্ত্র পূর্ববর্তী প্রযুক্তির সঙ্গে মিল থাকলেও অনেকগুলো স্বতন্ত্র ও তাদের চেয়ে অনেক উন্নত ছিল।

প্রকৌশলে কিছু যান্ত্রিক উপাদান আছে, তা যন্ত্রের এমন অংশ যেগুলো নানা কাজে ব্যবহূত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: এমন যন্ত্র যা তরলের স্রোত নিয়ন্ত্রণ করে এবং নির্দিষ্ট চক্রে খোলে-বন্ধ হয়; ক্র্যাংকশ্যাফ্ট ও গিয়ার যা শক্তি স্থানান্তর করে বা যন্ত্রের গতি ও চলন নিয়ন্ত্রণ করে; র্যাচেট যা গিয়ারকে নির্দিষ্ট দিক থেকে ঘোরা থেকে বাধা দেয় এবং এমন অংশ যা যন্ত্রের শক্তি বাড়িয়ে দেয়। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রকৌশল অগ্রগতি কিতাব আল-হিয়াল-এ দেখা যায়। এর কিছু উপাদান আধুনিক শিল্পে ব্যবহূত হওয়ার আগ পর্যন্ত পাঁচ শ থে হাজার বছর আর কোথাও দেখা যায়নি।